জিজ্ঞাসা–১৬০১: কেউ যদি প্র্যাকটিসিং হয় এবং তার পরিবার যদি তার পর্দা করায় বাঁধা দেয়, ফেবুতে তাকে না জানিয়ে ছবি দেয়, বিয়ের অনুষ্ঠানে হলুদসহ আরো বিভিন্ন কাজ যা ইসলামে স্বীকৃত নয় এমন কিছু করতে চায় তবে সেই মেয়েটার কি গুনাহ হবে খুব? তার পরিবার যদি তার কথা না বুঝতে চায়, তার ফ্রেন্ডরা যদি না বুঝতে চায় তার অনেক বুঝানোর পরেরও তাহলেও কি তার গুনাহ হবে? আর সে যদি বুঝাতে বুঝাতে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে বুঝানো অফ করে দেয় এতেও তার গুনাহ হচ্ছে? জানাবেন প্লিজ। জাযাকাল্লাহ।–নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
এক. প্রিয় প্রশ্নকারী দীনী বোন, আপনার পরিবারের যারা আপনাকে না জানিয়ে আপনার ছবি ফেসবুকে দেয় তারা হাদিসের ভাষ্য মতে দাইয়ুস। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
الدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ
ওই ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয় যে, তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়। (মুসনাদে আহমাদ ৫৩৭২)
ইবনু হাজার হাইথামি রহ. বলেন,
قال العلماء : الديوث الذي لا غيرة له على أهل بيته
আলেমগণ বলেছেন, দাইয়ুস বলা হয়, যে নিজের পরিবারের অশ্লীলতার ব্যাপারে দায়িত্ববোধহীন বা আত্মমর্যাদাহীন। (আযযাওয়াজির ২/৩৪৭)
দুই. আর আপনার প্রতি আমাদের পরামর্শ হল,
১. আপনার বাবা-মাকে এবং পরিবারের অন্যান্যকে হেকমত, বুদ্ধিমত্তা ও বিনয়ের সঙ্গে পর্দার গুরুত্ব, পর্দাহীনতার পরিণতি, বিজাতীয় সংস্কৃতি মেনে চলার ক্ষতি ও অশ্লীলতার কদর্যতা বিষয়ে অবহিতকরণ অব্যাহত রাখবেন। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম ৬)
২. অসদাচারণ না করে বিনয়ের সঙ্গে তাদেরকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন যে, আপনি তাদের এ সব অন্যায় কাজ মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে অপারগ। কেননা, ইসলামের শিক্ষা হল, لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق অর্থাৎ, আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতা যেখানে আসবে, সেখানে সৃষ্টির আনুগত্য কোনো অবস্থাতেই করা যাবেনা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ
অসৎকাজে আনুগত্য নয় ; আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে। (বুখারী ৭১৪৫ মুসলিম ১৮৪০)
৩. তাঁদের হেদায়েতের জন্য দোয়া নিয়মিত দোয়া করবেন। আশাহত হয়ে চেষ্টা কিংবা দোয়া বর্জন করা যাবে না। ইনশাআল্লাহ একদিন না একদিন সাফল্য পাবেন। وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। (সূরা ত্বলাক ৩) রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দোয়া ব্যতীত। (তিরমিযী ২১৩৯)
প্রিয় প্রশ্নকারী দীনী বোন, উপরোক্ত তিনটি কাজ হেকমত ও ধৈর্য্যের সঙ্গে অব্যাহত রাখতে পারলে এবং পাশাপাশি প্রশ্নেল্লেখিত গুনাহগুলোর প্রতি আপনার অন্তরে ঘৃণা বিদ্যমান থাকলে আশা করা যায়, আপনি গুনাহগুলোর দায়ভার থেকে ‘ইন শা আল্লাহ’ অব্যাহতি পেয়ে যাবেন।
তিন. তবে এক্ষেত্রে একটি সূক্ষ্ম সতর্কতা বলে দিচ্ছি, তাহলো, গুনাহের কাজে বাবা- মায়ের আনুগত্য না করা মানে তাদের সঙ্গে অসদাচারণ করা নয়; বরং তাঁরা যে গুনাহের কাজের আদেশ দেন তা না করা এবং অন্যান্য বৈধ আদেশগুলো মান্য করা। কারণ পিতামাতার সেবা ও সদ্ব্যবহারের জন্য তাঁদের মুসলমানও হওয়া জরুরী নয়। এসম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِن جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
যদি তাঁরা (পিতামাতা) তোমার উপর চাপ প্রয়োগ করে আমার সাথে কাউকে শরীক করার জন্য যা তোমার বোধগম্য নয়, তাহলে তুমি তাঁদের কথা অমান্য করো। আর পার্থিব জীবনে উৎকৃষ্ট পন্থায় তাঁদের সাথে সৎ সম্পর্ক বজায় রেখো। আর তুমি তাঁদের পথ অনুসরণ করো যারা আমার প্রতি অবিচলভাবে আকৃষ্ট রয়েছে। (সূরা লুকমান ১৫)
পরিশেষে আমরাও দোয়া করি, আল্লাহ উক্ত পরিবারকে পরিপূর্ণ হেদায়াত দান করুন। আমিন।