চিরকাল জান্নাতে এবং চিরকাল জাহান্নামে বলতে কী বুঝানো হয়েছে?

জিজ্ঞাসা১৫৪: মৃত্যুর পরের জীবনে মুমিনরা চিরকাল জান্নাতে এবং কাফেররা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে বলা হয়েছে। এই চিরকাল মানে কি চিরস্থায়িত্ব বোঝানো হয়েছে নাকি দীর্ঘস্থায়ী বোঝানো হয়েছে? দয়া করে একটু কুর’আন ও হাদিসে ব্যবহৃত আরবি শব্দ বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে বলবেন।—Sharmin Hasan

জবাব: কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে,এই চিরকাল মানে দীর্ঘকাল নয়; বরং চিরকাল মানে ‘চিরকাল’ই বোঝানো হয়েছে। যেমন সূরা হুদ-এ আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَأَمَّا الَّذِينَ شَقُوا فَفِي النَّارِ لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ وَشَهِيقٌ .خَالِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتْ السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ إِلاَّ مَا شَاءَ رَبُّكَ إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِمَا يُرِيدُ. وَأَمَّا الَّذِينَ سُعِدُوا فَفِي الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتْ السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ إِلاَّ مَا شَاءَ رَبُّكَ عَطَاءً غَيْرَ مَجْذُوذٍ

অতএব যারা হতভাগ্য তারা জাহান্নামে যাবে, সেখানে তারা আর্তনাদ ও চিৎকার করতে থাকবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে, যতদিন আসমান ও যমীন বর্তমান থাকবে। তবে তোমার প্রতিপালক অন্য কিছু ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা। নিশ্চয় তোমার পরওয়ারদেগার যা ইচ্ছা করতে পারেন। আর যারা সৌভাগ্যবান তারা জান্নাতের মাঝে, সেখানেই চিরদিন থাকবে, যতদিন আসমান ও যমীন বর্তমান থাকবে। তবে তোমার প্রভু অন্য কিছু ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা। এ দানের ধারাবাহিকতা কখনো ছিন্ন হওয়ার নয়। (সূরা হুদ ১০৬-০১৮)

ইমাম তাবারি রহ. এর তাফসীরে লিখেন-

يعني تعالى ذكره بقوله: (خالدين فيها)، لابثين فيها، ويعني بقوله: (ما دامت السماوات والأرض)، أبدًا

অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা  خالدين فيهاদ্বারা বুঝিয়েছেন অবস্থান করবে এবং ما دامت السماوات والأرضদ্বারা বুঝিয়েছেন চিরকাল অবস্থান করবে। (তাবারি ২৩৩)

والله اعلم بالصواب

��ন্তব্য

  1. আচ্ছা তাহলে কি যারা অমুসলিম
    তাদের অ কি আল্লাহ ইচ্ছা করলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিতে পারেন সুরা হুদ এর আলোকে।। কারন আল্লাহ এখানে বলেছেন যে ” তোমার প্রতিপালক অন্ন কিছু ইচ্ছা করলে তা ভিন্ন কথা”

    • আল্লাহ ইচ্ছা করলে সবই পারেন। তবে তিনি বহু জায়গায় জানিয়ে দিয়েছেন যে, পরকালে অমুসলিমদের সঙ্গে ক্ষমার আচরণ দেখনোর ইচ্ছা তাঁর নেই। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন,
      إِنَّ اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاء وَمَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا
      নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ করল। (সুরা নিসা ৪৮ )
      অন্যত্র বলেছেন,

      إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أُولَئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ

      আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম। (সুরা বাইয়্যেনাহ ৬)

      হাদিসে এসেছে,

      ثُمَّ أَمَرَ بِلَالًا فَنَادَى فِي النَّاسِ ، أَنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ

      অতপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বেলাল রাযি.-কে নির্দেশ দিলেন। তাই তিনি লোকদের মাঝে ঘোষণা দিলেন, জান্নাতে কেবল মুসলিম ব্যক্তিই প্রবেশ করবে। (বুখারী ২৮৯৭ মুসলিম ১৬৬)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − twelve =