পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে-পরের সুন্নাতে মুআক্কাদা নামাজ কোনো কারণে ছেড়ে দেয়া যাবে কি?

জিজ্ঞাসা–৯৯৭: আস্ সালামু ওয়ালায়কুম। আলহামদুলিল্লাহ। আমি সব নামাজ আদায় করি সুন্নতসহ। অনেক আত্মীয় স্বজন সহ বড়রা আমাকে এই সুন্নত নামাজ পড়তে নিষেধ করছে। নবি কারিম (স:) এর উম্মত হয়ে আমি কি বড়দের কথা শুনব নাকি নামাজ পড়ব ? আমি নামাজটা পড়তে চাই।–Samiul Alim Siam

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

রাসূলুল্লাহ -পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাজের পূর্বে ও পরে বার রাকাত সুন্নত নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন, বিশেষ কোন কারণ ছাড়া তা ত্যাগ করতেন না। এই জন্য এই বার রাকাত সুন্নতকে সুন্নতে মুআক্কাদা বলা হয়। সুন্নতে মুআক্কাদার মর্যাদা প্রায় ওয়াজিবের মতো। যা ছাড়লে গুনাহ হয়। ইবন নুজাইম রহ. বলেন,

والذي يظهر من كلام أهل المذهب أن الإثم منوط بترك الواجب أو السنة المؤكدة على الصحيح ؛ لتصريحهم بأن من ترك سنن الصلوات الخمس قيل لا يأثم ، والصحيح أنه يأثم .. . . فالإثم لتارك السنة المؤكدة أخف من الإثم لتارك الواجب

মাযহাবের ইমামদের কথা থেকে স্পষ্ট হয় যে, ওয়াজিব অথবা সুন্নতে মুআক্কাদা ত্যাগ করলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী গুনাহ হয়। কেননা, তারা বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের (আগে-পরের) সুন্নতগুলো ছেড়ে দিবে, কেউ বলেন, গুনাহ হবে না। বিশদ্ধ কথা হল, গুনাহ হবে।’ তবে সুন্নতে মুআক্কাদা ত্যাগকারীর গুনাহ ওয়াজিব ত্যাগকারীর চাইতে কম হবে। (আল বাহ্রুররায়েক ১/৩১৯)

হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ: مَنْ ثَابَرَ عَلَى اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بَنَى اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الظُّهْرِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْفَجْرِ

আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি দিবা-রাত্র বার রাকাত (সুন্নাতে মুআক্কাদা) আদায়ে অভ্যস্ত হয়ে যায় আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে রাখেন। চার রাকাত জোহরের ফরয নামাযের পূর্বে এবং দু’রাকাত জোহরের ফরয নামাজের পরে, দু’রাকাত মাগরিবের ফরয নামাজের পরে, দু’রাকআত ইশার ফরয নামাজের পরে এবং দু’রাকআত ফজরের ফরয নামাজের পূর্বে। (সুনানে নাসায়ী ১৭৯৫)

সুতরাং আপনার বড়রা যদি আপনাকে উক্ত সুন্নাত পড়তে বাঁধা প্রদান করে সেক্ষেত্রে আপনি তাদের সাথে অসচারণ না করে স্পষ্টভাবে বলে দিন যে, আপনি তাদের এই অন্যায় হুকুম মানার ক্ষেত্রে অপারগ। পাশাপাশি  ধৈর্য্য ও বুদ্ধিমত্তার সাথে তাদেরকে সুন্নাতের দাওয়াত দেয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকুন এবং তাদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকুন।

রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ

অসৎকাজে আনুগত্য নয় ; আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে। (বুখারী ৭১৪৫  মুসলিম ১৮৪০)

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আপনাকে ইসলামের উপর অবিচল রাখেন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 − 6 =