জিজ্ঞাসা–৬৬১: আমি মেয়ে হয়ে মেয়েদের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করি, এক সহপাঠীকে ভালোবেসে ফেলেছি, অনেক মানসিক ডিপ্রেশনে আছি, অতিরিক্ত আবেগজনিত সমস্যায় ভুগছি,কিছু করতে পারছি না। প্লিজ পরামর্শ দেন।–ইচ্ছাকৃতভাবে নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হয় নি।
জবাব: মানুষ সৃষ্টিগতভাবে বিপরীতলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। কিন্তু সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া; এটি অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যেও বিদ্যমান নেই। তাই এটি মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতির বিপরীতে এবং পশুর চেয়ে নিম্ন স্তরে।
আর আপনার রোগের চিকিৎসা নিম্নবর্ণিতভাবে হতে পারে–
এক. নিজের মধ্যে প্রচুর লজ্জাবোধ জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুন। কেননা, এ ক্ষেত্রে লজ্জাবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এটি ঈমানেরও অঙ্গ বটে। নিম্নোক্ত কয়েকটি কাজ করলে আশা করি, ধীরে ধীরে আপনার মাঝে লজ্জাবোধ তৈরি হবে–
ক. অধিকহারে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জীবনী পড়ুন।
খ. সাহাবায়ে কেরাম বিশেষত নারী সাহাবীদের জীবনী পড়ুন।
গ. লজ্জাশীলতার লাভালাভ ও লজ্জাহীনতার কুফল সম্পর্কে মাঝে মাঝে চিন্তা করুন।
ঘ. লজ্জাবতীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুন এবং নির্লজ্জদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন
ঙ. এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকুন যা বললে ও করলে লজ্জাবোধ শীথিল হয়ে যায়।
চ. বার বার লজ্জাশীলতার কসরত করলে এক সময় লজ্জাশীলতা আপনার মাঝে অবশ্যই চলে আসবে।
দেখুন, লজ্জা তো থাকবে নারীপুরুষ সকলের মাঝে। কিন্তু নারীর মাঝে এটা থাকতে হয় আরো বেশি পরিমাণে। এজন্যই তো বলা হয়, লজ্জা নারীর ভূষণ। যার কারণে এক লজ্জাবতী নারীর প্রশংসা আল্লাহ কোরআন মজিদে করেছেন। পক্ষান্তরে আল্লাহ পুরুষদের জন্য এরকম স্বতন্ত্র প্রশংসা করেন নি। হযরত শোয়াইব আ. এর দুই মেয়ে ছিল। তাদের একজনকে তিনি মুসা আ. এর নিকট কোনো এক কাজে পাঠিয়েছিলেন। তখন আসা-যাওয়ার মধ্যে তার লজ্জা এতটাই ছিল যে, আল্লাহ প্রশংসা করে বলেন,
فَجَاءَتْهُ إِحْدَاهُمَا تَمْشِي عَلَى اسْتِحْيَاءٍ قَالَتْ إِنَّ أَبِي يَدْعُوكَ
বালিকাদ্বয়ের একজন লজ্জাজড়িত পা ফেলে ফেলে তার কাছে আগমন করল। বলল, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন। (সূরা কাসাস ২৫)
মুফাসসিরে কেরাম লিখেছেন, যে নারী আপাদমস্তক লজ্জাবতী হবে তার জন্যও এ প্রশংসা প্রযোজ্য হবে। একটু ভাবুন তো, আপনার প্রশংসা যদি আরশ থেকে হয়, তখন না জানি আল্লাহ আপনার মাকাম কোথায় রাখবেন!
দুই. সাহসিকতার সঙ্গে মনের বিরোধিতা করুন। মনে রাখবেন, মনের আবেগ পূরণ করার পর যে কষ্ট শাস্তি আফসোস ভয় লাঞ্ছনা ও অস্থিরতা পেয়ে বসবে তা থেকে ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে মনের বিরোধিতা করা অনেক সহজ ও নিরাপদ। আল্লাহ তো বলেছেন,
আল্লাহর এক আরেফ বলেন,
فَاستَـحْيِ مِن نَظرِ الإِلَهِ وَقُل لَـهَا — إِنَّ الَّذِي خَلَقَ الظَّلَامَ يَـرَانِـي
লজ্জা কর রবের দৃষ্টিকে। নফসকে বল, যিনি অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন, তিনি আমাকে দেখেন।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الصِّحَّةَ وَالْعِفَّةَ وَالأَمَانَةَ وَحُسْنَ الْخُلُقِ وَالرِّضَا بِالْقَدَرِ
হে আল্লাহ! আপনার কাছে সুস্থতা, গুনাহমুক্ত জীবন, আমানতদারিতা, উত্তম চরিত্র ও তাকদিরের উপর সন্তুষ্টি প্রার্থনা করছি। (বাহ্রুল ফাওয়াইদ ১৫)
اللهُمَّ اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا تُحُولُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيكَ ، وَمَنْ طَاعَتِكَ مَا تُبَلِّغُنَا بِهِ جَنَّتَكَ
হে আল্লাহ! আপনার প্রতি এমন ভীতি আমাদেরকে দান করুন, যা আমাদের মাঝে এবং আমাদের গুনাহর মাঝে প্রতিবন্ধক হবে এবং এমন আনুগত্য দান করুন, যা আমাদেরকে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছাবে। (তিরমিযী ৩৫০২)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী