জিজ্ঞাসা–৩৯৭: একটি ব্যক্তিগত সমস্যার কথা লিখছি। বেশ কয়েক জায়গায় প্রশ্ন করে উত্তর পায় নি। খুব কষ্টে পড়েছি। ইসলামিক নারী (only for sisters) এই গ্রুপ থেকে আপনাদের খোঁজ পেয়েছি এবং আমাকে এখানে প্রশ্নটি করতে বলা হয়েছে। ইসলামের আলোকে উত্তর দিলে আমি খুবই উপকৃত হবো। আমি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলাম। অনেক দিন অসুস্থ ছিলাম। তাই বিয়ে করার কথা ভাবতাম না। কারণ সত্যি কথাটা না বলে কোন ছেলেকে বিয়ে করা সম্ভব নয়, তাহলে তাকে ঠকানো হয়। আর সত্যি কথাটা বললে কোন ছেলে আমাকে বিয়ে করবে না। আমাদের দেশের রীতি অনুযায়ী মানসিক অসুস্থতাকে ভালো চোখে দেখা হয় না। তাই বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। শুধু শধু নিজের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা জনে জনে বলে বেড়ালে মানুষের করুণার পাত্র হতে হয়। একটা সময় একটি ছেলে আমাকে পছন্দ করে এবং বার বার সে কথা বলতে থাকে। আমি তাকে সব সত্যি কথা বলে দেই, সে সব জেনেশুনে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয় এবং বার বার কথা দিতে থাকে আমাকে বিয়ে করবে বলে। তার সাথে ফেসবুকে কথা হতো এবং বিষয়টি পরিবারের মানুষরাও জানতো। কিন্তু সে তার ওয়াদা ভঙ্গ করে এবং অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে। আমি খুব কষ্টে পড়ে গেছি, কারণ তিন বছরে তাকে মনে মনে খুব ভালো লেগে যায় এবং তিন বছর ধরে একটু একটু করে মনকে বিয়ের জন্য প্রস্তুুত করি। এখন অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য জোর করে নিজের মনকে রাজি করাতে পারছি না। জোর করে বিয়ে করলে স্বামীর চাহিদা পূরণ করতে পারবো না (মানসিক সমস্যা থাকায়)। আমার প্রশ্ন হচ্ছে তার প্রথম বউয়ের কোন ক্ষতি না চেয়ে তাকেই বিয়ে করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা যাবে কি? বা বিয়ে না করে এমনি ইসলামের পথে চললে পাপ হবে কি? অনেকে বলছে বিয়ে না করে আমি ইসলামিক নির্দেশ অমান্য করছি, এতে পাপ হচ্ছে। কেউ এখানে আমার মানসিক সমস্যার কথাটি বিবেচনা করছে না। ভাবছে, ইচ্ছে করেই এমন করছি। আমার সকল অপারগতা সম্পর্কে আল্লাহ অবগত আছেন, তাও কি আমার পাপ বা অন্যায় হচ্ছে? বয়স বেড়ে যাচ্ছে। আমাকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিলে খুবই উপকৃত হবো।–রেজওয়ানা আমিন (ঊর্মি)।
জবাব:
এক:
প্রিয় বোন, আপনি আমাদের কাছে স্পষ্টবাদী হয়েছেন- এজন্য আমরা আপনার প্রতি ধন্যবাদ ও সমবেনা নিবেদন করছি। আপনার কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে, আপনি এখন অনেকটা সুস্থ। আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আপনাকে পুরোপুরি সুস্থ করে দেন এবং আপনার জন্য একজন সৎ পাত্র সহজে মিলিয়ে দেন। যাতে করে আপনি তার সাথে নেক সংসার গড়ে তুলতে পারেন। আল্লাহ যেন আপনার উপর তার এ নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দেন। আপনার তাকওয়া ও লজ্জাশীলতা আরও বাড়িয়ে দেন। আমীন।
আর আপনার প্রতি আমাদের পরামর্শ হল–
১. আপনি যদি নিজের উপর হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার আশংকা করেন তাহলে আপনার উচিত বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়া। কেননা যে ব্যক্তির অবস্থা এমন তার বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত ভুল। হ্যাঁ, মানুষ বিয়ে না করেও মুত্তাকী হতে পারে; তবে এটি খুবই বিরল। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে যারা বিয়ে করে না তারা দুই শ্রেণীর মানুষ হতে পারে: অক্ষম কিংবা ব্যভিচারী। উমর বিন খাত্তাব রাযি. জনৈক অবিবাহিতকে লক্ষ্য করে এমনটিই বলেছেন। তিনি বলেন, ما يمنعك إلا عجز أو فجور তোমাকে বিয়ে করতে বাধা দিচ্ছে- হয়তো অক্ষমতা; নয়তো পাপাচারিতা।
কোরআন মজিদেও বিয়েকে পোশাকতুল্য বলা হয়েছে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, এ কথা বুঝানো যে, সামর্থ্য থাকার পরও কোনো নারী-পুরুষের জন্য অবিবাহিত থাকা দোষণীয়। (হুকুকুল জাওযাইন ১৬৬)
২. যতদিন আপনি বিয়ে করতে পারছেন না ততদিন সবর করুন। আপনি যে কঠিন ও কষ্টকর অবস্থার মধ্যে আছেন যদি এতে সবর করেন তাহলে আপনি সওয়াব পাবেন। মুমিনেরা তো মুসিবতের সময় ধৈর্য ধারণ করে থাকে এবং আনন্দের সময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে থাকে। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এটা করে না। এই সবর আপনার সকল কষ্ট ঘুচে দিবে, ইনশাআল্লাহ। দেখুন, আল্লাহ দুই বার বলেছেন, فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْراً . إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْراً কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে, নিশ্চয় কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে। (সূরা ইনশিরাহ ৫-৬)
দুই:
প্রিয় বোন, আপনি কি ভাবছেন, স্বামীর চাহিদা পূরণ করতে পারবেন না? আপনি এটা কী করে ভাবলেন? যদি আপনি এমনটি ভেবে থাকেন তাহলে ভুলের মধ্যে আছেন। বরং আল্লাহ আপনাকে নারী-দেহ দিয়ে তৈরি করেছেন মানে তিনি আপনার মাঝে মৌলিকভাবে স্বামীর চাহিদা পূরণ করার উপাদান দিয়ে রেখেছেন। সুতরাং এমনটি ভাবা মানে আপনি নিজের উপর জুলুম করা। মনে রাখবেন, এই অহেতুক ভাবনার কারণে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে না চাওয়া আপনার জন্য চরম ক্ষতিকর। আমরা আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, বিয়ে আপনাকে প্রফুল্লতা দিবে। আপনার মনের এই দুর্বলতা তখন আর থাকবে না। তখন আপনি আপনার এই অহেতুক ভাবনাকে তিরস্কার করবেন। নিজেকে নতুনরুপে আবিস্কার করে বিমোহিত হবেন, ইনশাআল্লাহ।
তিন:
আমাদের উক্ত পরামর্শের পর আমরা যেন আপনাকে বলতে শুনছি, “আমি নিঃসঙ্গ জীবন চাই না; আমি বিয়ে করব”। হ্যাঁ, আমরাও আপনার জন্য এটাই ভাল মনে করি যে, আপনি কোন চরিত্রবান ও দ্বীনদার পাত্র খুঁজে বিয়ে করুন। আমরা বিশ্বাস করি, আপনি যদি আপনার রবের সাহায্য চান তাহলে তিনি আপনার জন্য চরিত্রবান ও দ্বীনদার পাত্র মিলিয়ে দিবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনার প্রতি আমাদের উপদেশ হল, আপনি যে ছেলেটির কথা ভাবছেন তা আপনার আরেকটি ভুল। যেমন ভুল ছিল তার সঙ্গে অবৈধ প্রেমে জড়ানো এবং তার মিথ্যা প্রলোভনের মায়াজালে আপনার আবদ্ধ হওয়া। আমরা আশা করব, আপনি এই ভুলটি পুনরায় করবেন না। কেননা, হতে পারে তার একাধিক বিয়ে করার ইচ্ছা নাই কিন্তু সে আপনার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে আপনাকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে সরিয়ে আনবে। আল্লাহ তাআলা তার সাথে আপনার বিয়ে নির্ধারণ করে রাখেন নি; তাহলে তার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকা ঠিক হবে না। কারণ এ ধরণের উন্মুখতার ভয়াবহতা আপনার অজানা নয়। এটি আপনার অন্তরে নানা রোগ সৃষ্টি করবে। গুনাহর দিকে ধাবিত করবে। সুতরাং তার চিন্তা না করে বরং আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকুন, যেন তিনি আপনার জন্য ভাল পাত্র মিলিয়ে দেন। কোন অবস্থাতেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবেন না। ভরসা রাখুন, আল্লাহ আপনার জন্য এর চেয়ে ভাল কোন পাত্রের ব্যবস্থা করে দিবেন। অন্য প্রস্তাবকারী ছেলের মধ্যে চরিত্র ও দ্বীনদারি পেলে তার প্রস্তাব সহজেই গ্রহণ করে নিবেন। অতিরিক্ত বাছাবাছিতে না যাইয়াটাই হবে আপনার জন্য ও আপনার অভিবাবকের জন্য অধিক কল্যাণকর।
আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন আপনার জন্য এমন কাউকে পাওয়া সহজ করে দেন। আমীন।
আপনি জিজ্ঞাসা নং–৩৩২ প্রশ্নোত্তরটি পড়তে পারেন। সেখানে দ্রুত বিয়ে হওয়ার কিছু আমল তুলে ধরা হয়েছে।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন– ☞ ☞ অভিবাবককে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করা যাবে কিনা? ☞ ছেলে-মেয়ে বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) কখন হয়? প্রেম ও বিয়ে সম্পর্কে একটি প্রশ্নের উত্তর ☞ ☞ কাজীর ন্যূনতম যোগ্যতা কতটুকু থাকতে হবে? ☞