বর্তমানে কারো নাম ইসরাইল রাখা যাবে কি?

জিজ্ঞাসা–১২০৮: আসসালামুয়ালাইকুম। আমার নাম ইসরাইল। আমার প্রশ্ন হল, আমারে ইসরাইল নামে অনেকেই ব্যঙ্গাত্মকভাবে ডাকে যেমন আজরাঈল। এতে আমি মনে কষ্ট পাই। এখন আমি কি করব? ইসরাইল কি সুন্দর নাম নাকি সুন্দর নয়?–মোহাম্মদ ইসরাইল ফকির রবিন।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. আল্লাহ তাআলার নবী ইয়াকুব আ.-এর নাম ছিল ইসরাইল। কুরআন মজিদের দুই জায়গায় ইয়াকুব আ.-এর নাম ইসরাইল বলা হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন,

كُلُّ الطَّعَامِ كَانَ حِـلاًّ لِّبَنِي إِسْرَائِيلَ إِلاَّ مَا حَرَّمَ إِسْرَائِيلُ عَلَى نَفْسِهِ مِن قَبْلِ أَن تُنَزَّلَ التَّوْرَاةُ قُلْ فَأْتُواْ بِالتَّوْرَاةِ فَاتْلُوهَا إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

তওরাত নাযিল হওয়ার পূর্বে ইসরাইল (ইয়াকুব আ.) যেগুলো নিজেদের জন্য হারাম করে নিয়েছিলেন, সেগুলো ব্যতীত সমস্ত আহার্য বস্তুই বনী-ইসরাইলদের জন্য হালাল ছিল। আপনি বলে দিন, তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক। তাহলে তওরাত নিয়ে এসো এবং তা পাঠ কর। (সুরা আলি-ইমরান ৯৩)

দ্বিতীয় আয়াতটি সূরা মারইয়ামের ৫৮ নং আয়াত। (সিজদার আয়াত হেতু উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম।)

যার কারণে ইসরাইল নামে মুসলিম শিশুদের নামকরণ মুসলিম সমাজে কোনো যুগেই দোষের মনে করা হয় নি; বরং একজন সম্মানিত নবীর নাম হিসেবেই বিবেচিত হয়ে এসেছে। এমনকি হাদিস বর্ণনাকারী মুহাদ্দিসদের মধ্যেও এই নাম পাওয়া যায়। যেমন সিহাহ সিত্তার একজন প্রসিদ্ধ রাবীর (হাদিস বর্ণনাকারী) নাম ছিল ইসরাইল ইবন ইউনুস ইবনু আবু ইসহাক আসসাবিঈ। (সিয়ারু আ’লামিননুবালা ৭/৩৫৫)

সুতরাং উক্ত বিবেচনায় কারো নাম যদি ইসরাইল রাখা হয় তাহলে এটা মোটেই দোষের নয়; বরং নবীগণ ও রাসূলগণের নামে নাম রাখা নিঃসন্দেহে বরকতয়।

দুই. তবে এই যুগে এই নাম রাখা উচিত নয়। কেননা, এই নামে নামকরণ করলে মানুষ তাকে নিয়ে উপহাস করার সুযোগ পাবে এবং বহু গুনাহর দরজা খুলে যাবে। এর কারণ হল, বর্তমানে মানুষ ইসরাইল শব্দ দ্বারা ইয়াকুব আ.-কে কম জানে। বরং দুঃখজনকভাবে বর্তমানে নামটি বেশি পরিচিত এমন এক রাষ্ট্রের নামে যেটি বিশ্ব-মানচিত্রের জন্য কলঙ্ক এবং জায়নবাদীয় সন্ত্রাসী গ্যোষ্ঠী কতৃক পরিচালিত। ফলে এখন এই নামটিই কেমন যেন মানুষের কাছে তিক্ত ও ঝাঁঝালো হয়ে গিয়েছে বিধায় এই নামে কাউকে দেখলে সে মানুষের কাছে উপহাসের পাত্র হয়ে যাওয়ার সমূহ আশংকা রয়েছে। অথচ নাম নিয়ে ব্যঙ্গ বা ট্রল করা কবিরা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ

তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। (সূরা হুজুরাত ১১)

সুতরাং প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, উক্ত নাম পরিবর্তন করে নিজের জন্য এমন একটি নাম রাখাটাই আপনার জন্য শ্রেয় ও নিরাপদ হবে, যা হবে শ্রুতিমধুর অর্থপূর্ণ ও বরকতময়।

নিশ্চয় আল্লাহ তাওফিকদাতা।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × five =