ফেসবুকীয় গুনাহ থেকে তাওবা করেছি তবে…

জিজ্ঞাসা–২৯৬: কেউ যদি তাওবাহ করে কিন্তু ফেসবুকে তার আগের বেপর্দা ছবি আছে যা ডিলিট করা সম্ভব হয় নি এমতাবস্থায় কি গুনাহে জারিয়া হতে থাকবে?–আলিশা তাউফাজ

জবাব:

এক. প্রিয় দীনী বোন, ফেসবুকে আগের বেপর্দা ছবি ডিলিট করা সম্ভব হচ্ছে না বলে গুনাহে জারিয়া হতে থাকবে- এজাতীয় হতাশায় না ভুগে বরং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। কেননা, এখন আল্লাহ তাআলার নির্দেশ এটাই। আল্লাহ তাআলা বলেন,

قُلْ يَا عِبادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلى أَنْفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

‘বলে দাও, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর সীমালংঘন করেছে, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করেন। তিনি তো অতি ক্ষমাশীল বড় মেহেরবান।’ (সূরা যুমার : ৫৩)

মনে রাখবেন, لاَ يُكَلِّفُ اللّهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না।’ (সুরা বাকারা :২৮৬)

দুই. হতাশ না হয়ে বরং তাওবা-ইস্তেগফার অব্যাহত রাখুন। কারণ,এটাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য যে, সে তার গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়, আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহর কাছে তাওবা করে। আল্লাহ মুমিনের এ গুণের কথা কুরআনে বর্ণনা করেছেন এভাবে-

وَالَّذِينَ إِذا فَعَلُوا فاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ اللَّهُ

‘এবং তারা সেই সকল লোক, যারা কখনও কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা (অন্য কোনওভাবে) নিজেদের প্রতি জুলুম করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে- আর আল্লাহ ছাড়া আর কেইবা আছে, যে গুনাহ ক্ষমা করতে পারে? ’ (সূরা আলে ইমরান : ১৩৬)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,ما أصر من استغفر অর্থাৎ যে বান্দা গোনাহ থেকে ইসতিগফার করতে থাকে সে গোনাহের উপর জমে আছে বলে গণ্য হবে না। (আবু দাউদ : ১৫১৪)

তিন. প্রিয় দীনী বোন, পরিশেষে উপহার হিসেবে আপনার জন্য একটি হাদীস পেশ করছি। আশা করি, চমৎকৃত হবেন এবং স্বস্তির স্নিগ্ধ পরশ অনুভব করবেন। হাদীসে কুদসীতে ইরশাদ হয়েছে-

قَالَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلَا أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ، وَلَا أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً.

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বনী আদম! তুমি যত গুনাহই কর, যতক্ষণ আমাকে ডাকতে থাকবে এবং আমার কাছে (ক্ষমার) আশা রাখবে আমি তোমার পূর্বের সব (গুনাহ) মাফ করে দিব, কোনো পরোয়া করব না। হে বনী আদম! তোমার গুনাহ যদি (এত বেশি হয় যে তা) আকাশের মেঘমালা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অতপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি ক্ষমা করে দিব, কোনো পরোয়া করব না। হে বনী আদম! যদি তুমি শিরিক থেকে বেঁচে থাক, আর পৃথিবী-ভরা গুনাহও নিয়ে আস তাহলে আমি ঐ পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব। (জামে তিরমিযী : ৩৫৪০)

والله اعلم بالصواب

আরো পড়ুন: ফেসবুকে পরনারীর সঙ্গে কথা বলা জায়েয আছে কি?

আরো পড়ুন: গুনাহ ছাড়তে পারি না-কী করব?

আরো পড়ুন: খুন বা ধর্ষণ করার পর কি তাওবা করা যায়?

আরো পড়ুন: হস্তমৈথুন: এই নেশা থেকে মুক্তি পাবেন কিভাবে?

আরো পড়ুন: ব্যভিচার থেকে তাওবা এবং ব্যভিচারীর শাস্তি

আরো পড়ুন: সহশিক্ষার পরিবেশে নিজেকে রক্ষা করব কিভাবে?

আরো পড়ুন: দৃষ্টির হেফাযত করতে পারি না-কী করব?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − 9 =