অপসংস্কৃতির মোকাবেলায় নারীবিহীন অভিনয় জায়েয হবে কি?

জিজ্ঞাসা–১৭৩১: বিভিন্ন ইসলামি গজলে নির্দিষ্ট কোনও একটা জিনিস তুলে ধরার জন্য অভিনয় করতে দেখা যায়। তাদের ভাষ্য হলো, অপসংস্কৃতির মোকাবেলায় নারীবিহীন এসব অভিনয় বৈধ। শরীয়তের দৃষ্টিতে এই অভিনয়ের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু এবং বৈধতা কতটুকু? দলিলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।–ইজহারুল ইসলাম।

জবাব:

এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, এজাতীয় অভিনয় বৈধ নয়। কেননা, অপসংস্কৃতির মোকাবেলায় অভিনয় -হোক তা নারীবিহীন- এটাও অমুসলিমদের এক প্রকার অনুসরণ বৈ কি!

মনে রাখতে হবে, ইসলামী সংস্কৃতির ভিত্তি হলো কুরআন ও সুন্নাহ। সুতরাং কুরআন-সুন্নাহ বহির্ভূত কোনো সংস্কৃতি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমাদের কাছে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বিশুদ্ধ, যথার্থ, মহান ও সার্বজনীন ইসলাম আছে, সুতরাং তাদের মোকাবেলার জন্য তাদেরই সংস্কৃতির কাটছাট অনুসরণ প্রয়োজন নেই।

তাদের কাছে জীবনাচারের জন্য ইসলামের মত পবিত্র, পরিপূর্ণ ও শক্তিমান কোনো রীতিনীতি নেই বিধায় ভালো কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য তারা মনে করে, তাদের এসব উপকরণ প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের তা প্রয়োজন নেই।

হাদিস শরিফে এসেছে, জাবের রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক বার ওমর রাযি. রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট তাওরাত কিতাবের একটি কপি নিয়ে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা তাওরাত কিতাবের একটি কপি। রাসূলুল্লাহ ﷺ নীরব রইলেন। ওমর রাযি. তা পাঠ করতে শুরু করলেন। সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর চেহারা পরিবর্তন হতে লাগল। তা লক্ষ্য করে হযরত আবু বকর রাযি. বললেন, ওমর তোমার সর্বনাশ হয়েছে, তুমি কি দেখছ না! রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর চেহারা মুবারক কি রূপ ধারণ করেছে? তখন ওমর রাযি. রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর দিকে দৃষ্টিপাত করলেন এবং বললেন, আমি আল্লাহর নাখুশী এবং তাঁর রাসূলের নাখুশী হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এবং আমরা আল্লাহ্ পাককে প্রভু, ইসলামকে দীন এবং হযরত মুহাম্মাদ ﷺ-কে নবীরূপে লাভ করে সন্তুষ্ট হয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,

وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ بَدَا لَكُمْ مُوسَى فَاتَّبَعْتُمُوهُ وَتَرَكْتُمُونِي لَضَلَلْتُمْ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ وَلَوْ كَانَ حَيًّا وَأَدْرَكَ نُبُوَّتِي لَاتَّبَعَنِي

সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার জীবন! এই সময় যদি তোমাদের নিকট হযরত মূসা আ.-ও আত্মপ্রকাশ করতেন আর তোমরা আমাকে রেখে তার অনুসরণ করতে তা হলে নিশ্চিতরূপে তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে পড়তে। এমনকি মূসা আ. যদি এখন জীবিত থাকতেন আর আমার নবুওয়াতের সময় পেতেন তবে তিনিও নিশ্চিতরূপে আমার অনুসরণ করতেন। (মুসনাদে আহমাদ ১৫১৯৫)

দুই. এরপরেও যদি অতি উৎসাহী কোনো ব্যক্তি অপসংস্কৃতির মোকাবেলা করার জন্য অভিনয়কে উপকরণ হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি তাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে-

~ কোনো নবী ও সাহাবীর চরিত্রে অভিনয় করা যাবে না। কেননা, এতে তাঁদের যে মর্যাদা আছে, অভিনয়ের ফলে তা ক্ষুণ্ণ হয়ে যায়। বিশেষ করে অভিনেতা যদি ফাসেক হয়, তাহলে অবৈধতার মাত্রা বেশি। বলা বাহুল্য, অভিনেতা সচ্চরিত্রবান মুসলিম হলেও তাদের চরিত্রের অভিনয় বৈধ নয়। ইমাম নববি রহ. বলেন,

أنَّ الأنبياء – صلوات الله وسلامه عليهم – منزَّهون عن النَّقائص في الخَلق والخُلق، سالمون من العاهات والمعايب

নবীগণ সকল সৃষ্টিগত ও চরিত্রগত ত্রুটি থেকে পবিত্র ছিলেন। সকল দৈহিক খুঁত ও ত্রুটিসমূহ থেকে নিরাপদ ছিলেন। ((শরহু মুসলিম, নববি ৮/১০২)

~ পুরুষ নারীর এবং নারী পুরুষের অভিনয় করতে পারবে না। কেননা, ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ المُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ

রাসূলুল্লাহ ﷺ নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ করেছেন। (বুখারী ৫৮৮৫)

~ অদৃশ্যের কোনো বিষয় যেমন ফেরেশতা, শয়তান প্রভৃতির অভিনয় করা যাবে না। কেননা, এটা অদৃশ্যের উপর ঈমান আনার সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে সাংঘর্ষিক।

~ এমন কোনো অভিনয় করা যাবে না, যা ইসলামের কোনো শিআ’র তথা নিদর্শনের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপাত্মক হয়। এমনকি মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার উদ্দশ্যেও এজাতীয় অভিনয় করা যাবে না।

~ এমন কোনো বিষয়ের অভিনয় করা যাবে না, যেখানে হারাম কাজ আছে, যেমন: মিথ্যা বলা, গীবত করা, ইসলামে নিষিদ্ধ এমন পোশাক পরা ইত্যাদি।

والله اعلم بالصواب