পেশাব ঝরার ব্যপারে সন্দেহ হলে কী করণীয়?

জিজ্ঞাসা–৩২৫: সন্দেহ হয় যে প্রসাব পড়েছে, কিন্তু লক্ষ্য করে দেখা যায়, মাঝে মধ্যে সন্দেহ সত্য হয় আবার মাঝে মধ্যে সন্দেহ মিথ্যা হয়। অনেক সময় দেখা যায় যে, ১০-২০ মিনিট পরে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এখন আমার কী করণীয়? অনুরোধ রইল। মেইলেও উত্তর পাওয়ার আশা করছি।–ইরফানুল কাদের।

জবাব: প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, পাক-নাপাকের ব্যাপারে মূলনীতি হল, যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে নাপাক হওয়ার বিষয়টি জানা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কোনো জিনিসকে নাপাক বলা যায় না। (হিন্দিয়া: ১/৪৫)

সুতরাং আপনার করণীয় হল–

১. পেশাব করার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না, বরং পেশাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন, অতঃপর পানি দ্বারা পেশাবের স্থান ধৌত করবেন। হাদীস শরিফে এসেছে,

عَنْ عِيسَى بْنِ يَزْدَادَ الْيَمَانِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ إِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلْيَنْتُرْ ذَكَرَهُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ

ঈসা ইবন ইয়াযদাদ আলইয়ামানী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে, তখন সে যেন তার লজ্জাস্থানকে তিনবার ঝেড়ে নেয় বা পবিত্র করে নেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩২৬)

২. এরপরও যদি কোন কিছুর আশঙ্কা থাকে, তাহলে লজ্জাস্থানের আশপাশে লুঙ্গি বা পায়জামায় পানি ছিটিয়ে দিবেন। কারণ রাসূল থেকে বর্ণিত, بَالَ ثم نَضحَ فَرْجَه  তিনি পেশাব করেছেন, তারপর লজ্জাস্থানে পানি ছিটিয়ে দিয়েছেন। (আবু দাউদ: ১৬৭ )

৩. এরপর যতই সন্দেহ হোক সেদিকে মোটেই ভ্রুক্ষেপ করবেন না। আপনি নিশ্চয়তার উপর নির্ভর করবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি পেশাবের ব্যপারে নিশ্চিত হবেন না ততক্ষণ পর্যন্ত কেবল সন্দেহের বশে পেশাব বের হয়েছে বলা যাবে না। হাদীস শরিফে এসেছে,

রাসূলুল্লাহ -কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, হে আল্লাহর রাসূল, যদি কোন ব্যক্তি সন্দেহ করে যে, তার নামাযে কিছু বের হয়েছে। উত্তরে তিনি বলেন, لَا يَنْصَرِفْ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا নামায ছেড়ে দিবে না, যতক্ষণ না সে আওয়াজ শোনে, অথবা গন্ধ পায়। (বুখারী: ১৩৭)

এ হাদিস থেকে আমাদের বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ পেশ করার প্রক্রিয়া হচ্ছে–এখানে রাসূলুল্লাহ নিশ্চয়তার উপর নির্ভর করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সন্দেহের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে নামায ত্যাগ করা থেকে নিষেধ করেছেন। অনুরূপভাবে পবিত্রতার ক্ষেত্রেও অযু করার পর কোনো কিছু অনুভূত হলে, সে দিকে ভ্রুক্ষেপ করবেন না। বরং ততক্ষণ পর্যন্ত  নিজেকে পবিত্রই মনে করবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত স্বচোখে কোনো কিছু দেখবেন না অথবা পেশাবের ব্যপারে নিশ্চিত হবেন না। কারণ, কিছু বের না হওয়াটাই মূল।

মনে রাখবেন, এই সন্দেহ নিশ্চয়ই শয়তানের পক্ষ থেকে ওয়াসওয়াসা। কিছুদিন এভাবে করলে ওয়াসওয়াসা দূর হয়ে যাবে- ইনশাআল্লাহ।

والله أعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন

আরো পড়ুন:

 ইস্তিঞ্জার (পেশাব-পায়খানার) নিয়ম কি?
 শিশুর পেশাব নাপাক কিনা?
 পেশাবের শুকিয়ে যাওয়া স্থানে ভেজা পা পড়লে তার হুকুম কি?
কয় দিক ফিরে পেশাব করা নিষেধ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × four =