জিজ্ঞাসা–১৩১০: আসসালামু আলাইকুম। হুজুর, আমি মাসয়ালা পড়ে জানতে পারি যে ইঙ্গিতসূচক বাক্য যদি নিয়তের সাথে বলা হয় তাহলে নাকি তালাক হয়ে যায়। এখন আমার স্ত্রীর সাথে করা আগের একটি ঝগড়ার কথা মনে পড়েছে। সেখানে আমি স্ত্রীকে শুধু মাত্র ভয় দেখানোর জন্য বলেছিলাম যে, আম্মা বাড়িতে আসুক সব শেষ করে দিব। তোমাকে আর ভাল লাগে না। তোমার যোনিতে আমারটা আর লাগাব না (এই কথাটা গ্রাম্য খারাপ ভাষায় বলেছিলাম। অর্থাৎ তোমার সাথে সহবাস করব না। এই কথাগুলো ভবিষ্যতসূচক বাক্যে বলেছিলাম, ভয় দেখানোর জন্য। সব কিছুই। মনের ভিতর কিঞ্চিত নিয়তও ছিল না। এখন আমাদের সম্পর্কের কোন ক্ষতি হয়েছে কি?–নাম বলতে চাই না।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, প্রশ্নোক্ত সুরতে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস না করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করার মাধ্যমে একপ্রকার শপথ সংঘটিত হয়েছে, যাকে শরিয়তের দৃষ্টিতে ‘ঈলা’ বলা হয়। যার বিধান হল, যদি চার মাস পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য-সম্পর্ক স্থাপন করা না হয় তাহলে চার মাস পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক তালাক বায়েন পতিত হয়ে যায়। অর্থাৎ পুনঃর্বার বিয়ে ছাড়া স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া জায়েয হয় না। পক্ষান্তরে যদি চার মাসের মধ্যে স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য-সম্পর্ক স্থাপন করা হয় তাহলে তালাক হবে না, তবে স্বামীর ওপর কসমের কাফফারা আবশ্যক হয়।
এর দলিল হল, আল্লাহ তাআলা বলেন,
لِّلَّذِينَ يُؤْلُونَ مِن نِّسَآئِهِمْ تَرَبُّصُ أَرْبَعَةِ أَشْهُرٍۢ ۖ فَإِن فَآءُو فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
যারা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে ঈলা করে (অর্থাৎ তাদের কাছে না যাওয়ার শপথ করে) তাদের জন্য রয়েছে চার মাসের অবকাশ। সুতরাং যদি তারা (এর মধ্যে কসম ভেঙে) ফিরে আসে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা বাকারা ২২৬)
আর কসমের কাফফারা হল, দশ জন মিসকীনকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়ানো। অথবা প্রত্যেককে এক জোড়া কাপড় দেওয়া। আর তা সম্ভব না হলে এক নাগাড়ে তিন দিন রোযা রাখা।(বাদায়েউস সানায়ে ৩/৬৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৮৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৩)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ ذَلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ وَاحْفَظُواْ أَيْمَانَكُمْ
কাফফারা হল দশ জন মিসকিনকে মধ্যম মানের খাদ্যদান যা তোমরা তোমাদের স্ত্রী পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদেরকে বস্ত্রদান অথবা একজন ক্রীতদাস মুক্তকরণ। আর এগুলো করার যার সামর্থ্য নেই তার জন্য তিন দিন রোযা পালন। এগুলো হল তোমাদের শপথের কাফফারা যখন তোমরা শপথ কর। তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করবে। (সূরা মায়িদা ৮৯)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী