মোহর কিস্তিতে পরিশোধ করা এবং পরিশোধ করার আগে সহবাস করার হুকুম

জিজ্ঞাসা–১৫২৭: হুজুর, সামর্থ্য অনুযায়ী আস্তে আস্তে ভাগে ভাগে মোহরানা প্রদান করা যাবে কি। সেক্ষেত্রে পূর্ণ মোহরানা আদায় না হওয়া পর্যন্ত মেলামেশা করা যাবে কি। বিস্তারিত বুঝিয়ে বলবেন।–দ্বীন ইসলাম।

জবাব:

এক. মোহরের ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা হল, বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্ত্রীকে তা পরিশোধ করে দেওয়া এবং সহবাসের পূর্বে পরিশোধ করা। তবে স্বামীর কাছে নগদ না থাকলে যদি পরবর্তীতে পরিশোধের ইচ্ছা স্বামীর থাকে তাহলে স্ত্রীর কাছ থেকে সময় নেওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে বিয়ের দিনই পরিশোধের তারিখ ও পদ্ধতি নির্ধারণ করে নেয়া উচিত। যেমন, যদি ধীরে ধীরে কিস্তিতে পরিশোধ করার ইচ্ছা থাকে তাহলে তাও পরিষ্কার করে নিতে হবে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এধরণের মোহরকে مهر مؤجل (মোহরে মুয়াজ্জাল) বা ‘বাকি মোহর’ বলে।

দুই. যদি স্ত্রী মোহর প্রদান করা ছাড়াই সহবাসের অনুমতি প্রদান করে তাহলে কোন সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে স্ত্রী মোহর প্রদান করা ছাড়া প্রথম সহবাসের পূর্বে বাঁধা প্রদান করতে পারবে। কিন্তু একবার সহবাস হয়ে গেলে আর বাঁধা দিতে পারবে না। কিন্তু স্বামীর জিম্মায় মোহর আদায় না করলে তা ঋণ হিসেবে বাকি থেকে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

সুতরাং তাদের মধ্যে যাকে তোমরা গ্রহণ করবে তাকে তার নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোন অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা ২৪)

তিন. আমাদের সমাজে সাধারণত কোনো দিন-তারিখ নির্ধারণ না করে শুধু এটুকু বলে দেওয়া হয় যে, এই পরিমাণ মোহরে মুয়াজ্জাল (বাকি মোহর)। আর সামাজিক প্রচলন অনুযায়ী তার অর্থ দাঁড়ায়, তা পরিশোধ করা হবে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া হলে কিংবা স্বামী-স্ত্রী কারো মৃত্যু হলে। এটি একটি ভুল প্রচলন।

মনে রাখবেন, মোহর নির্ধারণের বিষয়টি নিছক কথার কথা বা ঐচ্ছিক কোনো আচার পালনের বিষয় নয়; বরং তা একটি ফরয বিধান ও গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনী দায়িত্ব, যা পূর্ণ মনোযোগ ও বিচার-বিবেচনার দাবি রাখে। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ লেনদেন। অতএব এর যাবতীয় দিক শরীয়ত অনুযায়ী ও পরিষ্কারভাবে হওয়া উচিত এবং সে হিসেবেই তা পরিশোধের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। এটি বড়ই অন্যায় কথা যে, সারা জীবন উদাসীন থেকে মৃত্যুশয্যায় স্ত্রীর নিকট মাফ চাওয়া হয়, যখন পরিস্থিতির চাপে স্ত্রীরও মাফ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

والله أعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three − two =