বদ নজর বা নজর লাগা কি? এটা কি কোন কুসংস্কার?

জিজ্ঞাসা–২৬৩: আসসালামু আলাইকুম। বদ নজর/নজর লাগা কি? এটা কি কোন কুসংস্কার?– Nomam :fjarfim1205@gmail.com

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

না, এটা কুসংস্কার নয়; বরং বদ নজরের প্রভাব সত্য। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-
وَإِنْ يَكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُ لَمَجْنُونٌ
আর কাফিররা যখন উপদেশবাণী শুনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়ে ফেলবে, আর তারা বলে, ‘এ তো এক পাগল’।   (সূরা আল-কলম ৫১)
হাফেজ ইবনে কাসীর রহ. ইবনে আব্বাস রাযি. এবং মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, (لَيُزْلِقُونَكَ) “তোমার প্রতি বদনজর দিবে।” অর্থাৎ তারা তোমাকে হিংসার প্রতিফলন ঘটিয়ে রুগী বানিয়ে দিবে যদি আল্লাহর তোমার প্রতি হেফাযত না থাকে। আয়াতটি প্রমাণ বহন করে যে, বদনজরের কুপ্রভাবের বাস্তবতা রয়েছে, আল্লাহর হুকুমে।যেমন এ ব্যাপারে হাদীসও রয়েছে।  (তাফসীর ইবনে কাসীর ৪/৪১০)

ইমরান ইবন হুসায়ন রাযি. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,لاَ رُقْيَةَ إِلاَّ مِنْ عَيْنٍ أَوْ حُمَةٍ ‏‏ বদ নযর অথবা জ্বর ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে ঝাড়-ফুঁক নেই। (তিরমিযি ২০৬৩)

অপর হাদিসে এসেছে, আবি সাঈদ রাযি.থেকে বর্ণিত, জিবরীল আ. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে বললেন, ইয়া মুহাম্মদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (জিবরীল) বললেন,    بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি, সে সব জিনিস থেকে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়, সব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নযর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি।  (মুসলিম ৫৫১২)
উল্লেখ্য, বদ নজর লাগার আগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়াতে কোন দোষ নেই। এটা আল্লাহর উপর ভরসা করার পরিপন্থীও নয়। কারণ আল্লাহর উপর পরিপূর্ণভাবে ভরসার স্বরূপ হল বান্দা বৈধ উপকরণ অবলম্বন করে বদনজর ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে এবং সেই সাথে আল্লাহর উপর ভরসা করবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ  হাসান ও হুসাইন রাযি.-কে এই বাক্যগুলো দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করতেন,  ‏ أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍঅর্থাৎ, আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহ্‌র কালামের আশ্রয়ে রাখতে চাই সব ধরনের শয়তান হতে, কষ্টদায়ক বস্তু হতে এবং সব ধরনের বদ-নজর হতে।

(দোয়াটি এক সন্তানের জন্য পড়লে ‘উয়ীযুকা’, দুইজনের জন্য ‘উয়ীযুকুমা’ আর দুইয়ের অধিক হলে ‘উয়ীযুকুম’ বলতে হবে। ) (বুখারী ৩৩৭১)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
umyrkobbadi@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 3 =