তারাবিহ নামাজ কত রাকাত? এটা নফল নাকি সুন্নাত?

জিজ্ঞাসা–১৩৪৮: তারাবিহ নামাজ কত রাকাত? এটা নফল নাকি সুন্নাত?–তামিম হাসান।

জবাব: 

এক. প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি ভাই, মূলতঃ তারাবিহ ২০ রাকাত। এটা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। চার মাযহাবের ইমামগণও এ বিষয়ে একমত। সাহাবা-যুগ থেকে আজ পর্যন্ত হারামাইন শরীফাইনে এভাবেই তারাবিহ পড়া হয়েছে। বিশ রাকাতের কম কখনো পড়া হয় নি। বর্তমানে যারা তারাবিহর নামায আট রাকাত বলে দাবি করে তারা কিছু ‘মুনকার’ রেওয়ায়েত দ্বারা দলিল দিয়ে থাকে, কিংবা তাহাজ্জুদের হাদীসকে তারাবীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকে।

১. ইমাম বুখারীসহ সিহাহ সিত্তার সকল গ্রন্থকারের উস্তাদের ২৬ খন্ডে রচিত কিতাব ‘মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবাহ’( ২/১৬৪)-তে সহিহ সনদে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻭَﺍﻟْﻮِﺗْﺮَ  

রাসূল রমযান মাসে বিশ রাকাআত তারাবিহ ও বিতির আদায় করতেন।

হাদিসটি এই হাদিসগ্রন্থগুলোতেও বর্ণিত হয়েছে– সুনানুল কোবরা লিল-বায়হাকী: ২/৬৯৮, আল-মুনতাখিব: ৬৫৩, আল-মু’জামুল কাবীর: ১১/৩৯৩, আল-মু’জামুল আওসাত: ১/২৪৩।

২. ইয়াজিদ বিন রূমান বলেন,

كان الناس يقومون في زمان عمر بن الخطاب في رمضان بثلاث وعشرين ركعة

লোকেরা (সাহাবী ও তাবেয়িগণ) ওমর রাযি. এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবিহ এবং তিন রাকাত বিতির রমযান মাসে আদায় করতো। (মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার ১৪৪৩, মুয়াত্তা মালিক ৩৮০, সুনানে বায়হাকী কুবরা ৪৩৯৪)

৩. সায়েব বিন ইয়াজিদ বলেন,

كـانوا يقـومـون عهد عمر بن الخطاب رضى الله عنه فى شهر رمضان بعشرين ركعة وكانوا يقومون بالمأتين وكانو يتوكؤن على عصيتهم فى عهد عثمان من شدة القيام 

ওমর রাযি. এর শাসনামলে লোকেরা (সাহাবী ও তাবেয়িগণ) বিশ রাকাত তারাবিহ পড়তেন। আর উসমান রাযি. এর শাসনামলে লম্বা কেরাতের কারণে লাঠির উপর ভর দিতেন। (বায়হাকী-৪/২৯৬)

৪. আবু আব্দুর রহমান সুলামী বলেন

, عن على قال دعى القراء فى رمضان فامر منهم رجلا يصلى بالناس عشرين ركعة قالوكان على يوتر بهم

আলী রাযি. রমযান মাসে কারীদের ডাকতেন। তারপর তাদের মাঝে একজনকে বিশ রাকাত তারাবিহ পড়াতে হুকুম দিতেন। আর বিতিরের জামাত আলী রাযি. নিজেই পড়াতেন। (বায়হাকী-৪/৪৯৬)

প্রশ্নকারী দীনি ভাই, লক্ষণীয় বিষয় হল, ওমর রাযি. উসমান রাযি. ও আলী রাযি. এর শাসনামলে যে বিশ রাকাত তারাবিহ হত; সেখানে মুসল্লি কারা ছিলেন? নিশ্চয় মুহাজির, আনসার ও বদরী সাহাবাসহ বিপুল সংখ্যক সাহাবী এবং তাবিঈ তখন মুসল্লী ছিলেন। কেননা, দারুল খিলাফায় মসজিদে নববীতে বিপুল সংখ্যক সাহাবীর উপস্থিতিতে এটি হয়েছে। তখন কেউ কোনো দিন আপত্তি করেছেন বলে একটা দুর্বল বর্ণনাও কেউ দেখাতে পারবে না! উপরন্তু রাসুলুল্লাহ বলেছেন,

عليكم بسنتى وسنة الخلفـاءالمهـدين الراشـديـن عضوا عليها بالنواجذ

তোমরা আমার সুন্নতকে এবং সৎপথ প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতকে মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধর। তার উপর তোমরা অটুট থাক। (সুনানে আবু দাউদ ৪৬০৭, সুনানে তিরমিযি ২৬৭৬)

দুই. তারাবিহ সুন্নতে মুআক্কাদা। কেননা, রাসূলে করীম  তারাবিহ সম্পর্কে বলেছেন,

كتب الله عليكم صيامه وسننت لكم فيه قيامه

আল্লাহ তাআলা এই মাসের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন এবং এই মাসে রাত জেগে নামায পড়াকে সুন্নত করেছি। (নাসাঈ ২২১০)

এজন্য ইমাম নববী বলেন, صلاة التراويح سنة بإجماع العلماء আলেমগণের ইজমা অনুযায়ী তারাবিহর নামাজ পড়া সুন্নত। (আলমাজমূ ৪/৩১)

মনে রাখবেন, সুন্নতে মুআক্কাদা ওয়াজিবের মতই। অর্থাৎ ওয়াজিবের ব্যাপারে যেমন জবাবদিহী করতে হবে, তেমনি সুন্নতে মুআক্কাদার ক্ষেত্রে জবাবদিহী করতে হবে। তবে ওয়াজিব তরককারীর জন্য সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে, আর সুন্নতে মুআক্কাদা ছেড়ে দিলে কখনো মাফ পেয়েও যেতে পারে। তবে শাস্তিও পেতে পারে।

والله اعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − seven =