স্ত্রী মোহর মাফ করে দেয়া পর পুনরায় দাবী করা

জিজ্ঞাসা–১১৫৪: আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম, একজন ছেলে একজন মেয়েকে বিয়ে করার সময় বিয়ের দিনেই সবার উপস্থিতিতে তার স্ত্রীর মোহরানা আদায় যা তার প্রাপ্য ছিলো তা সম্পুর্ণ আদায় করতে চেয়েছিলো। কিন্তু মেয়ে খুশি হয়ে তা ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছে এবং বলেছে, এটা তার জীবনেও আর দাবি নেই। সে বলেছে, তার প্রাপ্য সে পেয়ে গেছে। এই অর্থ দিয়ে তার স্বামী যা ইচ্ছা তা করবে তার কোনো দাবি নেই। সে শুধু মাত্র সুন্দর জীবনটা কাটাতে চায়। বেশ কিছুদিন পর তাদের দু’জনের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হলে এক পর্যায় ছেলে ঐ মেয়েকে তালাক দিয়ে দেয়। তালাকের পর ঐ মেয়ে তার মোহরানা দাবি করছে। ছেলে বলছে, বিয়ের দিন তো মোহরানা দিয়ে দিয়েছি। এখন কি করার? ছেলে কি মোহরানা পূণরায় দিতে হবে? অথবা আর না দিলে কি কোনো গুনাহ হবে? আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহের দলিল দ্বারা জবাব দিবেন।–নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

প্রশ্নেল্লেখিত সুরতে যেহেতু স্বামী মোহর আদায় করার পর স্ত্রী স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা ফেরত দিয়ে দিয়েছে, তাই স্বামীর উক্ত মোহর আর আদায় করতে হবে না। কেননা,  স্বামীকে স্ত্রী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয় কিংবা গ্রহণ করার পর স্বামীকে উপহার দেয় তাহলে স্বামী তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করতে পারে। পূর্ণ মোহর ছেড়ে দেওয়ার বা পূর্ণ মোহর স্বামীকে উপহার দেওয়ারও অধিকার স্ত্রীর রয়েছে, তবে সাধারণ অবস্থায় পূর্ণ মোহর না দিয়ে কিছু অংশ দেওয়াই ভালো।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا

এবং তোমরা নারীদেরকে দাও তাদের মোহর খুশিমনে। এরপর তারা যদি স্বেচ্ছায় স্বাগ্রহে ছেড়ে দেয় কিছু অংশ তোমাদের জন্য তাহলে তা স্বচ্ছন্দে ভোগ কর। (সূরা নিসা  ৪)

তবে স্ত্রীর মোহর ফাঁকি দেওয়া অতি হীন কাজ। কারণ এর অর্থ দাঁড়ায়, ভোগ করতে রাজি, কিন্তু বিনিময় দিতে রাজি নয়। যে স্বামীর মনে স্ত্রীর মোহর আদায়ের ইচ্ছাটুকুও নেই হাদীস শরীফে তাকে বলা হয়েছে ‘ব্যাভিচারী’। (মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/৫২২-৫২৩)

সুতরাং স্বামী যদি চাপ দিয়ে বা কৌশলে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশ মাফ করিয়ে নেয় তাহলে আল্লাহর বিচারে তা মাফ হবে না। (দেখুন-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৫৭-৫৮; তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/৪৪২; বয়ানুল কুরআন ২/৯৩; তাফসীরে উছমানী, পৃ. ১০০)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − 10 =