উপযুক্ত ছেলে অভিবাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করতে পারবে কি?

জিজ্ঞাসা–১৫০৯: আমি জানতে চাই, ছেলেদের বিয়ের বয়স হলে নিজের ইচ্ছেতে কি বিয়ে করতে পারবে? পরিবার বিয়ে দিচ্ছে না আর ছেলে তার নিজের খরচসহ আরো ২ জনের খরচ বহন করতে সক্ষম। কিন্তু ছেলের পরিবার ছেলেকে বিয়ে দিচ্ছে না।–মোঃ রাজু।

জবাব:

এক. যদি সামর্থ্য থাকার সাথে সাথে চাহিদা এতো বেশি থাকে যে, বিয়ে না করলে ব্যভিচার ধর্ষণ বা হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার ভয় থাকে তখন বিয়ে করা ফরজ। উল্লেখ্য যে, ব্যভিচার ধর্ষণ ছাড়াও কুদৃষ্টি ও হস্তমৈথুনও হারাম কাজের অন্তর্ভূক্ত।

আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘বিয়ে সুন্নত না ফরয?’ তখন তারা উত্তর দিয়েছিল,

الزواج سنة مرغب فيه للمستطيع، لقوله -عليه الصلاة والسلام- : «يا معشر الشباب من استطاع منكم الباءة فليتزوج، فإنه أغض للبصر، وأحصن للفرج، ومن لم يستطع فعليه بالصوم، فإنه له وجاء» وقد يكون في حق بعض الناس فرضا إذا خشي على نفسه من الوقوع في الفاحشة واستطاع مؤنة النكاح

বিয়ে সুন্নাত, সামর্থ্যবানকে এর প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে এবং যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা পালন করে। কেননা, রোজা যৌন ক্ষমতাকে অবদমন করবে। (বুখারী ১৯০৫)

কিছু লোকের ক্ষেত্রে বিয়েটা ফরয হয়ে যায়; যদি খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ার ভয় করে এবং বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে। (ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা লিল বুহুসিল ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা, ফাতওয়া নং ৯৬২৪)

দুই.  ছেলের উপর বিয়ে ফরয হওয়ার পরেও যদি অভিবাবক বিয়ে দিতে অসম্মত হয় তাহলে করণীয় হল,

প্রথমত : অভিভাবককে যে কোনোভাবে বুঝিয়ে নেয়া। এক্ষেত্রে তাদের পরিবারের বিশ্বস্ত কিংবা তাদের পরিবারে প্রভাব রাখেন এমন তৃতীয় কোনো ব্যক্তির সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। কেননা, আল্লাহ না করুন, এমনটি করতে না পারলে পারিবারিক মর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান ক্ষুণ্ণ হতে পারে এবং এমন কিছু পরিণামের দুয়ার খুলে দিতে পারে, যা পরবর্তীতে তাদের বৈবাহিক-জীবনে অশান্তির বড় কারণ হবে।

দেখুন, আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন অভিভাবকদের প্রতি। আল্লাহ তাআলা বলেন, وأَنْكِحوا الأيامى منكم ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও।’ (সূরা নুর ৩২)

দ্বিতীয়ত : উপরোক্ত পদক্ষেপ নেয়ার পরেও যদি বাবা-মা ও পরিবারের লোকজন বিয়ের সম্মতি না দেয় তবে গুনাহয় জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকে আত্মরক্ষার স্বার্থে নিজ সিদ্ধান্তে পছন্দনীয় মেয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিয়ে করে নিতে হবে। কেননা, ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে উপযুক্ত ছেলের এভাবে বিয়ে করায় কোনো দোষ নেই। তাছাড়া ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে বাবা-মায়ের বাধ্য থাকার বিষয়টি কেবল বৈধ কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং যদি তাঁরা ফরযে আইন, ওয়াজিব কিংবা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বর্জন করতে বলেন অথবা যদি তাঁরা কোনো হারাম কাজ করতে বলেন তাহলে সে ক্ষেত্রে তাঁদের আনুগত্য করা জায়েয হবে না। কেননা, রাসূলুল্লাহ বলেন,

فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ

অসৎকাজে আনুগত্য নয় ;আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে। (বুখারী ৭১৪৫  মুসলিম ১৮৪০)

বিস্তারিত দেখুন, জিজ্ঞাসা নং-৬৫১।

والله أعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − 4 =