আকিকা দিতে না পারলে নবজাতকের উপর কোনো প্রভাব পড়ে কি?

জিজ্ঞাসা–৫৬৭: আসসালামুআলাইকুম। ইনশাআল্লাহ, কয়েকমাস পর আমি প্রথমবারের মত পিতা হতে যাচ্ছি। উল্লেখ্য, আমি একজন সীমিত আয়ের মানুষ। আকীকা দেয়া বা চুলের ওজনে স্বর্ণ বা রূপা দান করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কি? আর এসব সুন্নত পালন না করলে নবজাতকের উপর কোন প্রভাব পড়বে কী? দয়া করে জানাবেন। আল্লাহ আপনার সার্বিক মঙ্গল করুন। আমিন।–মোঃ হাবিবউল্লাহ।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. প্রিয় দীনি ভাই, প্রথমে আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন আপনাকে নেক সুস্থ সন্তান দান করেন।

আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড ‘আল-লাজনাতুদ্দায়িমাহ লিল-ইফতা’-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ‘আমার কয়েকজন সন্তান আছে। আমি সীমিত আয়ের মানুষ। তাই তাদের পক্ষ থেকে আকিকা করতে পারে নি। এর কারণে আমার কোনো গুনাহ হবে কি?’

ফতোয়া বোর্ড উত্তর দিয়েছিল,

إذا كان الواقع كما ذكرت من قلة ضيق اليد؛ فلا حرج عليك في عدم التقرب إلى الله بالعقيقة عن أولادك ؛ لقول الله تعالى: لا يكلف الله نفساً إلا وسعها   البقرة / 286  ، وقوله: وما جعل عليكم في الدين من حرج الحج / 78  ، ولما ثبت عن النَّبيّ أنه قال : ( إذا أمرتكم بأمر فأتوا منه ما استطعتم، وإذا نهيتكم عن شيء فاجتنبوه ) ، ومتى أيسرت شرع لك فعلها

‘যদি বাস্তবেই আপনি গরিব হন, তাহলে আপনার জন্য আপনার সন্তানদের পক্ষ থেকে আকিকা না করাতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘তিনি ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর সংকট আরোপ করেন নি।’ তবে যেহেতু রাসুলুল্লাহ বলেছেন, ‘যখন আমি তোমাদেরকে কোনো কাজের নির্দেশ দেই, তখন সাধ্যানুপাতে তা করবে আর যখন কোনো কোনো বিষয়ে নিষেধ করি তখন তা থেকে বেঁচে থাকবে।’ সুতরাং যখন আপনার অবস্থা ভালো হবে তখন আকিকা করে নিবেন।’ (ফাতওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাহ ১১/৪৩৬,৪৩৭)

অনুরূপভাবে চুলের ওজন পরিমাণ রুপা বা তৎমূল্য সদকা করার বিষয়টিও একটি মুস্তাহাব আমল। অর্থাৎ,করলে সাওয়াব পাবেন; না করলে গুনাহ নেই।

দুই. রাসুলুল্লাহ এর প্রতিটি সুন্নাত- চাই তা মুস্তাহাব পর্যায়ের হোক না কেন; তার মাঝে উম্মতের কল্যাণ লুকায়িত থাকে।  সুতরাং একটি সুন্নাত ছুটে যাওয়া মানে ওই সুন্নাতের মাঝে নিহিত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়া। যেমন, সন্তানের আকিকা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ বলেন,

الْغُلاَمُ مُرْتَهَنٌ بِعَقِيقَتِهِ يُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ السَّابِعِ وَيُسَمَّى وَيُحْلَقُ رَأْسُهُ

প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সাথে দায়বদ্ধ থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবেহ করতে হয়, তার মাথা কামাতে হয় এবং নাম রাখতে হয়। (তিরমিযী ১৫২২)

উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহদ্দিসগণ লিখেছেন,

أن العقيقة سبب لتخليص الولد من الشيطان وحمايته منه . وقد يفوت الولدَ خيرٌ بسبب تفريط الأبوين

আকিকা সন্তানকে শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচানোর উসিলা হয়। অনেক সময় মা-বাবার উদাসীনতার কারণে সন্তান এই কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। (যাদুল মাআ’দ ২/৩২৫)

প্রিয় দীনি ভাই, সুতরাং আপনার প্রতি আমাদের পরামর্শ হল, আপনি আপনার সন্তানের পক্ষ থেকে আকিকা দেয়ার দৃঢ় নিয়ত করুন এবং আল্লাহর রহমতের পরিপূর্ণ আশা রাখুন। যে আল্লাহ আপনাকে সন্তান দিতে সক্ষম, সে আল্লাহ আপনার আর্থিক সংকটও দূর করতে সক্ষম। কেননা, তিনি তো সব ধরণের ব্যর্থতা ও অক্ষমতা থেকে মুক্ত এবং পবিত্র।

আর চুলের ওজন পরিমাণ রুপা বা তৎমূল্য সদকা করার ব্যাপারে আমাদের পরামর্শ হল, হুবহু এই পরিমাণ সদকা করা জরুরি নয়। আপনি আপনার সামর্থ্য অনুপাতে যা পারেন, সদকা করে দিবেন।

والله أعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × two =