মৃত মানুষের কাছে মাফ চাওয়ার কোনো উপায় আছে কি?

জিজ্ঞাসা–১১২৬: মৃত মানুষের কাছে মাফ চাওয়ার কোনো উপায় আছে?–নাজমুল আহসান রুহান।

জবাব:

এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, মৃত মানুষের কাছে মাফ চাওয়ার কোনো উপায় আছে কি–আপনার উক্ত প্রশ্ন দ্বারা নিম্নোক্ত হাদিসটির গুরুত্ব আরো বেশি অনুধাবনযোগ্য হয়ে উঠেছে। রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لأَحَدٍ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَىْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ، قَبْلَ أَنْ لاَ يَكُونَ دِينَارٌ وَلاَ دِرْهَمٌ، إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ، وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْهِ

যে ব্যক্তি তার (কোন মুসলিম) ভাইয়ের উপর তার সম্ভ্রম অথবা কোন বিষয়ে জুলুম করেছে, সে যেন আজই (দুনিয়াতে) তার কাছে (ক্ষমা চেয়ে) হালাল করে নেয়, ঐ দিন আসার পূর্বে (কেয়ামতের দিন) যেদিন দীনার ও দিরহাম কিছুই থাকবে না। তার যদি কোন নেক আমল থাকে, তবে তার জুলুমের পরিমাণ অনুযায়ী তা হতে নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি তার নেকী না থেকে, তবে তার (মজলূম) সঙ্গীর পাপরাশি নিয়ে তার (জালেমের) উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী ২৪৪৯, ৬৫৩৪ মুসনাদে আহমাদ ৯৩৩২, ১০১৯৫)

এ মর্মে আরেকটি হাদিস, জাবির রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

اَ يَنْبَغِي لأَحَدٍ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ وَأَحَدٌ مِنْ أَهْلِ النَّارِ يَطْلُبُهُ بِمَظْلَمَةٍ، وَلاَ يَنْبَغِي لأَحَدٍ مِنْ أَهْلِ النَّارِ يَدْخُلُ النَّارَ وَأَحَدٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ يَطْلُبُهُ بِمَظْلَمَةٍ، قُلْتُ‏:‏ وَكَيْفَ‏؟‏ وَإِنَّمَا نَأْتِي اللَّهَ عُرَاةً بُهْمًا‏؟‏ قَالَ‏:‏ بِالْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ‏

কোন জান্নাতবাসী জান্নাতেতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ তার উপর কোন জাহান্নামবাসীর কোন দাবি অবশিষ্ট থাকবে। আর কোন জাহান্নামবাসীও জাহান্নাম প্রবেশ করবে না যতক্ষণ তার উপর কোন জান্নাতবাসীর কোন দাবি অবশিষ্ট থাকবে। আমি বললাম, সে দাবি কিভাবে মিটমাট করবে, যেখানে আমরা সকলে উত্থিত হবো আল্লাহর সমীপে সহায়-সম্বলহীনভাবে? তিনি বলেন, নেকী এবং গুনাহ দ্বারা। (আল-আদাবুল মুফরাদ ৪৮৯)

এ মর্মে আরো হাদিস রয়েছে, যেগুলো আমাদেরকে এই স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, মূলত কারো সঙ্গে অন্যায় করে ফেললে সে জীবিত থাকা অবস্থাতেই তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হয় কিংবা সে জীবিত থাকা অবস্থায় অন্য বৈধ পন্থায় তার হক তাকে বুঝিয়ে দিতে হয়। কেননা, প্রথমত, এটা বান্দার হক; যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মাফ না করলে আল্লাহ তাআলা মাফ করেন না। দ্বিতীয়ত, যার হক নষ্ট করা হয়েছে, সে যদি মারা যায় তাহলে যেহেতু সে আর জীবিতদের কথা শুনতে পায় না, সেহেতু তার কাছে মাফ চাওয়ার বিষয়টি আরো বহু গুণে জটিল হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَا أَنتَ بِمُسْمِعٍ مَّن فِي الْقُبُورِ

আপনি কবরে শায়িতদেরকে শুনাতে সক্ষম নন। (সুরা ফাতির ২২)

দুই. পক্ষান্তরে কোনো ব্যক্তি যদি যার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে, সে মারা যাওয়ার কারণে কিংবা অন্য কোনো কারণে তাকে না পায়, তাহলে প্রায়শ্চিত্তের জন্য যা করবে তাহল–

১. উক্ত গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে লজ্জিত হয়ে তাওবা করবে এবং অধিকহারে ইস্তেগফার করবে।

২. যার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে তার জন্যও বেশি হারে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, দোয়া করবে।

৩. যথা সম্ভব তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করবে, সামর্থ্য থাকলে তার পক্ষ থেকে হজ-উমরাহ বা কুরবানি করবে কিংবা যদি সে ঋণগ্রস্থ হয় তাহলে তার ঋণ পরিশোধ করে দিবে।

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, উক্ত পরামর্শগুলো যদি মেনে চলা যায় তাহলে আশা করি, আল্লাহ তাআলাও তাকে ক্ষমা করে দিবেন।

আপনি জিজ্ঞাসা নং ৫২৮ পড়ে নিন, তাহলে এবিষয়ে আরো কিছু জানতে পারবেন।

আল্লাহ তাওফিকদাতা।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × three =