বার বার ওমরাহ্‌ করা উত্তম না সাদকা করা উত্তম?

জিজ্ঞাসা–২০০: আসসলামু আলাইকুম। হুজুর,আমি ফরজ হজ্জ সম্পাদন করেছি। আমার বৎসরান্তে কিছু টাকা জমে। এই খরচের অতিরিক্ত টাকাটা দিয়ে আমি এবার রমজানে পবিত্র ওমরাহ্ পালন করতে এসেছি এবং চিন্তা করেছি এভাবে প্রতি বছর ওমরাহ্ হজ্জ করব, ইনশা আল্লাহ। আমার বড় ভাই আমাকে বলেন, এভাবে ওমরাহ্ না করে টাকাটা গরীব আত্মীয়দের মাঝে বিতরন করে দাও। সেটা ভাল হবে। এব্যাপারে আপনার উপদেশ চাই।–Mohammad Alamgir Khan

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله

এক- প্রিয় দীনি ভাই, আমাদের যাবতীয় আমলের মূল উদ্দেশ্যতো হল, আল্লাহ তাআলাকে খুশি করা। সুতরাং আমাদের উচিত এমন আমলের তাওফিক কামনা করা যাতে তিনি অধিক খুশি হন। এজন্যই রাসূল ﷺ আল্লাহর দরবারে এ বলে প্রার্থনা করতেন-اللهم إني أسألك حبك وحب من يحبك، وحب العمل الذي يبلغني حبك، اللهم اجعل حبك أحب إلي من نفسي وأهلي ومن الماء البارد “হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট তোমার মহব্বত কামনা করি, তোমাকে যে মহব্বত করে, তার মহব্বত কামনা করি এবং যে আমল তোমার মহব্বত পর্যন্ত পৌছায়, সে আমল কামনা করি। হে আল্লাহ! তোমার মহব্বতকে আমার নিকট আমার জান-মাল, পরিবার-পরিজন এবং ঠাণ্ডা পানি হতে অধিক প্রিয় করে দাও।”

দুই- অনেক সময় এমন হয় যে, আল্লাহ তাআলা কোনো আমলকে অন্যান্য আমলের তুলনায় অধিক পসন্দ করেন মানুষের অবস্থার কিংবা সময়ের ভিন্নতার কারণে। এজন্য আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ. ‘মাদারেজুস সালেকীন’ গ্রন্থে লেখেন, “মনে রাখবে, সর্বাবস্থায় এবং সব জায়গায় উত্তম হল, ঐ অবস্থা ও সময়ের মধ্যে কোন কাজটি করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মহব্বত অর্জন করা যায়, তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা এবং ঐ সময়ের দাবি ও চাহিদা অনুযায়ী সে আমল করা যে আমলে আল্লাহ্ তা‘আলা  অধিক রাজি-খুশি ও সন্তুষ্ট হন।”
তিন-প্রিয় দীনি ভাই, হাদিসে হজ-ওমরাহ বার বার করার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, যেমন-

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ ‏‏ ‏

আবদুল্লাহ ইবন মাসুদ রাযি. বর্ণনা করেন যে,  তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা হজ ও ওমরা একটার পর অপরটা কর; কারণ এ দুটো আমল দারিদ্র ও গুনাহ বিদূরিত করে দেয়। যেমন ভাটার আগুনে লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা-জং দূরিভূত হয়ে থাকে। একটি কবুল হজ্জের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। ( ইবনু মাজাহ ২৮৮৭, তিরমিজী ৮১০ )

অনরূপভাবে হাদিসে সদকা করার প্রতিও উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন-

أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ مَا تَصَدَّقَ أَحَدٌ بِصَدَقَةٍ مِنْ طَيِّبٍ وَلاَ يَقْبَلُ اللَّهُ إِلاَّ الطَّيِّبَ إِلاَّ أَخَذَهَا الرَّحْمَنُ بِيَمِينِهِ وَإِنْ كَانَتْ تَمْرَةً تَرْبُو فِي كَفِّ الرَّحْمَنِ حَتَّى تَكُونَ أَعْظَمَ مِنَ الْجَبَلِ كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ أَوْ فَصِيلَهُ

আবূ হুরাইরা রাযি. বর্ণনা করেন যে,  তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমাদের কেউ যখন হালাল ও পবিত্র মাল থেকে সাদাকা দেয় আর আল্লাহ্ তো পবিত্র ও হালাল ছাড়া কিছুই গ্রহণ করেন না। তখন দয়াময় তাঁর ডান হাতে তা গ্রহণ করেন। একটি খেজুর হলেও তা দয়াময়ের হাতের তালুতে বৃদ্ধি পেতে থাকে, এমনকি তা পাহাড় থেকে বিরাট হয়, যেমন তোমাদের তত্ত্বাবধানে তোমাদের ঘোড়া বা গাভীর বাচ্চা বৃদ্ধি পেতে থাকে।(তিরমিজী ৬৬১)

সুতরাং বার বার ওমরাহ্‌ করা এবং সদকা করা উভয়টিই আল্লাহ তাআলার পসন্দনীয় আমল। তবে কোনটি তাঁর কাছে বেশি পসন্দের–এটা নির্ভর করবে অবস্থা ও সময়ের উপর। আল্লাহ তাআলা আপনাকে ‘বিবেক-বুদ্ধি’ নামক নেয়ামত দিয়েছেন,আপনি নিজেই বিবেচনা করুন; উক্ত দুই আমলের মধ্যে কোন আমলটি করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন বেশি উদ্দেশ্য হবে, তাঁঁকে বেশি রাজি-খুশি করা যাবে এবং অন্তরকে মানুষের দৃষ্টি হতে সম্পূর্ণ খালি রাখা যাবে। তারপর সেই আমলটিকে প্রাধান্য দিন এবং আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির আশা রাখুন।

আল্লাহই তাওফিকদাতা।

والله اعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 − three =