ইমাম গাজালি রহ.-এর নামে জালিয়াতি

জিজ্ঞাসা–১২৩৪: ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ: ‘ইমাম গাজ্জালীর পরীক্ষীত আমাল’ বইটিতে একটা আমাল পেলাম, শত্রুক হত্যা করার আমল । সিস্টেম হচ্ছে-প্রথমে একটা কাগজে কিছু নির্দিষ্ট দোয়া কালাম লিখতে হবে আরবি অক্ষরে । কাগজ যে কোনো কালারের হতে পারে, কাগজের বদলে কাপড়ও হতে পারে, তবে কালি হতে হবে জাফরান রঙ এর । যে লোকের সাথে আপনার শত্রুতা সেই লোকের নাম এবং বাবার নাম ওই দোয়ার ভিতরে থাকতে হবে । এরপরে একটা ইট এ ওই দোয়া লেখা কাগজ শক্ত করে বেঁধেনদী/খাল/ড্রেন (প্রবাহমান পানি)-তে ভাসিয়ে দিতে হবে। পানির কারণে কাগজ পঁচতে থাকবে । কাগজ যত বেশি পঁচবে, শত্রুর স্বাস্থ্য তত খারাপ হতে থাকবে। যেদিন কাগজ সম্পূর্ন পঁচে যাবে, সেইদিন শত্রুও সম্পূর্ন মরে যাবে।  হুজুর! এটা তো জাদু তাই না? আর জাদু তো হারাম জানি। তাহলে তাঁর বইয়ে এরকম আমল কেন?–মুহাম্মাদ আলী।

জবাব: তাবিজ যদি কোরআনের আয়াত কিংবা হাদিসের কোনো দোয়ার মাধ্যমে হয় এবং অন্যের ক্ষতির উদ্দেশ্যে না হয় তাহলে এটা জায়েয আছে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,

يجوز أن يكتب للمصاب وغيره من المرضى شيئا من كتاب الله وذكره بالمداد المباح ويغسل ويسقى كما نص على ذلك أحمد وغيره

বিপদগ্রস্ত বা অসুস্থ লোকদের জন্য কালি দ্বারা আল্লাহর কিতাব, আল্লাহর জিকর লিখে দেয়া এবং ধুয়ে পান করা জায়েয। (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-১৯/৬৪)

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য য, আমাদের দেশে তাবিজের কিতাব হিসেবে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বইয়ের নাম হল, সোলেমানিয়া তাবিজের কিতাব। সুলাইমান আলাইহিসসালামের দিকে নিসবত করে এর নাম রাখা হয়েছে। বইটির বিকৃত বানান বা উচ্চারণের মধ্যেই একজন নবীর সঙ্গে জঘন্য বেয়াদবি প্রকাশ পায়। উপরন্তু বইটিতে কুফরি ও শিরকি কথার অভাব নেই। অথচ আল্লাহ তাআলা সুলাইমান আলাইহিসসালাম সম্পর্কে বলেন,

وَ مَا کَفَرَ سُلَیۡمٰنُ وَ لٰکِنَّ الشَّیٰطِیۡنَ کَفَرُوۡا یُعَلِّمُوۡنَ النَّاسَ السِّحۡرَ

সুলাইমান কোনোদিন কুফরী করেন নি, বরং ওই শয়তানগুলোই কুফরী করেছিল। ওরা মানুষকে জাদু শিখেয়েছিল। (সূরা বাকারা ১০২)

লক্ষণীয় বিষয় হল, আল্লাহর কাছে পানাহ চাই, কোন নবী কুফরি করেছেন কিংবা কুফরি শিক্ষা দিয়েছেন; এটা তো কল্পনাও আসতে পারে না। অথচ মানুষ একটি কুফরি ও শিরকি বই তাঁরই নামে বানিয়ে ফেলল! আশ্চর্য বৈ কি! 

অনুরূপভাবে ইমাম আবু হামিদ গাজালি রহ. ছিলেন ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ তথা ইসলামের প্রামাণ্য অবয়ব। তাঁর মহান মর্যাদা অনস্বীকার্য। তিনি এমন একটি স্পষ্ট শরিয়ত-বিরোধী তাবিজের নুসখা বা পদ্ধতি বলবেন; এটা কল্পনাও করা যায় না। উক্ত নুসখা যে সোলেমানিয়া তাবিজের কিতাবের মতই বানোয়াট; এতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। তাছাড়া ‘ইমাম গাজ্জালীর পরীক্ষীত আমাল’ নামক কোনো কিতাব তিনি রচনা করে যান নি।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − fourteen =