অলসতা দূর করে ফজর নামাযে যোগদানের কিছু টিপস

জিজ্ঞাসা–১৭৫০: আমি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করতে পারি না। আমি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করতে চাই। এইজন্য আমাকে কী করতে হবে?–নাম প্রকাশ করা হয় নি।

জবাব: জনাব! আপনাকে পেয়ে বসেছে অলসতা ও উদ্যমহীনতা। এটি একটি মনোরোগ। এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- আল্লাহর সাথে সম্পর্কের দুর্বলতা, তাকওয়ার ঘাটতি, ইবাদতে অলস ও দুর্বল ব্যক্তিদের সাথে চলাফেরা, দুনিয়া ও দুনিয়ার ভোগ নিয়ে মেতে থাকা, দুনিয়ার শেষ পরিণতি নিয়ে না ভাবা এবং যার ফলে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের প্রস্তুতির মধ্যেও দুর্বলতা এসে পড়ে। এ রোগ প্রতিরোধ করার বেশ কিছু পন্থা রয়েছে, যেমন–

১. যখন আপনার মাঝে রোগটি দেখা দিবে, ঠিক ওই মুহূর্তে ভাবুন, এটা তো মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়; বরং এটা তো মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। হ্যাঁ, আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে এমনটাই বলেছেন যে,

وَلاَ يَأْتُونَ الصَّلاَةَ إِلاَّ وَهُمْ كُسَالَى

তারা নামাযে আসে অলসতার সাথে ব্যয় করে সঙ্কুচিত মনে। (সুরা তাওবা ৫৪)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى المُنَافِقِينَ مِنْ صَلاَةِ الفَجْرِ وَالعِشَاءِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْواً

মুনাফিকদের উপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হত। (বুখারি ৬৫৭, ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম ৬৫১)

২. জীবনে যারা নেককার, উদ্যমী, আমলকারী ও আল্লাহওয়ালা ছিলেন এমন ব্যক্তিবর্গের লেখা ও জীবনী পড়ুন। যাতে আল্লাহর রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে আপনার সামনে কিছু উত্তম আদর্শ থাকে।

৩. ফজরে উঠতে দৃঢ় ইচ্ছা যদি আপনি করেন, তবে কখনোই রাত জাগবেন না। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন, যাতে একদিকে আপনার ঘুমও পূর্ণ হয়, অন্যদিকে যথাসময়ে ফজরের জন্য উঠতেও পারেন। ইসলামের শিক্ষা মূলত এটা যে, এশার পরপরই ঘুমাতে যাওয়া। বিজ্ঞানও এই অভ্যাসের যথার্থতার প্রমাণ প্রকাশ করেছে।

৪. বিছানায় যাওয়ার আগে অজু করে নিন। যদি আপনি পবিত্র অবস্থায় ঘুমাতে যান, তবে ফেরেশতারা আপনার ঘুম থেকে জাগার আগ পর্যন্ত আপনার জন্য দোয়া করতে থাকবে।

৫. রাসূল ﷺ ঘুমানোর সময় ডান কাত হয়ে, ডান হাতকে ডান গালের নিচে রেখে ঘুমাতেন। রাসূল ﷺ-এর অনুকরণে ঘুমের জন্য শোয়ার এই অবস্থা একদিকে যেমন ঘুমের জন্য সহায়ক, অন্যদিকে ফজরে যথাসময়ে ঘুম থেকে ওঠার জন্যও কার্যকর।

৬. বিছানায় যাওয়ার সময় কিছু কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করে নিন। বিশেষ করে সূরা সাজদাহ, সূরা মুলক, সূরা ইসরা, সূরা যুমার, সূরা কাহফের শেষ চার আয়াত, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ইত্যাদি এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

৭. একাধিক অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার করুন। আওয়াজ যত বেশি হবে, ততই ভালো! অ্যালার্ম ঘড়ি হাতের কাছে বা বিছানার পাশে না রেখে দূরে রাখুন, যাতে করে আপনাকে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ঘড়ি বন্ধ করতে হয়। এতে ঘুম থেকে ওঠার পাশাপাশি আপনার নিদ্রার ভাব কাটার জন্যও সহায়ক হবে।
৮. পরিবারের সদস্যদের বলুন, যদি তারা উঠতে পারে তবে ডেকে দেওয়ার জন্য। তেমনিভাবে আপনিও উঠতে পারলে তাদের ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য ডেকে দিন।

৯. যে দিন ফজরে উঠতে পারবেন না, সে দিন অন্তরে লাগে পরিমাণ সাদকা করে নিজেকে শাস্তি দিন।

১০. বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের ঘুম দেড় ঘন্টার একটি চক্র অনুসরণ করে। সুতরাং, আপনি যদি দেড় ঘন্টা বা এর গুনিতক সময় যথা তিন ঘন্টা, সাড়ে চার ঘন্টা বা ছয় ঘন্টা ঘুমান, তবে আপনি ক্লান্তিহীনভাবে ঘুম থেকে উঠতে পারবেন। তা না হলে আপনি যত সময়ই ঘুমান না কেন, আপনার ক্লান্তি দূর হবেনা। সুতরাং, আপনি যদি রাত বারোটায় ঘুমাতে যান এবং ফজরের সময় যদি পাঁচটার দিকে হয়, তবে সাড়ে চারটার দিকে অ্যালার্ম দিন। ঘুমের চক্র পরিপূর্ণ হওয়ার মাধ্যমে ক্লান্তিহীন ভাবে আপনি ঘুম থেকে উঠতে পারবেন।

১১. পরিশেষে আমরা আপনাকে দোয়া করার পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা, যে ব্যক্তি সঠিকভাবে নেক আমল করতে পারার জন্য তাঁর রবের আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনা করে সে বিফল হয় না। যেমনটি রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ করতেন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (বুখারী ২৮৯৩)

উল্লেখ্য, বাংলা উচ্চারণ পাঠকের সুবিধার্থে দেয়া হয়েছে। মূলতঃ বিশুদ্ধ উচ্চারণ এভাবে লেখার মাঝে আসে না। সুতরাং একজন আলেমের কাছ থেকে বিশুদ্ধ উচ্চারণে দোয়াগুলো শিখে নিতে হবে। তারপর আমল করতে হবে।)

আমরা দোয়া করছি- আল্লাহ আপনাকে তাঁর সন্তোষজনক আমল করতে পারার তাওফিক দিন। আপনাকে উত্তম কথা, কাজ ও আচরণের তাওফিক দিন।

والله اعلم بالصواب