জিজ্ঞাসা–১৪৪৩: আমি আগে পর্দা করতাম না, ফেসবুকে অনেক ছবি আপলোড করতাম, আমি পর্দার বিধান কঠোরভাবে অনুধাবন করার পর এখন আমি ভালোভাবে পর্দা করতে চাই এবং ফেসবুক থেকে আমার সকল ছবি হাইড করে দিয়েছি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমি যখন ফেসবুকে ছবি আপলোড করতাম অনেকেই হয়তো আমার ছবিগুলো সেইভ করে রেখেছে, হয়তো আমি জানিও না কতজনের কাছে ফেসবুকের মাধ্যমে আমার ছবি চলে গেছে, ওই ছবিগুলোর জন্য কি এখন আমার গুনাহ হবে, এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?–জান্নাতুল ফেরদৌস।
এক. প্রিয় দীনী বোন, ফেসবুকে আপনার প্রোফাইল থেকে এবং এছাড়াও আরো যেসব জায়গা থেকে সম্ভব–সে সকল জায়গা থেকে আপনার আগের বেপর্দা ছবি কেবল হাইড নয় বরং সম্পূর্ণ ডিলিট করে ফেলুন এবং পুনরায় একাজ করবেন না মর্মে আল্লাহ তাআলার কাছে ওয়াদাবদ্ধ হয়ে তাওবা করুন। এভাবে আপনি আপনার সাধ্যের আওতাধীন অংশ সম্পন্ন করতে পারতে পারলে, অবশিষ্টাংশ যা আপনার সাধ্যের বাইরে তার ব্যাপারে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিবেন। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
لاَ يُكَلِّفُ اللّهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا
আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না। (সুরা বাকারা ২৮৬)
দুই. একবার তাওবা করার পর হতাশ না হয়ে বরং তাওবা-ইস্তেগফার অব্যাহত রাখুন। কারণ, এটাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য যে, সে তার গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়, আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহর কাছে তাওবা করে। আল্লাহ মুমিনের এ গুণের কথা কুরআনে বর্ণনা করেছেন এভাবে-
وَالَّذِينَ إِذا فَعَلُوا فاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ اللَّهُ
‘এবং তারা সেই সকল লোক, যারা কখনও কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা (অন্য কোনওভাবে) নিজেদের প্রতি জুলুম করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে- আর আল্লাহ ছাড়া আর কেইবা আছে, যে গুনাহ ক্ষমা করতে পারে? ’ (সূরা আলে ইমরান : ১৩৬)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,ما أصر من استغفر অর্থাৎ যে বান্দা গুনাহ থেকে ইসতিগফার করতে থাকে সে গুনাহের উপর জমে আছে বলে গণ্য হবে না। (আবু দাউদ : ১৫১৪)
তিন. প্রিয় দীনী বোন, পরিশেষে উপহার হিসেবে আপনার জন্য একটি হাদীস পেশ করছি। আশা করি, চমৎকৃত হবেন এবং স্বস্তির স্নিগ্ধ পরশ অনুভব করবেন। হাদীসে কুদসীতে ইরশাদ হয়েছে-
قَالَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلَا أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ، وَلَا أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً.
আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বনী আদম! তুমি যত গুনাহই কর, যতক্ষণ আমাকে ডাকতে থাকবে এবং আমার কাছে (ক্ষমার) আশা রাখবে আমি তোমার পূর্বের সব (গুনাহ) মাফ করে দিব, কোনো পরোয়া করব না। হে বনী আদম! তোমার গুনাহ যদি (এত বেশি হয় যে তা) আকাশের মেঘমালা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অতপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি ক্ষমা করে দিব, কোনো পরোয়া করব না। হে বনী আদম! যদি তুমি শিরিক থেকে বেঁচে থাক, আর পৃথিবী-ভরা গুনাহও নিয়ে আস তাহলে আমি ঐ পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব। (জামে তিরমিযী : ৩৫৪০)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী