জিজ্ঞাসা–২৫৯: শনির দশা থেকে মুক্তির উপায় বিষয়ে ইসলাম কী বলে? — রুবেল হোসেন : [email protected]
জবাব:
এক– প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, মুলতঃ ‘শনির দশা’ শরীয়ত গর্হিত একটা বিশ্বাস থেকে শব্দটির উৎপত্তি। জ্যোতিষী বা নক্ষত্রপূজারীরা একেক নক্ষত্রকে একেক বিষয় শক্তিধর মনে করে। এর মধ্যে কারো ক্ষতি সাধনের জন্য শনিগ্রহকে শক্তিধর মনে করে থাকে । সে হিসেবেই খারাপ অবস্থা বা ক্ষতিকর পরিস্থিতির ক্ষেত্রে তারা বলে থাকে, ‘তোমাকে শনির দশায় পেয়েছে’। একজন মুসলিম হিসেবে এ কথাটি আমাদের মুখে নেওয়াটাও অন্যায়। এ ভুল কথাটি পরিহার করা জরুরি। বস্তুতঃ শনি সৌরজগতের একটি গ্রহের নাম, যা আল্লাহ তাআলার হুকুমে চলে। কারো কোন ক্ষতি করার মত শক্তি এর নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأرْضَ بِالْحَقِّ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لأجَلٍ مُسَمًّى أَلا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ
তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রি দিয়ে দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং দিন দিয়ে রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন। তিনি নিয়মাধীন করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে। প্রত্যেকেই নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলতে থাকবে। জেনে রাখ তিনি পরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল। (সুরা যুমার ৫)
দুই– প্রকৃতপক্ষে মানুষের ভাগ্যের বিধাতা কোন গ্রহ-নক্ষত্র নয়; আল্লাহই হচ্ছেন ভাগ্যের বিধাতা। আল্লাহ বলেন, قُلْ لَنْ يُصِيْبَنَا إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا– ‘তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক।’ (তওবা ৫১)
সুতরাং যিনি ভাগ্যের বিধাতা, তিনিই পারেন ভাগ্যের পরিবর্তন করতে। আর তিনি তা পরিবর্তন করেন বান্দার আমলের কারণে। যেমন নেক আমল বা সৎকর্ম, পিতামাতার ও গুরুজনের দোয়া, সদকা বা দান খয়রাত ইত্যাদি দীর্ঘায়ূ নেক হায়াত, সুখী সুন্দর নিরাপদ ও আনন্দময় জীবন লাভের কারণ। অনুরূপভাবে গুনাহ বা পাপকাজ ও অন্যায় অপরাধ-অপকর্ম দ্বারা আয়ূ কমে, দূর্ভাগ্য আসে ও সঙ্কটে পতিত হতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِير
তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (শুরা ৩০)
তিন– অথচ কিছু মানুষ পর্যাপ্ত ধর্মীয় জ্ঞান না থাকায় ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নাজায়েজ ও অবৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বন করে থাকে। যেমন- তারা ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আংটি, বেসলেট, রাবার ব্যান্ড, মাজারের সুতা, কিলক, অষ্টধাতু (সোনা, রূপা, তামা, পিতল, কাসা,রাং, সীষা, লোহা) ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন। এসব না করে ভাগ্যের বিধাতা যিনি তাঁরই কাছে দোয়া করা উচিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দোয়া ব্যতীত’। (তিরমিযী ২১৩৯)
আর এ মর্মে রাসূলুল্লাহ ﷺ যে দোয়াটি শিক্ষা দিয়েছেন, তা হল এই–
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنْ جَهْدِالْبَلَاءِ وَدَرْكِ الشَّقَاءِ وَسُوْءِ الْقَضَاءِ و شَمَاتَةِ الْاَعْدَاءِ
‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন জাহদিল বালা-য়ে ওয়া দারকিশ শাক্বা-য়ে ওয়া সূইল ক্বদায়ি ওয়া শামাতাতিল আ’দা।’
অর্থাৎ, হে আল্লাহ, অবশ্যই আমি তোমার নিকট কঠিন দুরাবস্থা, দুর্ভাগ্যের নাগাল, মন্দভাগ্য এবং দুশমনের হাসি থেকে রক্ষা কামনা করছি।
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, সুতরাং ‘শনির দশা’ থেকে নয়; বরং দুরাবস্থা, দুর্ভাগ্যের নাগাল ও মন্দভাগ্য থেকে মুক্তির জন্য এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়ুন। পাশাপাশি নেক আমল ও গুনাহ বর্জনের প্রতি মনোযোগী হোন। ইনশা-আল্লাহ আপনার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে।
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
nice