জিজ্ঞাসা–১১৩৯: আসসালামু আলাইকুম । কোনো এক আত্মীয়ের সাথে কথা হলে সবসময় ফিতনা সৃষ্টি হয় । এক্ষেত্রে আমার পক্ষ থেকে কোনো ত্রুটি না থাকলেও অনেক ফিতনা সৃষ্টি হয়। যার ফলে পারিবারিক অশান্তি তৈরি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যোগাযোগ কমানোরও কোনো উপায় নেই। তাহলে আমি সম্পর্ক কিভাবে রাখব? আর এজন্যে সম্পর্ক ছিন্ন করার কোনো অনুমতি কি শরিয়ত দিয়েছে? না দিয়ে থাকলে এ অবস্থার সমাধান কিভাবে পেতে পারি? দয়া করে জানাবেন শায়েখ ।–Tahmid Akbar Omim
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, কোরআন-সুন্নাহর বহু বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। যেমন এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ
আত্নীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহীহ মুসলিম ৬২৯০)
সুতরাং আপনি প্রথমত হেকমত ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন যে, নিজেকে ফেতনা থাকে দূরে রেখে উক্ত আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখার। আর এটাই হল, সর্বোত্তম পন্থা। যদি এর কারণে আপনার কষ্ট হয় এবং উক্ত কষ্টের কারণে আপনি ধৈর্যধারণ করেন তাহলে মনে রাখবেন, আল্লাহ তাআলা বিনিময়ে আপনাকে এমনভাবে পুষিয়ে দিবেন, যার কল্পনাও আপনি করতে পারবেন না। হাদিস শরিফে এসেছে, এক সাহাবী এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ ! আমার আত্মীয়-স্বজন আছেন। আমি তাদের সাথে সদাচরণ করি; কিন্তু তারা আমাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমি তাদের উপকার করে থাকি; কিন্তু তারা আমার অপকার করে। আমি তাদের সহনশীলতা প্রদর্শন করে থাকি আর তারা আমার সঙ্গে মূৰ্খসুলভ আচরণ করে। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,
لئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ فَكَأَنَّمَا تُسِفُّهُمُ الْمَلَّ وَلاَ يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللَّهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ
তুমি যা বললে, তাহলে যদি প্রকৃত অবস্থা তাই হয় তুমি যেন তাদের উপর জ্বলন্ত অঙ্গার নিক্ষেপ করছ। আর সর্বদা তোমার সঙ্গে আল্লাহর তরফ থেকে তাদের বিপক্ষে একজন সাহায্যকারী (ফেরেশতা) থাকবে, যতক্ষণ তুমি এ অবস্থায় বহাল থাকবে। ((সহীহ মুসলিম ৬২৯৪)
দুই. যদি উক্ত উত্তম পন্থা গ্রহণ করতে না পারেন কিংবা এই আশংকা করেন যে, উক্ত পন্থা অবলম্বন করলে আপনি ফেতনায় জড়িয়ে পাড়বেন তাহলে চেষ্টা করবেন যে, কমপক্ষে সালাম দেয়া ও নেয়ার মাধ্যমে উক্ত আত্মীয়ের সঙ্গে নূন্যতম সম্পর্ক ধরে রাখার। হাফেজ ইবনু হাজার আসকালানি রহ. বলেন,
تزول الهجرة بمجرد السلام ورده
আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি কেবল সালাম দেয়া ও সালামের উত্তর দেয়া দ্বারা দূর হয়ে যায়। (ফাতহুল বারী ১০/৪৯৬)
তিন. এরপরেও যদি আপনার প্রবল আশংকা এই হয় যে, আপনি উক্ত আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে আপনার দীনের ক্ষতি হবে, আপনি গীবত মিথ্যাচার কিংবা অন্য গুনাহয় জড়িয়ে পড়তে পারেন তাহলে এমতাবস্থায় দীনের ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে উক্ত আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার অনুমতি আছে। যেমন ইবনু আব্দিল বার রহ. বলেন,
وأجمع العلماء على أنه لا يجوز للمسلم أن يهجر أخاه فوق ثلاث إلا أن يكون يخاف من مكالمته وصلته ما يفسد عليه دينه ، أو يولد به على نفسه مضرة في دينه أو دنياه ، فإن كان ذلك فقد رخص له في مجانبته وبعده ، ورب صرم [أي : مقاطعة وهجر] جميل خير من مخالطة مؤذية
আলেমগণ একমত হয়েছেন যে, কোনো মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখা জায়েয নেই। তবে যদি কথা বলা কিংবা সম্পর্ক রক্ষার কারণে নিজের দীনদারি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ভয় থাকে কিংবা দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষতির ভয় থাকে তাহলে সম্পর্ক ছিন্ন করার অনুমতি আছে। কেননা, অনেক সময় সম্পর্ক রক্ষার চাইতে দূরে থাকাটাই অধিক নিরাপদ হয়। (আততামহীদ ৬/১২৭)
চার. সর্বোপরি আপনি আপনার উক্ত আত্মীয়ের হেদায়েতের জন্য দোয়া করতে কখনও ভুলবেন না। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ دَعَا لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهِ : آمِينَ ، وَلَكَ بِمِثْلٍ
মুসলিম ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করলে দোয়াকারীর মাথার কাছে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতা থাকে। যখনই তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দোয়া করে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতা তার দোয়া শুনে আমীন বলতে থাকে এবং বলে, তুমি যে কল্যাণের জন্য দোয়া করলে আল্লাহ অনুরূপ কল্যাণ তোমাকেও দান করুন। (মুসলিম ২৭৩২)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী