জিজ্ঞাসা–৬০৬: ওলামা হযরতগণ আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওয়ারিস এই কথার কোন দলীল আছে কিনা?–নাবিল হাসান।
জবাব: আলেমগণ নবীদের ওয়ারিস। এর দলিল হল,
এক. হাদীসে এসেছে,
কাসীর ইবনু কায়স রহ. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আবূ দারদা রাযি .-এর সঙ্গে দামেশকের মাসজিদে বসা ছিলাম। তখন তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললন, হে আবূ দারদা! আমি একটি হাদীসের জন্য সুদূর মদীনাতুর রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে এসেছি। জানতে পারলাম, আপনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেন। এ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আমি আসি নি। আবূ দারদা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ইলম শেখার জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার পরিবর্তে তাকে জান্নাতের পথসমূহের মধ্যে কোনো একটি পথে পৌঁছে দেন। ফেরিশতারা তালিবুল ইলমের সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। আলেমের জন্য আসমান ও যমীনে যারা আছে তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও দোয়া প্রার্থনা করে, এমন কি পানির গভীরে বসবাসকারী মাছও। আবেদ (সাধারণ ইবাদাতগুজার) ব্যক্তির উপর আলেমের মর্যাদা হলো যেমন সমস্ত তারকার উপর পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা। আলেমগণ হলেন নবীদের ওয়ারিস। নবীগণ কোনো দীনার বা দিরহাম মীরাসরূপে রেখে যান না; তারা উত্তরাধিকার সূত্রে রেখে যান শুধু ইলম। সুতরাং যে ইলম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে। (সুনান আবু দাউদ ৩৬৪৩)
ইবন কাইয়িম আল জাওযিয়া রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
দুই. কোরআন মজিদে কিছু নবীর উত্তারাধিকার সম্পর্কে স্পষ্ট আলোচনা এসেছে, সেখানেও এটা স্পষ্ট করা হয়েছে যে, নবীগণ কোনো দীনার বা দিরহাম মীরাসরূপে রেখে যান না; বরং তারা উত্তরাধিকারসূত্রে রেখে যান শুধু ইলম। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَوَرِثَ سُلَيْمَانُ دَاوُودَ ۖ وَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ عُلِّمْنَا مَنطِقَ الطَّيْرِ وَأُوتِينَا مِن كُلِّ شَيْءٍ ۖ إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ الْفَضْلُ الْمُبِينُ
সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। বলেছিলেন, হে লোক সকল, আমাকে উড়ন্ত পক্ষীকূলের ভাষার ইলম শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সব কিছু দেয়া হয়েছে। নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব। (সূরা আননামল ১৬)
যাকারিয়া আ. এর দোয়াও কোরআন মজিদে বিবৃত হয়েছে এভাবে-
وَإِنِّي خِفْتُ الْمَوَالِيَ مِن وَرَائِي وَكَانَتِ امْرَأَتِي عَاقِرًا فَهَبْ لِي مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا يَرِثُنِي وَيَرِثُ مِنْ آلِ يَعْقُوبَ ۖ وَاجْعَلْهُ رَبِّ رَضِيًّا
আমি ভয় করি আমার পর আমার স্বগোত্রকে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা; কাজেই আপনি নিজের পক্ষ থেকে আমাকে একজন কর্তব্য পালনকারী দান করুন। সে আমার স্থলাভিষিক্ত হবে ইয়াকুব বংশের এবং হে আমার পালনকর্তা, তাকে করুন সন্তোষজনক। (সূরা মারয়াম ৫, ৬)
এসব আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে, নবীদের উত্তারাধিকারের নাম হল, দীনের ইলম। সুতরাং যাঁদের কাছে এটি থাকবে তাঁরাই হবেন, নবীগণের উত্তরাধিকারী তথা ওয়ারিস।
তিন. সাহাবায়ে কেরামও মনে করতেন, নবীগণের মীরাস বা উত্তরাধিকার হল, ইলম। তাই তাঁরা মনে করতেন, ওলামায়ে কেরাম হলেন, নবীদের ওয়ারিস। যেমন, ত্বাবরানী আওসাতগ্রন্থে বর্ণনা করেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَّهُ مَرَّ بِسوقِ الْمَدِينةِ فَوقَفَ عليها، فقَالَ يَا أَهْلَ السُّوقِ مَا أَعْجَزَكُمْ؟ قَالَوا: وَمَا ذَاكَ يَا أَبَا هُرَيْرُةَ؟ قَالَ: ذَاكَ مِيرَاثُ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ يُقْسَمُ، وَأَنْتُمْ هَا هُنَا ألا تَذْهَبُونَ فَتَأَخُذُونَ نَصِيبَكُمْ مِنْهُ. قَالَوا: وَأَيْنَ هُوَ؟ قَالَ: فِي الْمَسْجِدِ فَخَرَجُوا سِرَاعًا وَوَقَفَ أَبُو هُرَيْرَةَ لَهُمْ حَتَّى رَجَعُوا فَقَالَ لَهُمْ: مَا لَكُمْ؟ فقَالَوا: يَا أَبَا هُرَيْرَةَ قَدْ أَتَيْنَا الْمَسْجِدَ، فَدَخَلْنَا فيه فَلَمْ نَرَ فِيهِ شَيْئًا يُقْسَمُ، فَقَالَ لَهُمْ أَبُو هُرَيْرَةَ: ومَا رَأَيْتُمْ فِي الْمَسْجِدِ أَحَدًا؟ قَالَوا: بَلَى، رَأَيْنَا قَوْمًا يُصَلُّونَ، وَقَوْمًا يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ، وَقَوْمًا يَتَذَاكَرُونَ الْحَلالَ وَالْحَرَامَ، فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: وَيْحَكُمْ فَذَاكَ مِيرَاثُ مُحَمَّدٍﷺ. رَوَاهُ الطَّبَرَانِي فِي الأَوْسَطِ بإسنادٍ حَسَنٍ
আবু হুরায়ারা রাযি. বর্ণিত আছে, তিনি একদা মদীনার বাজার অতিক্রম করছিলেন। তখন বাজারে দাঁড়িয়ে বললেন, হে বাজারের লোক সকল! কিসে তোমাদেরকে অপারগ করল? তারা বলল, উহা কি হে আবু হুরায়রা? তিনি বললেন, ওখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর মীরাস (উত্তরাধিকার) বন্টন হচ্ছে আর তোমরা এখানে? তোমরা সেখানে গিয়ে কিছু অংশ নাও না কেন? তারা বলল, উহা কোথায়? তিনি বললেন, মসজিদে। একথা শুনে তারা সেখানে ছুটে গেল। আর আবু হুরায়রা দাঁড়িয়ে থাকলেন, শেষ পর্যন্ত তারা ফিরে এল। তারপর তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা কি করলে? তারা বলল, হে আবু হুরায়রা! আমরা গিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলাম। কিন্তু কোন কিছু বন্টন হচ্ছে তা তো দেখলাম না? আবু হুরায়রা তাদেরকে বললেন, তোমরা মসজিদে কাউকে দেখতে পাওনি? তারা বলল, হ্যাঁ, আমরা দেখেছি কিছু লোক নামায আদায় করছে, কিছু লোক কোরআন পাঠ করছে, কিছু লোক হালাল-হারামের বিষয়ে পরস্পরে আলোচনা করছে। তখন আবু হুরায়রা তাদেরকে বললেন, আফসোস তোমাদের জন্যে ওটাই তো মুহাম্মাদ ﷺ– এর মীরাস (উত্তরাধিকার)। (আল মু’জামুল আওসাত ১৪৮৩)