ইসলামের দৃষ্টিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার কি বৈধ?

জিজ্ঞাসা–১৫১২: ইসলামের দৃষ্টিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার কি বৈধ?–Habibullah

জবাব: হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মধ্যে যে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেটির পবিত্রতা, অপবিত্রতা নিয়ে আলেমদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। কেননা, তাঁরা অ্যালকোহলকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :

১. আঙ্গুর, কিসমিস ও খেজুরের মদ-শরাব থেকে সংগৃহীত।

২. উল্লিখিত ফলাদি ব্যতীত অন্য যেকোনো ফল/বস্তুর শরাব থেকে সংগৃহীত যেমন-জব, গম, আলু, মধু ইত্যাদি।

৩. কোনো প্রকার শরাব থেকে নয় বরং সরাসরি যেকোনো ধরনের ফলমূল, সবজি ইত্যাদি থেকে সংগৃহীত।

প্রথম প্রকারের অ্যালকোহল সম্পূর্ণ নাপাক এবং এটির ব্যবহারও হারাম। তবে একেবারে নিরূপায় অবস্থায় যেমন এটি ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ না থাকলে তখন প্রয়োজন পরিমাণ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। (আল বাহরুর রায়েক ১/১২২)

দ্বিতীয় প্রকারের অ্যালকোহলের ব্যাপারে ফুকাহাদের মতভেদ রয়েছে। যেমন ইমাম আবু হানিফা রহ. ইমাম আবু ইউসুফ রহ.-এর মতে এ ধরনের অ্যালকোহল পাক এবং এই পরিমাণ ব্যবহার যার দ্বারা নেশা হয় না, বৈধ।

ইমাম মুহাম্মদ রহ.-এর মতে, এ ধরনের অ্যালকোহলেও নাপাক এবং এর সামান্য পরিমাণ ব্যবহারও হারাম। স্বাভাবিক অবস্থায় ফাতওয়া ইমাম মুহাম্মদ রহ.-এর মতের ভিত্তিতেই দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে ব্যাপক হারে যখন এর ব্যবহার শুরু হয়েছে, তখন ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর মতের ওপরও আমল করার সুযোগ রয়েছে। তবে সর্বোচ্চ সতর্কতা হলো ইমাম মুহাম্মদ রহ.-এর মতের ওপর আমল করা। (নাওয়াদেরুল ফিকহ ২/৩৭১)

তৃতীয় প্রকার অ্যালকোহল সম্পূর্ণ পবিত্র ও হালাল যদি এতে নেশা না হয়।

উল্লেখ্য, ওষুধে মিশ্রিত অ্যালকোহল কোনো প্রকারের তা জানা সম্ভব না হলে শুধুমাত্র ধারণাপ্রসূত কারণে এটিকে নাজায়েজ বলা যাবে না। বরং এটি ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।

মোদ্দা কথা হলো, ওষুধে ব্যবহৃত অ্যালকোহলে কোন ধরনের তা নিশ্চিতভাবে জানা যাবে অথবা যাবে না। যদি জানা যায় তখন ওপরে বর্ণিত হুকুম মতে আমল করতে হবে। আর যদি জানা না যায় তখন অহেতুক সন্দেহ সংশয়ে না পড়ে তা ব্যবহার করা যাবে। (বুহুছ ফি কজায়া ফিকহিয়্যাহ  ১/৩৪০)

এ বার আসুন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিষয়ে,
বিজ্ঞ ডাক্তারগণ বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজারে যে অ্যালকোহল মিশ্রিত করা হয়ে থাকে সেটি ওই অ্যালকোহল নয় যেটি পান করা হয়ে থাকে। আমরা জানি, যে অ্যালকোহল পান করলে নেশা সৃষ্টি হয় সেটি হারাম।

অথবা বলা যায়, আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করি ঔষধ বা চিকিৎসা হিসেবে৷ আর শরীয়তের মুলনীতি হলো,চিকিৎসা হিসেবে যে জিনিষ ব্যবহার করা হয় তার সাথে যদি হারাম বস্তুও মিশ্রিত থাকে আর তার থেকে উত্তম কোন ব্যবস্থা না থাকে তাহলে প্রয়োজন অনুপাতে তা ব্যবহার করা জায়েয ৷

আর একটি বিষয় হলো, আমরা যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করি তাতে যে অ্যালকোহল থাকে তাৎক্ষণিক ভাবে তা বাষ্প হয়ে উড়ে যায়৷ সুতরাং তা ব্যবহার করা বৈধ হবে।

والله أعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − nine =