নফল ও ফরয রোযার মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য

জিজ্ঞাসা–৮৪৯: আসসালামুআলাইকুম। হযরত, রোযার যেই পুরুষ্কার এর কথা আল্লাহপাক বলেছেন সেইগুলো কি শুধু রমযানের রোযার জন্য নাকি নফল রোযাও এর অন্তঅন্তর্ভু?,–Mohammad Tafsir Ahmed

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

নফল মানে অতিরিক্ত, ফরজ বা ওয়াজিব নয়। আর এটা তো জানা কথা যে, ইসলামি-শরিয়তে ফরজ, ওয়াজিব এবং নফলের গুরুত্ব সমান নয়। সুতরাং ফজিলতও সমান নয়। তবে তবে নফল ও ঐচ্ছিক ইবাদতের ফযীলতও এত বেশি যে, তা মুমিনকে উদ্দীপ্ত ও আগ্রহী করে তোলে। এজন্যই হাদীস শরীফে নফল রোযার অনেক প্রকার ও অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল নিজেও নফল রোযা রেখেছেন, উম্মতকেও এর ফযীলত শুনিয়েছেন।

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, নফল রোযার বিভিন্ন প্রকার ও তার ফযীলত বিষয়ে ইমাম আবু বকর আলআছরাম রহ.-এর একটি বক্তব্য পেশ করছি; যার মাধ্যমে নফল রোযাসমূহের বিভিন্ন প্রকারের তাৎপর্য যেমন বোঝা যাবে তেমনি নফল ও ফরযের মধ্যে একটি তুলনাও বোঝা যাবে, যা ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তা ও আচরণের জন্য খুবই প্রয়োজন। আর যা শুধু নফল রোযা নয়, যে কোনো নফল ইবাদতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

বিভিন্ন প্রকারের নফল রোযা যেমন, মাসে তিন দিন রোযা, আইয়ামে বীযের রোযা, শা‘বান মাসের রোযা ইত্যাদি বর্ণনার পর তিনি লেখেন-

وذلك أن أصل الفرض إنما هو الشهر المبارك الذي افترضه الله عز وجل، وأجمع أهل الإسلام على صومه، وكانت الفسحة فيما بعده للأمة، وكان الصوم بعده تطوعاً، وكانت الفضائل في بعضه أكثر منها في بعض، وكان من شاء استكثر من تلك الفضائل، ومن شاء استقل، ومن شاء تركها إلى غير حرج

أما سمعت حديث طلحة بن عبيد الله في قول الأعرابي للنبي حين سأله عن الصوم فذكر شهر رمضان، فقال: هل علي غيره، قال: لا، إلا أن تطوع ثم قال رسول الله : لئن صدق ليدخلن الجنة وذلك عند قوله: والذي بعثك بالحق لا أزيد على هذا شيئاً ولا أنتقص منه

ومثل حديث النبي في الرجل الذي قال: إني لأبغض فلاناً، فكان مما احتج به عليه: أنه لا يصوم إلا شهر رمضان، فقال النبي : قم، إن أدري لعله خيرٌ منك

في أشباهٍ لهذا كثيرة.

وإنما يرى أنه كره أن يجعل شيئاً من هذه الفضائل في الصوم معلومة فيلم بها الناس، فتكون كالشيء المفترض عليهم، فأخذ ببعضها في وقت، وأخذ ببعضها في آخر، وذكر لكل شيء فضيلة؛ لئلا يلزم شيء واحد بعينه كأنه لا يجوز غيره، فيكون بمنزلة [ .. … ] الواجب، ففي صوم ثلاثٍ من كل شهر فضلٌ، فإن تعمد به البيض كان أفضل، وإن صامهن في غير البيض فقد أخذ بفضلٍ دون فضل، وكذلك سائر ما ذكرناه.

অর্থাৎ, এ বিষয়ে বাহ্যত বিভিন্ন ধরনের বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে। মূল ব্যাপারটি হচ্ছে, এক্ষেত্রে ফরয হচ্ছে শুধু মাহে রমযানের রোযা। এই রোযার বিষয়ে গোটা মুসলিম উম্মাহ একমত। এই ফরয রোযার পর অন্যান্য রোযা ঐচ্ছিক, যাতে উম্মাহর জন্য অবকাশ রয়েছে এবং এই রোযাগুলোর মধ্যে ফযীলতের তারতম্যও রয়েছে। কাজেই যার ইচ্ছা ঐ ফযীলত বেশি অর্জন করবে, যার ইচ্ছা কম অর্জন করবে। কেউ অর্জন না করলেও কোনো অসুবিধা নেই। ঐ বেদুঈনের হাদীস তো বিখ্যাত যাতে আছে যে, তিনি যখন রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন এবং আল্লাহর রাসূল রমযানের রোযার কথা বললেন তখন ঐ বেদুঈন সাহাবী বললেন, এছাড়া কি আমার উপর অপরিহার্য আরো কোনো রোযা আছে? আল্লাহর রাসূল বললেন, না। সাহাবী বললেন, ঐ সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য (দ্বীন) দিয়ে পাঠিয়েছেন আমি এর চেয়ে বাড়াবও না, কমাবও না। তখন আল্লাহর রাসূল বললেন, সে যদি সত্য বলে থাকে তাহলে অবশ্যই জান্নাতে যাবে।

তেমনি আরেক হাদীসে আছে যে, এক ব্যক্তি বলল, আমি অমুককে দেখতে পারি না। এরপর এর কারণ হিসেবে বলল, সে রমযানের রোযা ছাড়া আর কোনো রোযা রাখে না। তো আল্লাহর রাসূল বললেন, قم إن أرى لعله خير منك ‘উঠে যাও, আমি জানি না হতে পারে সে তোমার চেয়ে ভালো।’

এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর রাসূল এই ফযীলতের কাজগুলোর কোনো একটিকে এমনভাবে নির্ধারিত করে দেওয়া অপছন্দ করেছেন যে, লোকেরা এটাকে অবলম্বন করবে এবং তা ফরযের মতো হয়ে যাবে। কাজেই কখনো এই রোযা রেখেছেন, কখনো ঐ রোযা রেখেছেন এবং প্রত্যেকটিরই ফযীলত বয়ান করেছেন। যেন বিশেষ কোনোটি এমন না হয়ে দাঁড়ায় যে, এখানে অন্য কিছুর অবকাশ নেই, ফলে তা ওয়াজিবের মতো হয়ে যায়।

তো মাসের তিন রোযার ফযীলত রয়েছে। আর সেই তিন রোযা যদি হয় তের-চৌদ্দ-পনের তারিখ তাহলে আরো ভালো। তের-চৌদ্দ-পনের ছাড়া অন্য তারিখে রাখলেও এক ফযীলত পাওয়া যাবে। তেমনি অন্যান্য রোযা। (নাসিখুল হাদীসি ওয়া মানসূখুহু, ইমাম আবু বকর আল আছরাম ১৭৬-১৭৮)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

১ টি মন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × two =