অটিস্টিক সন্তান সুস্থ করে তোলার আমল

জিজ্ঞাসা–৮৩০: আসসালামু আলাইকুম,আমার ছেলে,মেয়ে দুইজনই অটিস্টিক। কথা বলে না, কথা বুঝে না। আল্লাহর কাছে তো সব রোগের শেফা আছে,আমাকে ওদের সুস্থতার জন্য কোনো আমল বললে উপকৃত হতাম।–Sharmin Sultana

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. প্রিয় প্রশ্নকারী বোন, নিশ্চয় অটিস্টিক সন্তানের মায়ের দুঃখ কষ্ট-বেদনা এতটাই যা কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। এজন্য প্রথমে আমরা আপনার জন্য এবং আপনার সন্তানদের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ তাআলা যেন আপনার সন্তানদের থেকে প্রাপ্ত কষ্টে আপনাকে ধৈর্য্য ধারণ করার তাওফীক দান করেন এবং আপনার সন্তানদেরকে যেন পরিপূর্ণরূপে সুস্থ করে দেন। নিশ্চয় তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

মনে রাখবেন, সন্তানের অসুস্থতা বাবা-মায়ের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পরীক্ষা হিসেবে হয়। আল্লাহ বলেন,

وَنَبْلُوكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ

আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আম্বিয়া ৩৫)

যদি এই পরীক্ষায় বাবা-মা সবর করতে পারেন তাহলে এর মাধ্যমে তিনি বান্দার গুনাহগুলো মাফ করে দেন এবং জান্নাতে অতি সম্মানিত স্থানে আসীন করেন। আল্লাহ বলেন,

إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ

যারা সবরকারী, তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত। (সূরা যুমার ১০)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

‏ يَوَدُّ أَهْلُ الْعَافِيَةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حِينَ يُعْطَى أَهْلُ الْبَلاَءِ الثَّوَابَ لَوْ أَنَّ جُلُودَهُمْ كَانَتْ قُرِضَتْ فِي الدُّنْيَا بِالْمَقَارِيضِ

দুনিয়ায় যারা বিপদ-আপদে নিপতিত হয়েছে তাদেরকে যখন কিয়ামতের দিন বিনিময় প্রদান করা হবে তখন বিপদ-আপদ মুক্ত ব্যক্তিরা আশা করবে দুনিয়ায় যদি তাদের চাঁমড়া কাঁচি দিয়ে টুকরা টুকরা করে ফেলা হত! (তিরমিযি ২৪০২)

দুই. আর আপানার প্রতি আমাদের পরামর্শ হল,

. সন্তানদের জন্য বেশি বেশি করে দোয়া করুন। কারণ, যেসব দোয়া আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কবুল হয়ে থাকে, তার মধ্যে পিতা-মাতার দোয়া আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কবুল হয়। তাই তাদের জন্য বারবার দোয়া করবেন। কোরআনে বর্ণিত এ দোয়াটি করতে পারেন

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের জীবনসঙ্গীর পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ দান করুন। (সূরা ফুরকান ৭৪)

. আবু সাঈদ রাযি.থেকে বর্ণিত, জিবরীল আ. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে বললেন, ইয়া মুহাম্মদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (জিবরীল) বললেন,

بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ

অর্থাৎ, আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি, সে সব জিনিস থেকে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়, সব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি।  (মুসলিম ৫৫১২)

সুতরাং দোয়াটি পড়ে সন্তানদেরকে বার বার ফুঁ দিন। ইনশা-আল্লাহ, আল্লাহ তাআলা ধীরে ধীরে সুস্থ করে দিবেন।

. রাসূলুল্লাহ ﷺ  হাসান ও হুসাইন রাযি.-কে এই বাক্যগুলো দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করতেন,

‏ أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ

অর্থাৎ, আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহ্‌র কালামের আশ্রয়ে রাখতে চাই সব ধরনের শয়তান হতে, কষ্টদায়ক বস্তু হতে এবং সব ধরনের বদ-নজর হতে।

(দোয়াটি এক সন্তানের জন্য পড়লে ‘উয়ীযুকা’, দুইজনের জন্য ‘উয়ীযুকুমা’ আর দুইয়ের অধিক হলে ‘উয়ীযুকুম’ বলতে হবে।) (বুখারী ৩৩৭১)

সন্তানদেরকে উক্ত দোয়া প্রতি দিন তিন বা ততোধিক বার পড়ে ফুঁ দিবেন। ইনশা-আল্লাহ, ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে।

. আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ এই বলে দোয়া করতেন যে,

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئْ الْأَسْقَامِ

হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাইছি আপনার কাছে শ্বেতকুষ্ঠ, উম্মাদ রোগ, কুষ্ঠ রোগ ও তামাম খারাপ ব্যধি থেকে। (আবূ দাঊদ ১৫৫৪)

সুতরাং এ দোয়াটি পড়ে সন্তানদের গায়ে ফুঁক দিন এবং এটি বারবার করুন।

. ওলামায়ে কেরাম লিখেছেন, যদি কোনো ব্যক্তির সন্তান ছেলে হোক আর মেয়ে হোক পিতামাতার অবাধ্য বা অসৎ হয়ে যায়; তবে পিতামাতা যেন নিজের হাত সন্তানের কপালে রেখে এবং সন্তানের মুখমণ্ডলকে আসমানের দিকে ফিরিয়ে আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক নাম (اَلشَّهِيْدُ) ‘আশ-শাহিদু’ ২১ বার পাঠ করে। আল্লাহর ইচ্ছায় ওই অবাধ্য বা অসৎ সন্তান (ছেলে হোক আর মেয়ে) সে সৎ ও আনুগত্যশীল হয়ে যাবে। সুতরাং এই আমলটিও মাঝে মাঝে করুন।

. সন্তানদেরকে কালিজিরা খাওয়ান। কেননা, আয়েশা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, إنّ هذه الحبة السوداء شفاء من كل داء إلا السام কালিজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের উপশমক (উপকারী)। (সহিহ বুখারি ৫৯২)

.  মাঝে মাঝে তাদেরকে মধুর শরবত পান করান। কেননা, অটিস্টিকরা সাধারণত বুদ্ধির দিক থেকে পিছিয়ে থাকে। আর মধু বুদ্ধি পরিপক্ক করে।  ইমাম যুহরী বলেন,  عليك بالعسل فإنه جيد للحفظ তুমি মধু খাবে; কারণ এটি স্মৃতিশক্তির জন্য ভাল।’ (খতীব আল-বাগদাদীর ‘আল-জামে’ ২/৩৯৪)

আল্লাহ তাআলা বলেন,فيه شفاءٌ للنّاس ‘এতে (মধু) মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার।’ (সুরা নাহল ৬৯)

والله اعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × three =