যদি বাবা নিজের মেয়ের প্রতি কুদৃষ্টি দেয়…

জিজ্ঞাসা–৬৯৮: আসসালামুয়ালিকুম.আমার ১ আপুর ১টা প্রশ্ন ছিল.. কোন বাবা যদি বিবাহিত সন্তানসম্ভবা মেয়ের দিকে কুনজর দেয়.. মেয়ে বুঝতে পারে নাই.. sensitive বিষয় তাই কারো সাথে share o করে নাই..বাবা অসুস্থ থাকাকালীন সময়ে সন্তানসম্ভবা মেয়ে সেবা করার উদ্দেশ্য এ বাবার কাছে গেলে বাবা যদি সুতি কাপরের উপর দিয়ে শরীরে হাত দেয় বা উরুতে হাত ছোয়ায়। মেয়ের তো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না.. বাবা যে এই ধরনের কাজ করবে তা তো ভাবাই যায় না..ঘটনা টা অনাকাঙ্খিত.. ঘটনার পর মেয়ে স্বামীর সাথে সংসার করছে.. বাচ্চার জন্ম হয়েছে.. এখন মেয়ের প্রশ্ন.. উনার জন্যকি স্বামি হারাম হয়ে গেছে… মেয়ের তো কোন দোষ নাই..যদি স্বামী হারাম হয়ে থাকে স্বামির সাথে সংসার করার কি কোন উপায় নাই..? উনি দাম্পত্য জিবনে সুখি ২ বাচ্চা আছে..সংসার করতে চান। তারপর ও কোন উপায় যদি না থাকে স্বামির সংসার করার তাহলে বাচ্চা আর ওই মেয়ের ভরনপোষণ ক করবে..? plz একটু জলদি সমাধানের উপায় করে দেন।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. প্রিয় বোন, মনে হচ্ছে, এটা মেয়েটির বাবার প্রতি মেয়েটির বদধারণা। কেননা কোনো সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন বাবা এমনটি মোটেও করতে পারে না। হয়ত তিনি নিজের মেয়ের সঙ্গে পিতৃসু্লভ মমতার কোনো আচরণ দেখিয়েছেন, যা মেয়েটির কাছে অসংলগ্ন ও দৃষ্টিকটু লেগেছে এবং এটাকেই সে বাবার বিকৃত যৌনাচার হিসেবে ভেবে নিয়েছে। অথচ যদি বাবা নিজের মেয়েকে আদর করে জড়িয়ে ধরেন কিংবা তাকে চুমো দেন তাহলে এটা তো তাঁর নিজের মেয়ের প্রতি পিতৃস্নেহের বহিঃপ্রকাশ। সহিহ বুখারির বর্ণনায় এসেছে, বারা রাযি. আবু বকর রাযি.-এর সঙ্গে হিজরতের পর তাঁর ঘরে গিয়েছিলেন। ওই সময় আবু বকর রাযি.-এর মেয়ে আয়েশা রাযি.-এর জ্বর ছিল বিধায় তিনি শোয়া অবস্থায় ছিলেন। তখন তিনি নিজের মেয়ে আয়েশা রাযি.-এর গালে চুমো দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার মেয়ে! কেমন আছ? (বুখারি ৩৭০৪)

ইমাম আহমাদ রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, পুরুষ তার মাহরাম-নারীকে চুমো দিতে পারবে কি? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, إذا قدم من سفر ولم يخَف على نفسه সফর থেকে আসলে এবং মনে কুচিন্তা না থাকলে পারবে। ইবনু মুফলিহ রহ. বলেন, তবে ঠোঁটে চুমো দিবে না; মাথায় কিংবা কপালে চুমো দিবে। (আলআদাবুশ শারইয়্যাহ ২/২৫৬)

দুই. কিন্তু কোনো বিকারগ্রস্থ বাবা যদি নিজের মেয়ের প্রতি কুদৃষ্টি দেয় এবং তাকে যৌনমানসে স্পর্শ করে তাহলে এর দ্বারা উক্ত মেয়ের বিবাহিত জীবনে কোনো ক্ষতি হয় না। তবে যেখানে পরনারীকে স্পর্শ করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

لَأَنْ يُطْعَنَ فِي رَأْسِ أَحَدِكُمْ بِمِخْيَطٍ مِنْ حَدِيدٍ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمَسَّ امْرَأَةً لَا تَحِلُّ لَهُ

নিশ্চয় তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ওই মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভাল, যে তার জন্য হালাল নয়। (তাবারানী, ছহীহুল জামে’ ৪৯২১)

সেখানে উক্ত বিকৃত মস্তিস্কসম্পন্ন বাবা যে কতটা হীন ও বীভৎস চরিত্রের অধিকারী তা প্রকাশের ভাষা আমাদের কাছে নেই। আল্লাহর কাছে পানাহ চাই, এধরণের জঘন্য চরিত্রের কোনো বাবা যদি নিজের মেয়ের সঙ্গে ব্যভিচারের মত কাণ্ড ঘটায় তাহলে কোনো কোনো আলেম বলেছেন, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। কেননা, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, مَنْ وَقَعَ عَلَى ذَاتِ مَحْرَمٍ فَاقْتُلُوهُ যে ব্যক্তি মাহরাম-নারীর সঙ্গে ব্যভিচার করে তোমরা তাকে হত্যা কর। (ইবনু মাজাহ ২৫৬৪)

তিন. উল্লেখ্য, বাবা যেমনই হোক, তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে। কেননা বাবা-মায়ের অনৈতিক ও অবৈধ কাজে বাধ্য হওয়া নিষেধ হলেও তাঁদের সঙ্গে সর্বাবস্থায় সদাচারণের নির্দেশ রয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَإِن جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

যদি তাঁরা (পিতামাতা) তোমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে আমার সাথে কাউকে শরীক করার জন্য যা (শিরক) তোমার বোধগম্য নয়, তাহলে তুমি তাঁদের কথা অমান্য করো, (অর্থাৎ আমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না) আর পার্থিব জীবনে উৎকৃষ্ট পন্থায় তাঁদের সাথে সৎ সম্পর্ক বজায় রেখো। আর তুমি তাঁদের পথ অনুসরণ করো যারা (আমি এক) আমার প্রতি অবিচলভাবে আকৃষ্ট রয়েছে। (সূরা লুকমান ১৫)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 5 =