জিজ্ঞাসা–১৪৮: মনের ভিতরের ভয় কিভাবে দূর করা যায়?— Md Mostafizur Rahman: [email protected]
জবাব: প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, মনের ভিতরের ভয় সৃষ্টির কিছু কারণ থাকে। প্রতিকার বলার আগে কারণগুলো জানা গেলে প্রতিরোধ করার উপায়ও বলে দেয়া সহজ হত।
তবে মনের ভয়ের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের দুর্বলতা, তাঁর প্রতি আনুগত্য ও তাওয়াক্কুল-ভরসা কমে যাওয়া। কারণ আল্লাহ বলেছেন-أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ ‘‘মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে , না তারা চিন্তান্বিত হবে।” (সূরা ইউনুস ৬২ ) সুতরাং আপনার প্রথম কাজ হল, আল্লাহর উপর ভরসা করা। আল্লাহ বলেছেন–وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ‘‘আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।” (সূরা তালাক ৩)
এছাড়াও আপনাকে সহজ কিছু দোয়া বলে দিচ্ছি। এগুলো বেশিহারে বিশেষ করে ভয়ের মুহূর্তে এবং যথাসময়ে পড়বেন। এতে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হবে, তাওয়াক্কুল-ভরসা বাড়বে এবং ধীরে ধীরে মনের ভয়ও দূর হবে। ইনশা-আল্লাহ।
১. لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ
অর্থাৎ ‘‘মহান ও মহা-ধৈর্যশীল আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। মহান আরশের রব ‘আল্লাহ’ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আসমানসূমহ ও জমিনের রব এবং মহান আরশের রব ‘আল্লাহ’ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই।”
ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপদাপদকালে উক্ত দোয়া বলতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৪৬)
সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন, এটি একটি মহান হাদিস। এ হাদিসটিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। বিপদাপদের ভয় ও বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে এ দোয়াটি বার বার আওড়ানো উচিত। তাবারী রহ. বলেন, সলফে সালেহীনগণ এ দোয়াটি দিয়ে দোয়া করতেন। তাঁরা এটিকে বিপদাপদ মুক্তির দোয়া আখ্যায়িত করতেন।
২. بِسْمِ اللّهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيمُ অর্থাৎ ‘‘আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমীনের কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।”
উসমান ইবনে আফ্ফান রাযি. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কোন বান্দা প্রতিদিন সকালে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় তিনবার করে এই দোয়াটি পাঠ করলে কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। (তিরমিযী,হাদীস নং ৩৩৮৮)
৩.اَللّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ অর্থাৎ ‘‘ হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখী করছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ।”
আবু মুসা আল-আশআরী রাযি.থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করতেন তখন দোয়া টি বলতেন (আবূদাউদ,হাদীস নং ১৫৩৭)
৪. لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ অর্থাৎ ‘‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তার কোন শরীক নাই, সার্বভৌমত্ব তারই, সব প্রশংসা তারই জন্য, তিনিই জীবন ও মৃত্যু দান করেন আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান ।”
আবু যার রাযি. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজের পর দুই পা ভাঁজ অবস্থায় কারো সাথে কথা বলার পূর্বে দশ বার দোয়াটি বলে,তার আমলনামায় দশটি নেকী লেখা হয়, দশটি গুনাহ বিলুপ্ত করা হয় এবং দশগুণ মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। সে ঐ দিন সব রকমের বিপদ থেকে মুক্ত থাকবে, শয়তানের ধোঁকা থেকে তাকে পাহারা দেয়া হবে এবং ঐ দিন শিরক ছাড়া অন্য কোন গুনাহ তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারবে না।(তিরমিযী,হাদীস নং ৩৪৭৪)
পরিশেষে দোয়া করছি- আল্লাহ আপনাকে তাঁর সন্তোষজনক আমল করার তাওফিক দিন এবং আপনার অন্তর থেকে ভয় ও পেরেশানি দূর করে দিন। আমীন।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী