সুদি লোন দ্বারা ক্রয়কৃত বাড়ির বিধান

জিজ্ঞাসা–৯৬৩: ব্যাংক থেকে সুদভিত্তিক লোন দিয়ে বাড়ি কিনলে এবং সে লোন পরিশোধের পর বাড়ি হালাল হবে কিনা?– শফিক।

জবাব:

এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, সুদ দেয়া এবং নেয়া উভয়টা নিঃসন্দেহে হারাম ও কবিরা গুনাহ। তবে সুদ গ্রহণের মাধ্যমে গড়া সম্পদ এবং সুদ প্রদানের মাধ্যমে গড়া সম্পদ বিধানগতভাবে এক নয়। সুদ গ্রহণের মাধ্যমে গড়া সম্পদ মানেই তো অন্যের সম্পদ বা অর্থ আত্মসাত। তাই এর বিধান হল, যার সম্পদ তাকে ফেরত দিয়ে দেয়া। সে না থাকলে তার ওয়ারিশগণকে দিতে হয়। তারাও না থাকলে মূল মালিককে সাওয়াব পৌঁছানোর নিয়তে তা গরিবদের মাঝে সদকাহ করে দিতে হয়। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ
‘তোমরা পরস্পরে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না।’ (সূরা বাকারাহ ১৮৮)

পক্ষান্তরে সুদি ঋণ নেয়া যদিও এটাও সুদ গ্রহণ করার মতই সমান গুনাহ। কেননা, হাদিসে এসেছে-

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ ﷺ آكل الربا وموكله وكاتبه وشاهديه، وقال : هم سواء.

আল্লাহর রসূল রাসূল ﷺ সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক এবং তার উপর সাক্ষীদ্বয়কে অভিশাপ করেছেন, আর বলেছেন, ওরা সকলেই সমান। (মুসনাদে আহমাদ ৩৮০৯)

তবে যেহেতু এর মধ্যে অন্যের সম্পদ আত্মসাত করার বিষয় থাকে না; বরং এর দ্বারা সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাই এর দ্বারা গড়া সম্পদ পদ্ধতিগতভাবে হারাম হলেও সে এর মালিক হয়ে যায় বিধায় ভোগ করা তার জন্য হারাম নয়।

দুই. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, এবার আসা যাক আপনার প্রশ্নের উত্তরে যে, ব্যাংক থেকে সুদভিত্তিক লোন নিয়ে বাড়ি কিনলে, সে লোন পরিশোধের পর বাড়ি হালাল হবে কিনা? এর উত্তর হল, সুদভিত্তিক লোনের মাধ্যমে বাড়ি কেনার পদ্ধতিটা যদিও হারাম তবে শরিয়তের বিচারে সে এর মালিক হয়ে গিয়েছে বিধায় উক্ত বাড়ির ভোগ-ব্যবহার করা তার জন্য হালাল হবে।

আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এক ব্যক্তি সুদি ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছে, এখন সে বাড়িটি কী করবে–ভেঙ্গে ফেলবে না ব্যবহার করবে? কমিটি উত্তর দিয়েছিল,

 إذا كان الواقع كما ذكرت ، فما حصل منك من القرض بهذه الكيفية حرام ، لأنه ربا وعليك التوبة والاستغفار من ذلك ، والندم على ما وقع منك ، والعزم على عدم العودة إلى مثله ، أما المنزل الذي بنيته فلا تهدمه ، بل انتفع به بالسكنى أو غيرها ، ونرجو أن يغفر الله لك ما فرط منك

আপনি যেমনটি বলেছেন, বাস্তবে বিষয়টা যদি তেমনই হয় তাহলে এ পদ্ধতিতে ঋণ নেয়াটা হারাম হয়েছে। কেননা, এটা সুদ। আর আপনাকে এ থেকে অবশ্যই তাওবা-ইসতেগফার করতে হবে। যা কিছু আপনার থেকে হয়ে গেছে তার ব্যাপারে লজ্জিত হতে হবে এবং দ্বিতীয় বার এ রকম না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। তবে যে বাড়িটি আপনি বানিয়েছেন তা ভাঙ্গবেন না; বরং বসবাস করবেন কিংবা অন্য কোনোভাবে ভোগ করবেন। আর আমরা আশা করব যে, আপনার থেকে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, আল্লাহ তাআলা তা মাফ করে দিবেন। ( ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১৩/৪১১)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − six =