যে ব্যক্তির সর্বক্ষণ বায়ু বের হয়; তার অযু

জিজ্ঞাসা–১১১০: আসসালামু আলাইকুম। শায়েখ! আমার বয়স ২১ বছর। আমার দেড় বছর আগে গ্যাস্টিক আলসার ধরা পড়ে। প্রায় ২ বছর ধরে আমার নামাজ পড়ার খুব সমস্যা হয়। আমি রাতে তাহাজ্জুদ পড়ি। ০৫ ওয়াক্ত জামাতে নামাজ পড়ি। আমার অধিকাংশ দিনে যখন গ্যাস্টিকের সমস্যা বেশি হয় তখন নামাজ পড়ার জন্য ওজু করলে বেশিক্ষণ ওজু রাখতে পারি না। নামাজের মধ্যে বায়ু বের হওয়ার উপক্রম হয়। খুব কষ্ট হয় নামাজ পড়তে। আমার খুব ইচ্ছে সারারাত নামাজ পড়ার। কোরআন পড়ার কিন্তু ওজু রাখতে পারি না। এখন আমি কী করতে পারি?–সোহাগ।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. প্রশ্নকারী দীনি ভাই, অনেক সময় এ ধরণের সমস্যা কেবলই ওয়াসওয়াসা বা সন্দেহজাত হয়।  অর্থাৎ, বাস্তবে বাতাস বের হয় নি;  কিন্তু মনে হয় বাতাস বের হয়ে গেছে। আপনার সমস্যা যদি এজাতীয় হয় তাহলে মনে রাখবেন, এর নেপথ্যে থাকে শয়তান। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে– ঈমানদারদেরকে কষ্ট দেয়া এবং মুমিনের নামাজের খুশু-খুযু’ নষ্ট করে দেয়া। তাহলে আপনি সেটাই করবেন, যা করার জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন এক ব্যক্তি তাঁর কাছে অভিযোগ করলেন যে, তার কাছে মনে হয় যে, সে নামাজের মধ্যে কিছু একটা পাচ্ছে। তখন তিনি বললেন, لاَ يَنْصَرِفُ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا ، أَوْ يَجِدَ رِيحًا সে যেন শব্দ শুনা কিংবা গন্ধ পাওয়া ছাড়া নামাজ না ছাড়ে। (সহিহ বুখারী ১৩৭ সহিহ মুসলিম ৩৬১)

উল্লেখ্য, ‘শব্দ শুনা কিংবা গন্ধ পাওয়া’ এ কথার দ্বারা উদ্দেশ্য শব্দ শুনতেই হবে কিংবা গন্ধ পেতেই হবে তা নয়; বরং এ কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হল- অযু ভাঙ্গার ব্যাপারে পরিপূর্ণ নিশ্চিত হওয়া ছাড়া আপনি এটাই মনে করবেন যে, আপনার অযু ভাঙ্গে নি। (শরহু মুসলিম, নববী, ৪/৪৯)

এজাতীয় ওয়াসওয়াসার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন, জিজ্ঞাসা নং–৫২৩।

দুই. আর যদি আপনার সমস্যাটা এমন হয় যে, সারাক্ষণই বায়ু বের হতে থাকে–এতটুকু সময় পাওয়া যায় না যে, যার মাঝে ফরজ নামাজটুকু আদায় করা যায়, তাহলে শরয়ী পরিভাষায় আপনি মাজুরের অন্তর্ভুক্ত। তখন আপনি প্রতি ওয়াক্তের নামাজের জন্য নতুন করে অযু করবেন এবং এ অযু দিয়ে ফরজ বা নফল যত রাকাত নামাজ পড়তে চান পড়তে পারবেন, কোরআন স্পর্শ করতে পারবেন। ওয়াক্তের ভেতরে নির্গত হতে থাকলেও কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু পরের নামাজের সময় হয়ে গেলেই অযুটি ভেঙ্গে যাবে। আবার নতুন করে অযু করে নামাজ পড়তে হবে। এভাবে মাজুর ব্যক্তি নামাজ আদায় করবে।

এর দলিল হল, হাদিসে আছে, এক বার ফাতিমা বিনতে আবূ হুবায়শ রাযি. রাসূল ﷺ-এর নিকট এসে বললেন,

يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنِّي لَا أَطْهُرُ أَفَأَدَعُ الصَّلاَةَ

হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার রক্তস্রাব হতেই থাকে এবং আমি কখনো পবিত্র হতে পারি না। আমি কি নামাজ ছেড়ে দিবো?

রাসূল ﷺ উত্তর দিলেন,

إِنَّمَا ذَلِكِ عِرْقٌ وَلَيْسَ بِالحَيْضَةِ ، فَإِذَا أَقْبَلَتِ الحَيْضَةُ فَاتْرُكِي الصَّلاَةَ ، فَإِذَا ذَهَبَ قَدْرُهَا ، فَاغْسِلِي عَنْكِ الدَّمَ وَصَلِّي

না, এটা এক প্রকার শিরাজনিত রোগ, এটা হায়েযের রক্ত নয়। তুমি তোমার হায়েযের মেয়াদকাল নামাজ থেকে বিরত থাকো, আর যখন তা বন্ধ হয়ে যাবে তখন রক্ত ধুয়ে ফেলবে, তারপর নামাজ আদায় করবে। (বুখারি ২২৮)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − 4 =