তাওবা করার পরও যে যুবক প্রেমিকাকে ভুলতে পারছে না; তার প্রতি পরামর্শ

জিজ্ঞাসা–৯৫৫: আসসালামুআলাইকুম। আমার একটি মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত কিছুদিন আগে আমি মেয়েটির সাথে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। কিন্তু আমার মাথায় সব সময় ঐ বিষয়টাই ঘুরপাক খাচ্ছে এমতাবস্থায় আমি খুব চিন্তিত। এখন আমি কিভাবে এই চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারি? কিভাবে সহজেই ডিপ্রেশন মুক্ত হতে পারি? দয়া করে একটু শরীয়তের দৃষ্টিতে জানাবেন।–মোহাম্মদ নাঈম উদ্দীন।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক: প্রিয় ভাই, যখনই আপনার মাথায় উক্ত চিন্তা আসবে তখনই যে মহান সত্তা আপনাকে তাওবা করার তাওফিক দিয়েছেন, বেশি বেশি তাঁর শোকর আদায় করে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়া শুরু করে দিন। দেখবেন, এভাবে আপনার চিন্তার মোড় ঘুরে যাবে এবং পেরেশানি প্রশান্তিতে রূপ নিবে। কেননা, আল্লাহ বলেছেন, لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ ‘যদি শোকর কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব।’ (সূরা ইব্রাহিম ০৭)

দুই: অবসর সময় কাটাবেন না। যখনই নির্জনে থাকবেন, অবসর থাকবেন তখনই নিজেকে কোনো কাজে ব্যস্ত করে নিবেন। কাজটি দুনিয়ার বৈধ কাজ হলেও অসুবিধা নেই। আর যদি কাজটি হয় ভাল বই পড়া, জিকির-মোরাকাবা করা, তেলাওয়াত করা তাহলে তো সবচে’ ভাল।  ডা. আব্দুল  হাই আরেফী রহ. বলতেন, ‘কাজের ভেতরে কাজ ঢুকিয়ে দাও। অবসর আছো তো কোনো কাজের প্রোগ্রাম করে নাও। হাতে একটি কাজ আছে তো আরেকটি কাজের প্রোগ্রাম বানিয়ে নাও।’

দেখুন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ

‘দুটো নিয়ামত এমন যে দুটোর বিষয়ে বহু লোক ধোঁকায় নিপতিত- স্বাস্থ্য এবং অবসর।’ (তিরমিযী ২৩০৭)

সুতরাং সময়কে কাজে লাগিয়ে বেশি বেশি নেক আমল করুন, নামাজ পড়ুন, ইস্তেগফার করুন। ভালো ও দ্বীনদার বন্ধুবান্ধবের সাথে উঠাবসা করুন; যাতে করে এসব কিছু আপনার অতীত অবৈধ সম্পর্কের বিকল্পহতে পারে।

 তিন: আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহন করুন।  এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা সহজ হবে।  আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।’ (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

চার: প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ অথবা এই আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন- هُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’

এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করতে পারলে -ইনশা আল্লাহ- ধীরে ধীরে আল্লাহর সান্নিধ্যের সার্বক্ষণিক অনুভূতি অন্তরে বসে যাবে এবং  বাজে চিন্তা থেকে বের হওয়া সহজ হয়ে যাবে।

পাঁচ: অবশেষে বলতে চাই, নিজেকে হেফাজতে রাখার জন্য আপনি অনতিবলম্বে শরিয়তসিদ্ধ পথ গ্রহণ করুন। সেটা হচ্ছে-বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে আপনি পুনরায় এ জাতীয় হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ منكُم الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ

‘হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখ তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাযতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই তার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।’ (বুখারী ৫০৬৬)

আল্লাহ তাআলা তাওফিকদাতা। (দেরিতে উত্তর দেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − three =