গোসলের সুন্নত ও আদবসমূহ

জিজ্ঞাসা–১৩৪১: গোসলের সহীহ নিয়ম কী? বিস্তারিত বলুন।–সোহাগ রানা।

জবাব: গোসলের সুন্নাত ও আদবগুলোর প্রতি যত্ন নিলেই গোসল বিশুদ্ধ হবে এবং ইবাদতের সাওয়াব পাওয়া যাবে। নিম্নে সেগুলো পেশ করা হল–

১. প্রথমে গোসলখানায় বাম দিয়ে প্রবেশ করা। (আলফাতাওয়া আলহাদিছিয়া ৬১)

২. যতদূর সম্ভব সতর গোপন রাখা। (আল আদাব ফিদ্দীন ৫৪)

৩. নির্জন স্থানে গোসল করা। উম্মে হানী রাযি. বলেন,

ذَهَبْتُ إلى رَسولِ اللَّهِ ﷺ عَامَ الفَتْحِ فَوَجَدْتُهُ يَغْتَسِلُ وفَاطِمَةُ تَسْتُرُهُ

আমি মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ -এর কাছে গিয়ে তাঁকে গোসলরত অবস্থায় দেখলাম, ফাতিমা রাযি. তাঁকে পর্দা করে রেখেছিলেন। (বুখারী ২৮০)

৪. গোসলের শুরুতে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা। আয়েশা রাযি. বলেন,

أنَّ رَسولَ اللهِ ﷺ كانَ إذَا اغْتَسَلَ مِنَ الجَنَابَةِ بَدَأَ فَغَسَلَ يَدَيْهِ قَبْلَ أنْ يُدْخِلَ يَدَهُ في الإنَاءِ

রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন অপবিত্রতা থেকে গোসল করতেন তখন পাত্রে হাত ঢুকানোর আগে প্রথমেই তার দুই হাত ধুতেন। (বুখারী ২৪৮)

৫. তারপর লজ্জাস্থান ধুয়ে নেয়া এবং শরীরের অন্য কোনো স্থানে নাপাকি বা ময়লা থাকলে তা ধুয়ে নেয়া। মাইমুনা রাযি. বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে এসেছে,

ثُمَّ أفْرَغَ علَى شِمَالِهِ، فَغَسَلَ مَذَاكِيرَهُ

…পরে (রাসূলুল্লাহ ﷺ) তাঁর বাম হাতে পানি নিয়ে তাঁর লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেললেন। (বুখারী ২৫৭)

৬. তারপর অজু করে নেয়া। আয়েশা রাযি. বলেন,

ثُمَّ يَتَوَضَّأُ كما يَتَوَضَّأُ لِلصَّلَاةِ

তারপর (রাসূলুল্লাহ ﷺ) নামাজের অজুর মত অজু করতেন। (বুখারী ২৪৮)

৭. কেবলামুখী হয়ে গোসল না করা। (কবীরী ৫১)

৮. যদি গোসলের স্থানে পানি জমে যায় তাহলে গোসলের স্থান হতে অন্য জায়গায় যেয়ে পা ধৌত করা। মাইমুনা রাযি. বলেন,

ثُمَّ تَنَحَّى مِن مَقَامِهِ، فَغَسَلَ قَدَمَيْهِ

অবশেষে (রাসূলুল্লাহ ﷺ) সেখান থেকে একটু সরে গিয়ে তাঁর দু’পা ধুয়ে ফেললেন। (বুখারী ২৬৫)

৯. প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার না করা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

يُجزِيءُ من الوضوءِ مُدٌّ ، و من الغسلِ صاعٌ

অজুতে এক মুদ্দ এবং গোসলে এক সা পানি যথেষ্ট। (ইবনু মাজাহ ২৭০)

উল্লেখ্য, এক সা মানে ০৩ কিলো ১৪৯ গ্রাম বা ২৮০ মিলিগ্রাম। এক মুদ্দ মানে ৭৮৭ গ্রাম বা ৩২ মিলিগ্রাম।

১০. দেহের অবশিষ্টাংশ ধোয়ার আগে মাথা ধৌত করা। জাবির রাযি. বলেন,

كانَ النبيُّ ﷺ يَأْخُذُ ثَلَاثَةَ أكُفٍّ ويُفِيضُهَا علَى رَأْسِهِ، ثُمَّ يُفِيضُ علَى سَائِرِ جَسَدِهِ

নবী তিন আজলা পানি নিতেন এবং নিজের মাথার উপর ঢেলে দিতেন। অতঃপর নিজের সারা দেহে পানি বহিয়ে দিতেন। (বুখারী ২৫৬)

১১. ফরজ গোসলের ক্ষেত্রে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

أمَّا الرَّجلُ فلينشُر رأسَهُ فليغسلهُ حتَّى يبلغَ أصولَ الشَّعرِ

পুরুষ লোক তার মাথার চুল এমনভাবে ছেড়ে ধুয়ে নিবে, যাতে পানি চুলের গোড়ায় পৌঁছে যায়। (আবু দাউদ ২৫৫)

১২. মাথা ধৌত করার পর প্রথমে ডান পাশে তারপর বাম পাশে পানি ঢালা। আয়েশা রাযি. বলেন,

كُنَّا إذَا أصَابَتْ إحْدَانَا جَنَابَةٌ، أخَذَتْ بيَدَيْهَا ثَلَاثًا فَوْقَ رَأْسِهَا، ثُمَّ تَأْخُذُ بيَدِهَا علَى شِقِّهَا الأيْمَنِ، وبِيَدِهَا الأُخْرَى علَى شِقِّهَا الأيْسَرِ

আমাদের কারও জানবাতের গোসলের প্রয়োজন হলে সে দু’হাতে পনি নিয়ে তিনবার মাথায় ঢালত। পরে হাতে পানি নিয়ে ডান পাশে তিনবার এবং আবার হাতে পানি নিয়ে বাম পাশে তিনবার ঢালত। (বুখারী ২৭৭)

১৩. সারা শরীরে তিনবার পানি ঢালা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

أَمَّا أنا فَأُفِيضُ علَى رَأْسِي ثَلاثًا، وأَشارَ بيَدَيْهِ كِلْتَيْهِما

আমি তিনবার আমার মাথায় পানি ঢালি। এই বলে তিনি উভয় হাতের দ্বারা ইঙ্গিত করেন। (বুখারী ২৫৪)

১৪. গোসল করার সময় অযথা কথাবার্তা না বলা। (আল আদাব ফিদ্দীন ৫৪ কবীরী ৫১)

১৫. গোসলখানায় পেশাব না করা। আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

نَهى رَسولُ اللهُ ﷺ أنْ يَبولَ الرَّجُلُ في مُستَحَمِّهِ؛ فإنَّ عامَّةَ الوَسواسِ منه

রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন ব্যক্তিকে নিজের গোসলখানায় পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। কেননা, বেশিরভাগ ওয়াসওয়াসা তা হতেই সৃষ্টি হয়। (তিরমিযী ২১)

১৬. গোসলখানা থেকে ডান পা দিয়ে বের হওয়া। (আলফাতাওয়া আলহাদিছিয়া ৬১)

والله اعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 1 =