নারী-পুরুষের মিশ্রিত পরিবেশে নারীর শিক্ষকতা বা চাকরি করা

জিজ্ঞাসা–৫৪৯: আসসালামু আলাইকুম। প্রশ্নের জবাবটা খুবই জরুরী। শীঘ্রই জানা দরকার। দয়া করে জানিয়ে উপকার করবেন। আমি একটা কোচিং এ ক্লাস নেই। এতদিন মেয়েদের ক্লাস নিতাম। চেষ্টা করতাম যারা পুরুষ টিচার তাদের সাথে যতটা সম্ভব কম কথা বলা যায়। আমি পূর্ণ পর্দা করার চেষ্টা করি। হাত মোজা,পা মোজা,নেকাব পড়েই ক্লাস নেই। যতক্ষণ বাসার বাহিরে থাকি এভাবেই থাকি। আমার ক্লাস না নিয়ে উপায় নেই। চাকরিটা করতেই হয়। এখন এ মাস থেকে একটা ব্যাচ,কোচিং এই ১ ঘন্টা করে সপ্তাহে দুইদিন পড়াতে বলসে না করার উপায় নাই। হয়ত চাকরিই থাকবেনা। আমার জানা নাই। ওরা কলেজে পড়ে। বড় বড় ছেলে। আমি ওদের ক্লাস নিলে আমার কন্ঠের পর্দা থাকেনা। আমি খুবই অনুতপ্ত হই। কিন্তু… আমি এক্ষেত্রে কি করতে পারি? ওদের ক্লাস নেয়াতে কি আমি অনেক গুনাহগার হব? যেসব ক্লাসে ছেলে মেয়ে একসাথে পড়ে,আমি কি তাদের পড়াতে পারব? আমি ঐ ছেলেদের ক্লাস নিলে আমার সেলারি কি হালাল হবে? প্লীজ প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন। খুব দরকার জানা।– Ahona

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক- নারী-পুরুষের মিশ্রিত পরিবেশে কাজ করতে গেলে পর্দাহীনতা, পারস্পরিক সহাবস্থান, অন্তরের আকর্ষণসহ সমূহ ফেতনার আশঙ্কা প্রবল থাকার কারণে ওলামায়ে কেরাম এজাতীয় পরিবেশে কাজ করাকে নাজায়েয বলেছেন। ফাতাওয়াতুল লাজনাতিতদ্দায়িমা (১২/১৫৬)-তে এসেছে,

الاختلاط بين الرجال والنساء في المدارس أو غيرها من المنكرات العظيمة ، والمفاسد الكبيرة في الدين والدنيا ، فلا يجوز للمرأة أن تدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ও অন্যান্য স্থানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান ঘটলে দীন ও দুনিয়ার ক্ষেত্রে বড় বড় ফেতনা-ফ্যাসাদ ও পাপাচার সংঘটিত হবে। সুতরাং নারীর জন্য জায়েয নয় নারী-পুরুষের মিশ্রিত পরিবেশে শিক্ষকতা কিংবা চাকুরি করা। আর অভিবাবকের জন্য জায়েয নয় তাকে এর অনুমতি দেয়া।

দুই- প্রিয় বোন, সুতরাং আপনি যদি শিক্ষকতা করতে চান তাহলে এমন পরিবেশ গ্রহণ করুন, যেখানে মেয়েদের আলাদা ব্যবস্থা আছে। অন্যথায় এ চাকরি ছেড়ে দিন। কারণ, পার্থিব লাভালাভ অর্জনের চাইতে দীনদারি রক্ষা করার গুরুত্ব অবশ্যই বেশি। যদি এমনটি করতে পারেন তাহলে আল্লাহ তাআলা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন,

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا . وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ

আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। (সূরা তালাক ২,৩)

আমরা এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা ইতিপূর্বে জিজ্ঞাসা নং–৫০৮-এ করেছি।

তিন- আর যদি আপনি উক্ত মিশ্রিত পরিবেশে শিক্ষকতা করতেই চান কিংবা এ ছাড়া যদি আপনার প্রয়োজন পূরণের ফেতনামুক্ত বিকল্প ব্যবস্থা না থাকে তাহলে আপনার প্রতি আমাদের পরামর্শ হল,

১- উক্ত পরিবেশে আল্লাহ তাআলাকে যথাসাধ্য ভয় করে চলবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)

২- পর্দা পালন, নেকাব পরিধান, হাত মোজা পরিধান, নির্জনবাস না ঘটা, ছেলেদের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা-সহ ইত্যকার শরিয়তের যাবতীয় বিধান মেনে চলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবেন।

৩- পরপুরুষের সঙ্গে প্রয়োজনে কথা বলার ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হল, কণ্ঠস্বর কঠোর রাখা, সুমিষ্ট মোলায়েম স্বরে না বলাl কেননা আল্লাহ তালা বলেন,

فَلا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الََّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلا مَعْرُوفًا

তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। (সুরা আহযাব৩২)

উক্ত আয়াতের তাফসিরে আছে, আয়েশা রাযি. এর নিকট মাসয়ালা বা হাদিসের প্রয়োজনে অন্যান্য সাহাবীগণ আসলে, তিনি কণ্ঠ বিকৃত করে কথা বলতেন যেন কারো অন্তর ব্যাধিগ্রস্থ না হয় l (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)

প্রিয় বোন, আপনার প্রশ্নের বিবরণ থেকে বুঝা যাচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ, যদিও আপনি আমাদের প্রথম দুই পরামর্শ মেনে চলেন তবে শেষোক্ত পরামর্শের ওপর আপনার আমল আছে কিনা; আমরা তা জানিনা। তাই  শেষোক্ত পরামর্শের ওপর আমল করার প্রতি আপনার বিশেষ মনোযোগ কামনা করছি। আমরা আশা করছি, এভাবে চলতে পারলে এবং ফেতনামুক্ত থাকতে পারলে আপনার উক্ত চাকরির বেতন হালাল হবে।

আল্লাহ তাওফিকদাতা।

الله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 5 =