ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে…এই আয়াতের ব্যাখ্যা

জিজ্ঞাসা–১০১৫: আসসালামুয়ালাইকুম, সূরা নূর এর ৩নং আয়াতের ব্যাখ্যা কি? যদি জানাতেন, উপকৃত হতাম।–জাবের আহমদ।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

সূরা নূরের ০৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

الزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَا إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ ۚ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ

‘ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্যে হারাম করা হয়েছে।’
 
আয়াতটির তাফসির সম্পর্কে তাফসীরবিদদের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে।
 
কেউ কেউ বলেন, অধিক সময় এ রকমই ঘটে থাকে বলে এ রকম বলা হয়েছে।

أى : أنه جرت العادة أن الشخص الزانى لا يتزوج إلا زانية مثله أو مشركة وكذلك المرأة الزانية لا تميل بطبعها إلا إلى الزواج من رجل زان مثلها أو من رجل مشرك وذلك لأن المؤمن بطبعه ينفر من الزواج بالمرأة الزانية ، وكذلك المرأة المؤمنة تأنف من الزواج بالرجل الزانى …وصدق رسول الله صلى الله عليه وسلم حيث يقول : الأرواح جنود مجندة ، فما تعارف منها ائتلف ، وما تناكر منها اختلف

আয়াতের অর্থ হল, সাধারণতঃ ব্যভিচারী ব্যক্তি বিবাহের জন্য নিজের মত ব্যভিচারিণীর দিকে অথবা অমুসলিম নারীর দিকেই আকৃষ্ট হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে ব্যভিচারিণী নারী বিবাহের জন্য নিজের মত ব্যভিচারী পুরুষের দিকে অথবা অমুসলিম নারীর দিকেই আকৃষ্ট হয়ে থাকে। কেননা, মুমিন পুরুষ স্বভাবগতভাবে ব্যভিচারিণীকে বিয়ে করাকে ঘেন্না করে। অনুরূপভাবে মুমিন নারী স্বভাবগতভাবে ব্যভিচারী পুরুষকে বিয়ে করাকে হেয়জ্ঞান করে…। রাসূলুল্লাহ   যথার্থ বলেছেন, ‘আত্মাসমূহ সম্মিলিত সেনাবাহিনী (তুল্য) (স্বভাবজাত সাদৃশ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত)। এদের মধ্যে যারা পরস্পরের পরিচিত ছিল তারা (পৃথবীতে) পরস্পরে সখ্যতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। যারা (সেখানে) অপরিচিত ছিল তারা (এখানেও) মতভেদে লিপ্ত হয়।’ [ আল-অয়াসীত ফী তাফসিরিল কুরআনিল কারীম ৪৩১]
 
কোন কোন মুফাস্‌সির এ হুকুমকে সুনির্দিষ্ট ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত মনে করেন। [দেখুন: ইবন কাসীর, কুরতুবী, বাগভী, ফাতহুল কাদীর] আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযি.  বলেন, সে যুগে এক মহিলার নাম ছিল উম্মে মাহযুল। সে যিনা করত। (বেশ্যা ছিল)। রাসূলুল্লাহ -এর এক সাহাবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন। [মুসনাদে আহমাদ ২/১৫৯, ২/২২৫, নাসায়ী, কিতাবুত্-তাফসীর, হাদীস নং ৩৭৯, মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ২/১৯৩-১৯৪, বায়হাকী ৭/১৫৩] অনুরূপ অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, সে যুগে ‘আনাক’ নাম্নী এক বেশ্যা ছিল, মারসাদ নামীয় এক সাহাবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে এ আয়াত নাযিল হয়। [তিরমিযীঃ ৩১৭৭, আবু দাউদঃ ২০৫১, মুস্তাদরাকে হাকোমঃ ২/১৬৬]
 
কেউ কেউ বলেন, এখানে نِكاح বলতে বিবাহ উদ্দেশ্য নয়। বরং তা মিলন বা সঙ্গম (মূল) অর্থে ব্যবহার হয়েছে। যেমন তাফসিরে ইবনু কাসীরে (৬/৯)-এসেছে,
عن ابن عباس رضي الله عنهما : ليس هذا بالنكاح ، إنما هو الجماع ، لا يزني بها إلا زان أو مشرك  . وقد روي عن مجاهد ، وعكرمة ، وسعيد بن جبير ، وعروة بن الزبير ، والضحاك ، ومكحول ، ومقاتل بن حيان ، وغير واحد ، نحو ذلك
‘ইবনু আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, এখানে نِكاح বলতে বিবাহ উদ্দেশ্য নয়। বরং তা মিলন বা সঙ্গম উদ্দেশ্য। অর্থাৎ, ব্যভিচারী মহিলার সঙ্গে ব্যভিচারী পুরুষ কিংবা বেঈমান পুরুষ ছাড়া অন্য কেউ সঙ্গমে লিপ্ত হতে পারে না। মুজাহিদ, ইকরামা…প্রমুখ থেকে অনুরূপ ব্যখ্যা বর্ণিত রয়েছে।’
উদ্দেশ্য হল, ব্যভিচার ও যিনার নিকৃষ্টতা ও জঘন্যতা বর্ণনা করা। মুমিনদের জন্য এ রকম করা হারাম। অর্থাৎ, ব্যভিচার হারাম। এখানে ব্যভিচারীর সাথে মুশরিক নারী-পুরুষের আলোচনা এই জন্য করা হয়েছে যে, শিরকের সাথে ব্যভিচারের বেশ সামঞ্জস্য আছে। একজন মুশরিক যেরূপ আল্লাহকে ছেড়ে দিয়ে অন্যের নিকট মাথা নত করে, অনুরূপ একজন ব্যভিচারী পুরুষ নিজের স্ত্রীকে বাদ দিয়ে বা একজন ব্যভিচারিণী নিজের স্বামীকে ছেড়ে অন্যের সাথে যৌনমিলন করে নিজের মুখে কালিমা লেপন করে। এইভাবে মুশরিক ও ব্যভিচারীর মাঝে এক ধরনের নৈতিক সামঞ্জস্য পাওয়া যায়।
 
কোন কোন তাফসীরকারক আয়াতটিকে মনসূখ তথা রহিত বলেন। যেমন তাফসিরে বাগভী-তে এসেছে,
قال سعيد بن المسيب وجماعة : إن حكم الآية منسوخ … فنسخها قوله تعالى :  وأنكحوا الأيامى منكم
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব রহ. এবং একদল বলেছেন, আয়াতটির বিধান ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও’-এই আয়াতের মাধ্যমে রহিত হয়ে গিয়েছে।
 
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 3 =