সূরাসমূহের তারতিব রক্ষা না করা মাকরূহ–একথার দলিল কী?

জিজ্ঞাসা–২২০: ফরজ নামাজে সূরা/কেরাত পড়ার ক্ষেত্রে তারতিব রক্ষা না করলে নামাজ মাকরুহ হয়। তারতিব রক্ষা করার এই প্রয়োজনীয়তার দলীল কী? হাদিস হতে বিস্তারিত জানতে চাই? আর নফল সুন্নত নামাজে তারতিব রক্ষা করা জরুরি না জানি। ঠিক? মাইমুনা সিদ্দীকাহ: [email protected]

জবাব:

এক. প্রিয় বোন, মূলতঃ তারতিব তিন প্রকার–

ক) কোরআনের শব্দসমূহের তারতিব অর্থাৎ,কোরআনের শব্দসমূহ যেভাবে আছে সেভাবে রাখা; আগ-পর না করা।

খ) আয়াতসমূহের তারতিব অর্থাৎ,আয়াতসমূহ আগ-পর না করা।
যেহেতু এই দুই প্রকারের তারতিব স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ সরাসরি ওহীর মাধ্যম পেয়েছিলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে বাতলে দিয়েছিলেন, তাই এক্ষেত্রে ইজতিহাদের কোন সুযোগ নেই; বরং ইচ্ছাকৃতভাবে এই দুই প্রকারের তারতিব বিশেষত নামাজে লঙ্ঘন করা হারাম; রক্ষা করা ওয়াজিব। এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। (আল-ইতক্কান ১/১৭৫ মানাহিলুল ইরফান ১/২৮২,২৮৩)

গ) সূরাসমূহের তারতিব। এটি লঙ্ঘন করা হারাম নয় তবে সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত-পদ্ধতি পরিপন্থী। কেননা এটা সত্য যে, সূরাসমূহের তারতিবের ব্যাপারে কিছু সূরার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সরাসরি দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়। আবার কিছু সূরার  ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। যার ফলে সাহাবায়ে কেরামের কাছে বিদ্যমান লিখিত-কোরআনের ‘সূরাসমূহের তারতিবে’ (শব্দ ও আয়াতসমূহের নয়) ভিন্নতা ছিল। যেমন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. এর তারতিব (ধারাক্রম), উবাই ইবনে কাব রাযি. এর তারতিব উসমান রাযি. এর কর্তৃক সংকলিত কোরআনের তারতিব থেকে আলাদা ছিল। তবে উসমান রাযি. কর্তৃক সংকলিত কোরআন মাজীদের তারতিবই সাহাবায়ে কেরামের কাছে সর্বশেষ সবচেয়ে বেশি সমাদৃত হয়েছিল। যে তারতিবের বিরোধিতা ওই সব সাহাবাও করেন নি, যাদের কাছে ভিন্ন তারতিব ছিল। আর এই তারতিবই বর্তমান মুসলিম উম্মাহর কাছে বিদ্যমান। এ কারণেই ওলামায়েকেরাম বলেন, সূরাসমূহের বর্তমান এই তারতিব রক্ষা না করা করা হারাম নয় তবে সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত-পদ্ধতি পরিপন্থী বিধায় মাকরূহ। (আল মাদখাল ফী দিরাসাতিল কোরআন ৩২৬,৩২৭)
দুই. প্রিয় বোন, সূরাসমূহের এই তারতিব রক্ষা করার  প্রয়োজনীয়তা  নফল নামাজের ক্ষেত্রে নেই। কেননা হাদিসে আমরা পাই, হুযাইফা রাযি. একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পিছে তাহাজ্জুদ আদায় করেছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথম সূরা বাকারা , তারপর সূরা নিসা , তারপর সূরা আলে ইমরান তিলাওয়াত করেছিলেন । (মুসলিম, কিতাবুস সালাত ১৬৯৭)
বলা বাহুল্য, তাহাজ্জুদ নফলশ্রেণীর নামাজ। যেখানে সূরার বর্তমান তারতিব মানা হয় নি। অপর দিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন ফরয নামাজে এরূপ করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং এই তারতিব রক্ষা করার  প্রয়োজনীয়তা ফরয নামাজের ক্ষেত্রে; নফল নামাজের ক্ষেত্রে নয়।

والله أعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 1 =