নামাজ ও তেলাওয়াতের সময় বার বার অজু চলে যাওয়ার সন্দেহ হয়; করণীয় কী?

জিজ্ঞাসা–১৪৬৪: নামাজ অথবা কুরআন তিলাওয়াত করতে বসলে বার বার অজু ভেঙে যায়। মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়। আবার মাঝে মাঝে বুঝতে পারি আসলেই ভেঙে গেছে। কিন্তু এটা বার বার হয়। দুই থেকে তিন বারও অজু করি অনেক সময়। করণীয় কি? বিস্তারিত জানালে ভাল হয় বিশেষ করে যখন বুঝতে পারছি বার বার ভেঙে যাচ্ছে তখন কী করব?–Kamrun

জবাব: প্রিয় দীনি বোন, আপনি আপনার যে সসমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন; এটা নিঃসন্দেহে ওয়াসওয়াসা বা সন্দেহ। আর ওয়াসওয়াসার নেপথ্যে থাকে শয়তান। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে– ঈমানদারদেরকে কষ্ট দেয়া এবং যে নামায ও কুরআন তেলাওয়াত মুমিনের অন্তরের শীতলতা সেটাকে মুমিনের জন্য পেরশানির ‘কারণ’ বানিয়ে দেয়া। এর সর্বোত্তম প্রতিকার হচ্ছে– বেশি বেশি আল্লাহ্‌র যিকির করা, لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ পড়া, আউযুবিল্লাহ্‌ পড়া তথা বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

আর আপনার জন্য উপদেশ হচ্ছে- আপনি নামাযে কিংবা নামাযের বাহিরে সন্দেহকে মোটেই ভ্রুক্ষেপ করবেন না। এর Do’nt care case তথা মোটেও যত্ন নিবেন না। আপনি যখন একে উপেক্ষাই করবেন তখন আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

اَلْحَمْدُ لِلهِ الَّذِىْ رَدَّ اَمْرَهُ عَلَى الْوَسْوَسَة

সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহর যিনি শয়তানের বিষয়টি কুমন্ত্রণা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন। (নাসাঈ )

মনে রাখবেন, যদি আপনি শয়তানসৃষ্ট সন্দেহের এ বাতিককে উপেক্ষা করতে পারেন তাহলে আপনি সেটাই করেছেন, যা করার জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন এক ব্যক্তি তাঁর কাছে অভিযোগ করলেন যে, তার কাছে মনে হয় যে, সে নামাযের মধ্যে কিছু একটা পাচ্ছে। তখন তিনি বললেন, لاَ يَنْصَرِفُ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا ، أَوْ يَجِدَ رِيحًا সে যেন শব্দ শুনা কিংবা গন্ধ পাওয়া ছাড়া নামায না ছাড়ে। (সহিহ বুখারী ১৩৭ সহিহ মুসলিম ৩৬১)

এ কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হল- অযু ভাঙ্গার ব্যাপারে পরিপূর্ণ নিশ্চিত হওয়া ছাড়া আপনি এটাই মনে করবেন যে, আপনার অযু ভাঙ্গে নি।

অতএব, সন্দেহ কিংবা কল্পনা ধর্তব্য নয়। পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত হওয়া ছাড়া আপনি নামায ছাড়বেন না। এটাই রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ-এর নির্দেশ। আপনার নামায শুদ্ধ। এমনকি বাস্তবে যদি ওযু ভেঙ্গে গিয়ে থাকে তবুও।

ইবনে হাজার আল-হাইছামি তাঁর ‘আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা’ গ্রন্থে (১/১৪৯) এসেছে, তাঁকে এর প্রতিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان – فإنه متى لم يلتفت لذلك لم يثبت بل يذهب بعد زمن قليل كما جرب ذلك الموفقون , وأما من أصغى إليها وعمل بقضيتها فإنها لا تزال تزداد به حتى تُخرجه إلى حيز المجانين بل وأقبح منهم

অর্থাৎ, এর ঔষধ একটাই সেটা হচ্ছে– ওয়াসওয়াসাকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও। কেননা কেউ যদি সেটাকে ভ্রুক্ষেপ না করে তাহলে সেটা স্থির হবে না। কিছু সময় পর চলে যাবে; যেমনটি তাওফিকপ্রাপ্ত লোকেরা যাচাই করে পেয়েছেন। আর যে ব্যক্তি ওয়াসওয়াসাকে পাত্তা দিবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে সে ব্যক্তির ওয়াসওয়াসা বাড়তেই থাকবে; এক পর্যায়ে তাকে পাগলের কাতারে নিয়ে পৌঁছাবে কিংবা পাগলের চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছাবে।

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে ও আপনাকে সকল ভাল কাজের তাওফিক দেন। নিশ্চয় তিনি সে ক্ষমতা রাখেন।

والله أعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − nine =