যে ব্যক্তি ইসলামের পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চায়; তার প্রতি পরামর্শ

জিজ্ঞাসা–১৩০৩: শাইখ, আমি ইসলামী পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা শিখতে চাই, যাতে আমি তা মানতে পারি। আমার কোন বইগুলো পড়া উচিত বা কি করা উচিত? এবং আমি কিছু জীবনী পড়তে চাই যাতে আমি অনুপ্রাণিত হতে পারি। দয়া করে উত্তরটা দিবেন। আমার জীবন খুব অগোছালোভাবে অতিবাহিত হচ্ছে এবং আমি খুব হতাশা এবং দুশ্চিন্তায় ভুগছি এবং মাঝে মধ্যে পাগলপ্রায় হয়ে যাই। দোয়া চাই।–নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

জবাব: 

এক. প্রশ্নকারী দীনি ভাই, আপনি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। কেননা, একটা পর্যায় পর্যন্ত ইসলামি বিধি-বিধান সম্পর্কে জানা সকল মুসলিমের উপর ফরয। (ইবন মাজাহ ২২৪)

আর আপনার প্রতি আমাদের পরামর্শ হল, আপনি আপনার অধ্যয়নকে দুই স্তরে ভাগ করে নিতে পারেন। প্রথম স্তরে  থাকবে এমন কিছু কিতাব (বই) যেগুলোর সাহায্যে একজন মুসলিম ‘মুসলিম’ হিসাবে জীবন যাপন করার জন্য যে পরিমাণ ইলম প্রয়োজন; সে পরিমাণ ইলম ‘ইনশা-আল্লাহ’ শেখা হয়ে যাবে। আর দ্বিতীয় স্তরে থাকবে এমন কিছু কিতাব যেগুলোর সাহায্যে একজন মুসলিম ইসলাম সম্পর্কে এই পরিমাণ জানার সুযোগ হবে যে, ইসলামের নামে সমাজে যেসব ভ্রষ্টাচার ও ভ্রষ্ট মতবাদ আছে; সেগুলো থেকে ‘ইনশা-আল্লাহ’ বাঁচতে সক্ষম হবে।

প্রথম স্তরে নিমোক্ত কিতাবগুলো পড়তে পারেন–

১. হায়াতুল মুসলিমীন, হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ.।

২. ফুরুউল ঈমান, হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ.।

৩. তালীমুদ্দীন, হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ.।

৪. বেহেশতী জেওর, অনুবাদ : মাওলানা আহমদ মায়মূন।

৫. ফাতাওয়া ও মাসাইল, ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

৬. সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া, মুফতী শফী রহ.।

৭. উসওয়ায়ে রাসূলে আকরাম, ড. আবদুল হাই আরেফী।

৮. ফয়যুল কালাম, মুফতী ফয়জুল্লাহ রহ.।

তারপর দ্বিতীয় স্তরে নিমোক্ত কিতাবগুলো পড়তে পারেন–

১. তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী, অনুবাদ : মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম।

২. তাফসীরে উছমানী, মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানী। (৪ খণ্ডে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত)

৩. মাআরিফুল কুরআন, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. অনুবাদ : মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ. (আট খণ্ডে)

৫. দলীলসহ নামাযের মাসায়েল, মাওলানা আবদুল মতীন।

৬. ইসলামী আকীদা, মাওলানা হেমায়েতুদ্দীন।

৭. সীরাতে মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ইদরীস কান্ধলভী রহ.।

৮.হায়াতুসসাহাবাহ, ইউসুফ কান্ধলভী রহ.।

৯. রিয়াযুয সালেহীন, ইমাম নববী রহ.।

১০. ইসলাহী খুতুবাত, মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী, অনুবাদ : মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী।

দুই. প্রশ্নকারী দীনি ভাই, যদি উক্ত সিলেবাস সম্পন্ন করতে পারেন তাহলে ‘ইনশা-আল্লাহ’ ধীরে ধীরে আপনার মাঝে একটা রুচি তৈরি হবে। যা থেকে আপনি নিজেই ঠিক করতে পারবেন যে, এরপর আপনি কোন কিতাবটি পড়বেন। হ্যাঁ, পাশাপাশি একজন হক্কানী দক্ষ আলেমের পরামর্শও আপনার পথকে আরও সহজ করে দিবে।
তবুও আপনার সুবিধার্থে কিছু বিশ্বখ্যাত মুত্তাকী আলেমের নাম বলে দিচ্ছি, যারা ইসলামি বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিভিন্ন কিতাব লিখেছেন এবং আমাদের দেশে পাওয়াও যায়। তাঁদের কিতাবগুলোও আপনার অধ্যয়নের তালিকায় রাখলে বেশ উপকৃত হবেন এবং ফেতনা থেকে নিরাপদ থাবেন, ইনশা আল্লাহ।
১. হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ., ২. মাওলানা মুহাম্মাদ মনযুর নোমানী রহ., ৩. আবুল হাসান আলী নদবী রহ., ৪. মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী, ৫. মাওলানা যুলফিকার আহমদ নকশবন্দি, ৬. শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ, ৭. মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক, ৯. মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ ১০. শাইখ মুহাম্মদ আল আরিফি ১১. ড. আয়েয আল কারনী।
আর অন্তত একটি মাসিক ইসলামি পত্রিকার নিয়মিত গ্রাহক হবেন, এটাও আপনার জন্য বেশ উপকারী হবে বলে আমরা মনে করি। ওই পত্রিকাটি হতে পারে ‘মাসিক আলকাউসার’।
والله اعلم بالصواب