ইচ্ছাকৃতভাবে কুরআন অবমাননাকারীর শাস্তি ও তাওবা প্রসঙ্গে

জিজ্ঞাসা–১২৮৪: আমার এক বন্ধু কোরআন শরীফে পা দিয়েছিল। সে এখন তার এই কাজের অনেক অনুতপ্ত। সে এখন কি করতে পারে?–Robin

জবাব:

এক. কোনো মুসলিম এমন জঘন্য কাজ করতে পারে না। কেননা কুরআন মজিদ ইসলামের অন্যতম মৌলিক শিয়া’র বা নিদর্শন। তাই যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কুরআনকে পা দিয়ে মাড়ায়, টয়লেট কিংবা ডাস্টবিনে ছুঁড়ে মারে কিংবা প্রচণ্ড বিদ্বেষ নিয়ে অন্য কোনোভাবে কুরআন অবমাননা কিংবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে মুরতাদ বলে পরিগণিত হবে-বিজ্ঞ আলেমদের মাঝে এ বিষয়ে কোনও দ্বিমত নাই। আর মুরতাদের ইহকালীন শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। এমর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِنْ خِلَافٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآَخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ

যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে দুশমনিতে লিপ্ত হয় এবং পৃথিবীতে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টির পাঁয়তারা করে, তাদের শাস্তি কেবল মৃত্যুদন্ড, শূলিবিদ্ধ করে হত্যা কিংবা হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা অথবা নির্বাসিত করা (কারাগারে নিক্ষেপ করা)। এ তো হল তাদের পার্থিব অপমান। আর পরকালেও তাদের জন্য অপেক্ষা করছে মর্মন্তুদ শাস্তি। (সূরা মায়েদা ৩৩)

ইবনে কুদামা হাম্বলী (মৃত্যু ৬২০ হি.) লিখেছেন,

وأجمع أهل العلم على وجوب قتل المرتدين. وروي ذلك عن أبي بكر، وعثمان، وعلي، ومعاذ، وأبي موسى، وابن عباس، وخالد وغيرهم، ولم ينكر على ذلك. فكان إجماعا

অর্থাৎ সব ধরনের মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। এ বিষয়ে আলেমগণের ইজমা তথা মতৈক্য রয়েছে। হযরত আবু বকর, উসমান, আলী, মুআয, আবু মুসা, ইবনে আববাস এবং খালিদ ইবনে ওয়ালীদ প্রমুখ সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুম থেকে এ শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আর এ শাস্তির উপর কোনো সাহাবী আপত্তি করেননি। অতএব মৃত্যুদন্ডের এ বিধানের উপর সাহাবায়ে কেরামেরও ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। (আলমুগনী ১২ : ২৬৪)

পক্ষান্তরে মুরতাদের পরকালীন শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَنْ يَرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولَئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةِ وَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি নিজের ধর্ম থেকে ফিরে যায়। আর সে অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা যায়, তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের সকল নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। এই লোকেরাই হল জাহান্নামের অধিবাসী, তারা চিরকাল সেখানে থাকবে। (সূরা বাকারা ২১৭)

দুই. তবে বিষয়টি যদি বিচারকের কাছ পর্যন্ত না পৌঁছে, তাহলে শরিয়ত তাকে ও অন্যান্য মুসলিমকে এই সুযোগ দেয় যে, তার বিষয়টি  গোপন রাখা হবে এবং সে আল্লাহর কাছে খুব করে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করে ইসলামে ফিরে আসবে। পাশাপাশি অধিকহারে ইসতেগফার করবে, নেক আমল বাড়িয়ে দিবে, গুনাহগুলো বর্জন করবে এবং এমন আমলের প্রতি মনোযোগী হবে, যার মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ-এর ভালোবাসা তার অন্তরে শনৈঃ শনৈঃ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমনটি করতে পারলে দয়াময় আল্লাহও তাকে ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায়। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِمَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَى

আর যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে, আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল। (সুরা ত্বা-হা ৮২)

তিনি আরো বলেছেন,

ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِينَ عَمِلُوا السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابُوا مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوا إِنَّ رَبَّكَ مِنْ بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَحِيمٌ

অনন্তর যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর তাওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, আপনার পালনকর্তা এসবের পরে তাদের জন্যে অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সুরা নাহল ১১৯)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 14 =