পীরের পায়ে সিজদা করা ইসলামে গ্রহণযোগ্য কিনা?

জিজ্ঞাসা–৭৩৭: পীরের পায়ে সিজদা করা ইসলামে গ্রহণযোগ্য কিনা?–শেখ ফরিদ। 

জবাব: প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, সিজদার উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহ তাআলা। উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা যাবে না। কেননা, অন্য কাউকে সিজদা ভক্তির উদ্দেশ্যে হলে হারাম হবে। আর ইবাদতের উদ্দেশ্যে হলে সে মুশরিক হয়ে যাবে। এর দলিল হল,

১- আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا

নিশ্চয়ই সিজদার স্থানসমূহের মালিক আল্লাহ তাআলা। অতএব তোমরা তার সাথে কারো ইবাদত করো না। (সূরা জিন ১৮)

উক্ত আয়াতের তাফসিরে বিশিষ্ট তাবিঈ সাঈদ ইবনু জুবাইর রহ. বলেন, نزلت في أعضاء السجود ، أي : هي لله فلا تسجدوا بها لغيره ‘উক্ত আয়াতের সিজদার স্থানসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য সিজদার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। অর্থাৎ এগুলোর মালিক আল্লাহ। অতএব এগুলো দ্বারা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সিজদা করো না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৬৭৬)

২- আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ আওফা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

لَمَّا قَدِمَ مُعَاذٌ مِنَ الشَّامِ سَجَدَ لِلنَّبِيِّ ، قَالَ: مَا هَذَا يَا مُعَاذُ ؟ قَالَ : أَتَيْتُ الشَّامَ فَوَافَقْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِأَسَاقِفَتِهِمْ وَبَطَارِقَتِهِمْ ، فَوَدِدْتُ فِي نَفْسِي أَنْ نَفْعَلَ ذَلِكَ بِكَ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ : فَلَا تَفْعَلُوا ، فَإِنِّي لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِغَيْرِ اللَّهِ ، لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا

মুআয রাযি. সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নবী -কে সিজদা করেন। নবী বলেনঃ হে মু‘আয! এ কী? তিনি উত্তর দিলেন, আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পাই যে, তথাকার লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শাসকদেরকে সিজদা করে। তাই আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম যে, আমি আপনার সামনে তাই করবো। তখন রসূলুল্লাহ বললেন, তোমরা তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ ছাড়া অপর কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে। (ইবনু মাজাহ ১৮৫৩ বাইহাকি ১৪৭১১)

৩- কায়স ইবন সা‘দ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَتَيْتُ الْحِيرَةَ فَرَأَيْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِمَرْزُبَانٍ لَهُمْ  فَقُلْتُ : رَسُولُ اللَّهِ أَحَقُّ أَنْ يُسْجَدَ لَهُ ، فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ فَقُلْتُ : إِنِّي أَتَيْتُ الْحِيرَةَ فَرَأَيْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِمَرْزُبَانٍ لَهُمْ ، فَأَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ أَحَقُّ أَنْ يُسْجَدَ لَكَ ، فقَالَ :  لَا تَفْعَلُوا، لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ ، لَأَمَرْتُ النِّسَاءَ أَنْ يَسْجُدْنَ لِأَزْوَاجِهِنَّ ، لَمَا جَعَلَ اللَّهُ لَهُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ حَقٍّ

আমি হিরা শহরে আগমন করে সেখানকার লোকদেরকে মারযুবানকে সিজদা করতে দেখি। আমি (মনে মনে) বলি, রাসূল -ই তো সিজদার অধিকতর হকদার। তিনি বলেন, আমি নবী করীম -এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বলি, আমি হিরাতে গমন করে সেখানকার লোকদেরকে মারযুবানকে সিজদা করতে দেখেছি। আর হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আপনিতো এর অধিক হকদার যে, আমরা আপনাকে সিজদা করি? উত্তরে তিনি বলেন, তুমি বল, যদি (আমার ইন্তেকালের পর) তুমি আমার কবরের পাশ দিয়ে গমন কর, তবে কি তুমি সেখানে সিজদা করবে? তিনি বলেন, আমি বললাম, না। তিনি বলেন, তোমরা সেরূপ করবে না। আর যদি আমি কাউকে সিজদা করতে বলতাম, তবে আমি স্ত্রীলোকদেরকে তাদের স্বামীদেরকে সিজদা করতে বলতাম। আর তা এইজন্য যে, আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে (স্বামীকে) তাদের (স্ত্রীদের) উপর হক প্রদান করেছেন। (আবুদাউদ ২১৪০ মুসতাদরাক হাকিম ২৭৬৩)

৪- আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ دخل حَائِطًا مِنْ حَوَائِطِ الأَنْصَارِ ، فَإِذَا فِيهِ جَمَلانِ يَضْرِبَانِ وَيَرْعَدَانِ فَاقْتَرَبَ رَسُولُ اللهِ مِنْهُمَا ، فَوَضَعَا جِرَانَهُمَا بِالأَرْضِ ، فَقَالَ مَنْ مَعَهُ : سَجَدَ لَهُ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ : مَا يَنْبَغِي لأَحَدٍ أَنْ يَسْجُدَ لأَحَدٍ ، وَلَوْ كَانَ أَحَدٌ يَنْبَغِي أَنْ يَسْجُدَ لأَحَدٍ لأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا لِمَا عَظَّمَ اللَّهُ عَلَيْهَا مِنْ حَقِّهِ

রাসুলুল্লাহ এক আনসারির বাগানে প্রবেশ করলেন, তখন সেখানে দুটি উট লড়াই করছিল এবং কাঁপছিল। রাসুলুল্লাহ তাদের নিকটে গেলেন তখন উট দুটি তাদের ঘাড় জমিনে ঝুঁকিয়ে দিল। সঙ্গের লোকটি বলে উঠলেন, উট আপনাকে সিজদা করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ বললেন, যদি কেউ কাউকে সিজদা করার অনুমতি থাকত তাহলে আমি স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার। তা এইজন্য যে, আল্লাহ্ তাআলা স্বামীর হক স্ত্রীর উপর অনেক বড় করেছেন। (সহিহ ইবন হিব্বান ৪১৬২)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

১ টি মন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six − five =