ঈমান-ইসলাম, মুমিন-মুসলিম, কুফর-কাফির, শিরক-মুশরিক, মুরতাদ, মুনাফিক, ফাসিক, দাইয়ুস, ইহুদি, খ্রিস্টান কাকে বলে?

জিজ্ঞাসা–১১২৮: আস্সালামু আলাইকুম। হজরত, আমি জানতে চাই, ঈমানদার-মুমিন-মুসলমান কি একই শব্দ নাকি আলাদা শব্দ? আলাদা হলে ঈমানদার কাকে বলে? মুমিন কাকে বলে? আর মুসলমান কাকে বলে? কাফের কাকে বলে? কাফের আর কুফর বা কুফরি কি একই শব্দ? মুশরেক কাকে বলে? মুর্তাদ কাকে বলে? মুনাফিক কাকে বলে? দাইয়ুস ককে বলে? ফাসেক কাকে বলে? ইহুদি কাকে বলে? খ্রিস্টান কাকে বলে? উপরোক্ত পয়েন্টগুলো এর সহিত যাদের মৃত্যু হবে তাঁদের সে অনুযায়ী কার কী পুরুস্কার এবং কার কী শাস্তি হবে? পয়েন্ট আকারে জানালে খুবই উপককৃত হবো। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বদলা দান করুক, আমিন।–নূর ইসলাম।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. ঈমানদার-মুমিন-এর মর্মার্থ এক। যার ঈমান আছে, তাকেই মুমিন বা ঈমাদার বলা হয়। আর ঈমান আরবী শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ সত্যায়ন করা, সত্য বলে মেনে নেওয়া, সত্য বলে বিশ্বাস করা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের যাবতীয় বিষয়ের উপর অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাসই হচ্ছে ঈমান। ঈমান অন্তরের বিষয়। এটি অন্তরে অবস্থান করে। এই ঈমানের রয়েছে সাতটি স্তম্ভ।

  • ১. একক ইলাহ হিসেবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা।
  • ২. আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস করা।
  • ৩ সমস্ত আসমানী কিতাবসমূহতে বিশ্বাস।
  • ৪. সকল নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস।
  • ৫.তাক্বদীর বা ভালো মন্দের ওপর আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করা।
  • ৬. আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস।
  • ৭. মৃত্যুর পর পুনঃজীবিত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস।

দুই. ইসলাম শব্দটিও আরবী। এর অভিধানিক অর্থ অনুগত হওয়া, আত্মসমর্পন করা, আনুগত্য করা। ইসলামের পারিভাষিক সংজ্ঞা হলো- আল্লাহর অনুগত হওয়া, আনুগত্য করা ও তার নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পন করা। বিনা দ্বিধায় আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা এবং তার দেওয়া বিধান অনুসারে জীবন যাপন করা নামই ইসলাম। যিনি ইসলামের বিধান মেনে জীবন পরিচালনা করবেন, তিনি মুসলিম বা মুসলমান।

তিন. ঈমান এবং ইসলাম পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। একটি ছাড়া অপরটি গ্রহণযোগ্য নয়। ঈমান এবং ইসলাম এই দুটির সমন্বয়ই হচ্ছে ইবাদাত। অর্থাৎ তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের যাবতীয় বিষয়কে অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকৃতি দেয়া এবং কাজে বাস্তবায়ন করার নামই ইবাদাত। আর আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদাত করার জন্য। ইসলাম ছাড়া শুধু ঈমান ইবাদাত বলে গন্য হবে না আবার ঈমান ছাড়া শুধু ইসলাম ইবাদাত বলে গন্য হবে না। তাই আমাদেরকে তাওহীদের যাবতীয় বিষয়ের উপর অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে তারপর মুখে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। তবেই সেটা ইবাদাত হিসাবে আল্লাহর নিকটে গ্রহণযোগ্য হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্থ। (সুরা আলি-ইমরান ৮৫)

ঈমান ও ইসলামের পুরস্কার অনেক, যার বিবরণ এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে অসম্ভব। যন্মধ্য থেকে অন্যতম হল, আল্লাহ তাআলা বলেন,

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত। (সুরা নাহল ৯৭)
এবিষয়ে আরো জানার জন্য পড়ুন জিজ্ঞাসা নং–৫৬০, জিজ্ঞাসা নং–৫৫৩

চার. কুফর শব্দটিও আরবী। যার শাব্দিক অর্থ হল ঢেকে রাখা, লুকিয়ে রাখা এবং এর ব্যবহারিক অর্থ হল অবাধ্যতা, অস্বীকার করা, অকৃতজ্ঞতা। ইসলামি পরিভাষায় কুফর বলা হয়, যে সকল বিষয়ের উপর ঈমান আনা জরুরী ঐ সকল বিষয়গুলো হতে কোন একটাকে অস্বীকার করা। যেমন- কোন ব্যক্তি ঈমানদার বলে দাবী করতে হলে উপরেল্লিখিত সাতটি মৌলিক বিষয়কে অবশ্যই তাকে অন্তর থেকে বিশ্বাস করতে হবে। বিশ্বাস না করাটা কুফর বা কুফরি। আর যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে না সে কাফির।

সুতরাং ঈমানের বিপরীত হচ্ছে কুফর বা কুফরি। অর্থাৎ, উল্লেখিত সাতটি বিষয় অন্তর দ্বারা বিশ্বাস করার নাম হলো ঈমান। এর যে কোন একটি অস্বীকার করাকে কুফর বলা হয়।

কুফরির আখেরাতে শাস্তি হল, এর কারণে পরকালের চিরস্থায়ী নাজাত-কোরআনের ভাষায়; চূড়ান্ত সফলতা-কখনও পাবে না। কেননা, পরকালের নাজাতের জন্য ‘ঈমান’ পূর্বশর্ত। (ফয়যুল বারী ১/১৩৬, শরহে মুসলিম-নববী ৩/৮৭) আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ لَوْ أَنَّ لَهُم مَّا فِي الأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لِيَفْتَدُواْ بِهِ مِنْ عَذَابِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَا تُقُبِّلَ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ يُرِيدُونَ أَن يَخْرُجُواْ مِنَ النَّارِ وَمَا هُم بِخَارِجِينَ مِنْهَا وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيمٌ

যারা কাফের, যদি তাদের কাছে পৃথিবীর সমুদয় সম্পদ এবং তৎসহ আরও তদনুরূপ সম্পদ থাকে আর এগুলো বিনিময়ে দিয়ে কিয়ামতের শাস্তি থেকে পরিত্রান পেতে চায়, তবুও তাদের কাছ থেকে তা কবুল করা হবে না। তাদের জন্যে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে। তারা জাহান্নামের আগুন থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে কিন্তু তা থেকে বের হতে পারবে না। তারা চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করবে। (সুরা মায়েদা ৩৬,৩৭)
আরো জানার জন্য পড়ুন জিজ্ঞাসা নং–৫০৬।

পাঁচ. মুশরিকের পরিচয় হল, যে ব্যক্তি কোরআন ও সহীহ হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর নাম ও গুণাবলীসমূহের কোন ব্যাপারে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক বা অংশীদার করে বা সমকক্ষ করে বা সামঞ্জস্য করে সে-ই মুশরিক।

শিরকের শাস্তি কাফেরদের অনুরূপ। আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ

নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক (অংশীদার) স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সুরা মায়েদা ৭২)

আরো জানার জন্য পড়ুন জিজ্ঞাসা নং–৭৩২

ছয়. মুরতাদের পরিচয় হল, যে ব্যক্তি প্রথমে মুসলিম ছিল। তারপর ইসলামের যে কোনো আবশ্যকীয় বিষয়কে অস্বীকার করে কাফের হয়ে গেছে। উক্ত ব্যক্তির নাম মুরতাদ। সুতরাং যে ব্যক্তি মুরতাদ সে কাফেরও। তবে সাধারণ কাফের আর মুরতাদ-কাফেরর মাঝে পার্থক্য হল, কোনো ব্যক্তি প্রথমে মুসলমান না হয়ে যদি শুরুতেই ইসলামের আবশ্যকীয় কোনো বিষয় অস্বীকার করে, তাহলে সে সাধারণ কাফের। কিন্তু সে মুরতাদ নয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মুসলিম থেকে তারপর কুফরী কাজ করে কাফের হয়, তাহলে সে মুরতাদ। পাশাপাশি কুফরী কাজ করার কারণে সে কাফেরও।

যেহেতু মুরতাদও মূলত কাফের, তাই একজন কাফের আখেরাতে যে শাস্তি পাবে, মুরতাদও একই শাস্তি পাবে। উপরন্তু তাদের দুনিয়ার শাস্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ

যে ব্যক্তি ধর্ম ত্যাগ করে তাকে হত্যা কর। (বুখারী ২৭৯৪)

সাত. মুনাফিকের পরিচয় হল, ‘মুনাফিক’ শব্দটি ‘নিফাক’ শব্দমূল থেকে এসেছে, যার অর্থ কোনো কিছুকে গোপন রেখে এর বিপরীত কথা বা কাজ প্রকাশ করা। ইসলামের পরিভাষায় মুনাফিক বলা হয় ওই ব্যক্তিকে যে প্রকাশ্যে ইসলাম চর্চা করে; কিন্তু গোপনে অন্তরে কুফরী বা ইসলামের প্রতি অবিশ্বাস লালন করে। আর এ ধরনের প্রতারণাকে বলা হয় নিফাক।

আখেরাতে মুনাফিকদের শাস্তিও কাফেরদের মতই হবে; বরং তার চেয়ে অধিক হবে। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَن تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا
নিঃসন্দেহে মুনাফেকরা রয়েছে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। আর তোমরা তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী কখনও পাবে না। (সুরা নিসা ১৪৫)

আট. দাইয়ুস-এর পরিচয় হল, যে ব্যক্তি নিজের পরিবারের অশ্লীলতার ব্যাপারে দায়িত্ববোধহীন বা আত্মমর্যাদাহীন।

দাইয়ুস যে জান্নাতে যাবে না; এ মর্মে একাধিক হাদিস রয়েছে। যেমন, এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

إِنَّ اللهَ سُبْحَانَهُ وَتَعَالٰى لَمَّا خَلَقَ الْجَنَّةَ قَالَ : وَعِزَّتِيْ وَجَلاَلِيْ لَا يَدْخُلُكِ بَخِيْلٌ وَلَا كَذَّابٌ وَلَا دَيُّوْثٌ

নিশ্চয়ই সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু তাআ’লা যখন জান্নাত সৃষ্টি করেছেন তখন জান্নাতকে বলেছেন, আমার সম্মান-গৌরব ও পরাক্রমশালীর শপথ, কৃপণ (সম্পদে আল্লাহ তা‘আলার অধিকার বিনষ্টকারী), মিথ্যাবাদী (কোরআন-সুন্নাহকে মিথ্যাপ্রতিপন্নকারী) এবং দাইয়ুস ব্যক্তি তোমার মধ্যে প্রবেশ করবে না। (নাসাঈ, যাকাত অনুচ্ছেদ ২৫৬২ মুসনাদে আহমাদ ২/১৩৪)

আরো জানার জন্য পড়ুন জিজ্ঞাসা নং–১০৯২

নয়. ফাসিকের পরিচয় হল, ফাসিক শব্দটি ফিসক শব্দ থেকে উৎকলিত ‘ফিসক’ শব্দের অর্থ হচ্ছে অবাধ্যতা। বাংলাতে ‘ফাসেক’ শব্দের অর্থ করা হয় পাপিষ্ঠ। ইসলামের পরিভাষায় ফাসিক বলা হয় ওই ব্যক্তিকে যে ব্যক্তি নিয়মিত কবীরাহ গুনাহতে লিপ্ত থাকে অথবা প্রকাশ্যে আল্লাহর নিষিদ্ধ ঘোষিত হারাম কাজ করতে অভ্যস্ত এবং তওবা করে পাপ কাজ থেকে ফিরে আসে না।

ফাসেক ব্যক্তি যদি নামাযী মুসলমান হয়, দ্বীনের অন্য বিধি-বিধান মেনে চলে কিন্তু কিছু কবীরাহ গুনাহতে লিপ্ত থাকে, তাহলে মীযানে তার নেক আমল যদি পাপ কাজের ওজনের চাইতে ভারী হয় তাহলে সে জান্নাতে যাবে। অথবা আল্লাহর বিশেষ রহমতে তাকে যদি ক্ষমা করে দেন, তাহলে সে কোন শাস্তি ছাড়াই সরাসরি জান্নাতে যাবে। কিন্তু তার পাপ কাজ যদি নেকীর চাইতে বেশি ভারী হয় এবং আল্লাহর রহমত পেতে ব্যর্থ হয় তাহলে সে জাহান্নামে পাপের শাস্তি ভোগ করবে। জাহান্নামে কঠিন শাস্তির পরে পাপের প্রায়শ্চিত্ত হলে এর পরে সে জান্নাতে যাবে। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاء فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِن بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক। তবে যারা এরপরে তাওবা করে এবং নিজদের সংশোধন করে, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা নূর ৪, ৫)

দশ. ইহুদির পরিচয় হল, মুসা আ.-এর অনুসারী হিসেবে যারা দাবী করে তাদেরকে ইহুদি বলা হয়। ইহুদি মূলত একটি জাতি বা ধর্মীয় জনগোষ্ঠী যারা বনি-ইসরাইল জাতির অন্তর্গত এবং জাতিগতভাবে ইহুদি ধর্মের অনুসারী। ইবরাহিম আ.-এর পুত্র ইসহাক আ., তার পুত্র ইয়াকুব আ. ওরফে ইসরাইল-এর বংশধরগণ বনি-ইসরাইল নামে পরিচিত। ইয়াকুব আ.-এর বারো পুত্রের নামে বনি-ইসরাইলের বারোটি গোষ্ঠীর জন্ম হয় যার মধ্যে ইয়াহুদা’র ছেলেমেয়েরা ইহুদি নামে পরিচিত।

কেউ কেউ বলেন, ইহুদি শব্দের অর্থ হচ্ছে বন্ধুত্ব। যেহেতু মুসা আ.-এর অনুসারীরা অপরাধের কারণে আল্লাহর নিকট তাওবা করে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছে তাই তাদেরকে ইহুদি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

ইহুদিরা আল্লাহর কিতাব বিকৃতকরণসহ বিভিন্ন কুফর ও শিরককাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তাই আখেরাতে তারাও কাফের-মুশরিকদের মতই শাস্তি ভোগ করবে। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَكَيْفَ يُحَكِّمُونَكَ وَعِندَهُمُ التَّوْرَاةُ فِيهَا حُكْمُ اللّهِ ثُمَّ يَتَوَلَّوْنَ مِن بَعْدِ ذَلِكَ وَمَا أُوْلَـئِكَ بِالْمُؤْمِنِينَ
(হে নবী!) আর কীভাবে তারা তোমাকে ফয়সালাকারী বানায়? অথচ তাদের কাছে রয়েছে তাওরাত, যাতে আছে আল্লাহর বিধান, তা সত্ত্বেও তারা এরপর মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তারা মুমিনও নয়। (সূরা মায়েদা ৪৩)

এগার. খ্রিস্টানের পরিচয় হল, বনি-ইসরাইল সম্প্রদায়ের যারা ঈসা আ.-এর অনুসারী হিসেবে দাবী করে তাদেরকে খ্রিস্টান বলা হয়। কুরআন মজিদে এদেরকে বলা হয়েছে, নাসারা তথা সাহায্যকারী। কেননা, তারা একে অপরকে সাহায্য করেছিল। তাদেরকে আনসারও বলা হয়।

খ্রিস্টানরাও ইহুদিদের মতই আল্লাহর কিতাব বিকৃতকরণসহ বিভিন্ন কুফর ও শিরককাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তাই আখেরাতে তারাও কাফের-মুশরিকদের মতই শাস্তি ভোগ করবে। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُواْ إِنَّ اللّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ وَقَالَ الْمَسِيحُ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اعْبُدُواْ اللّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
তারা কাফের, যারা বলে যে, মরিময়-তনয় মসীহ-ই আল্লাহ; অথচ মসীহ বলেন, হে বণী-ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, যিনি আমার পালন কর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা ৭২)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − one =