কোরআন মজিদের কোথাও কি রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে নাম ধরে সম্বোধন করা হয় নি?

জিজ্ঞাসা–৬৭৯: আমি আজকে একটা ভিডিও লেকচারে দেখলাম। একজন হুজুর বলছেন, (বিদেশী) পবিত্র কুরআনে কোথাও নবী (সা) কে নাম ধরে অর্থাৎ “হে মুহাম্মাদ” বলে ডাকা হয় নি। বরং “হে নবী”, “হে চাদরাবৃত” প্রভৃতি নামে ডাকা হয়েছে যেখানে এর আগের সকল নবীকে নাম ধরেই ডাকা হত। এটা কি সত্য? আমি কয়েকটা আয়াতের অনুবাদে “হে মুহাম্মাদ” দেখেছি যদিও আমি সরাসরি কুরআন যাঁচাই করি নি। এ বিষয়ে জানতে চাই।– অহনা।

জবাব:

এক- হ্যাঁ, এটা সত্য যে, আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদের কোথাও তাঁর হাবীবকে নাম ধরে সম্বোধন করেন নি। বরং তাঁর প্রতি বিশেষ স্নেহ ও ভালোবাসা প্রকাশার্থে তাঁর বিভিন্ন অবস্থা ও গুণ অনুপাতে তাঁকে বিভিন্ন শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছেন। উপরন্তু অন্য বান্দাদের আদেশ করেছেন, তারা যেভাবে নিজেদের মধ্যে একে অপরকে নাম ধরে কিংবা পারিবারিক, বংশীয় বিভিন্ন সম্পর্কের ভিত্তিতে সম্বোধন করে থাকে–সেভাবে যেন রাসূলকে সম্বোধন না করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَا تَجْعَلُوا دُعَاء الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاء بَعْضِكُم بَعْضًا

তোমরা যখন রাসুল কে আহ্বান কর তখন সাধারণ লোকের মত তাঁর নাম নিয়ে আহ্বান করবে না। (সূরা নূর  ৬৩)

উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইবন কাসির রহ. বলেন,

لا تسموه إذا دعوتموه : يا محمد ، ولا تقولوا : يا بن عبد الله ، ولكن شرفوه فقولوا : يا نبي الله ، يا رسول الله

তোমরা যখন তাঁকে ডাকবে তখন ‘হে মুহাম্মদ’ ‘হে আব্দুল্লাহর ছেলে’ বলে ডাকবে না। বরং তাঁকে সম্মানের সঙ্গে ‘হে আল্লাহর নবী’ ‘হে আল্লাহর রাসুল’ বলে ডাকবে। (তাফসিরে ইবন কাসির ৬/৮৯)

মুফতি শফি উসমানী রহ. বলেন, যখন তোমরা রাসুলুল্লাহ -কে আহ্বান কোনো প্রয়োজনে আহ্বান কর অথবা সম্বোধন কর তখন সাধারণ লোকের ন্যায় ‘হে মুহাম্মদ’ বলবে না। এটা বেয়াদবি। বরং সম্মানসূচক উপাধি দ্বারা ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ’ অথবা ‘ইয়া নবীয়াল্লাহ’ বলবে। (সংক্ষিপ্ত তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন ৯৫৫)

দুই তবে কোরআন মজিদে রাসুলুল্লাহ -কে ‘হে মুহাম্মদ’ বলে সম্বোধন করা না হলেও তাঁর ‘মুহাম্মদ’ নাম চার জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন-

১. আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ مَا محُمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَ فَإِيْن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلىَ أَعْقَابِكُمْ وَ مَن يَنقَلِبْ عَلىَ‏ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضرُّ اللَّهَ شَيْا وَ سَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِين

আর মুহাম্মদ একজন রাসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন। (সূরা আ-লি ইমরান ১৪৪)

২. আল্লাহ তাআলা বলেন,

مَّا كاَنَ محُمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَ لَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَ خَاتَمَ النَّبِيِّنَ وَ كاَنَ اللَّهُ بِكلُ‏ِّ شىَ‏ْءٍ عَلِيمًا

মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। (সূরা আহযাব ৪০)

৩. আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ الَّذِينَ ءَامَنُواْ وَ عَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ وَ ءَامَنُواْ بِمَا نُزِّلَ عَلىَ‏ محُمَّدٍ وَ هُوَ الحْقُّ مِن رَّبهِّمْ كَفَّرَ عَنهْمْ سَيِّاتهِمْ وَ أَصْلَحَ بَالهَم

আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে মুহাম্মদের প্রতি অবতীর্ণ সত্যে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দেন। ( সূরা মাহাম্মাদ ২)

৪. আল্লাহ তাআলা বলেন,

محُّمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ وَ الَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلىَ الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنهَمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَ رِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فيِ وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ

মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন। (সূরা ফাতহ ২৯)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − two =