উম্মে হারাম রাযি. কি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর মাহরাম ছিলেন?

জিজ্ঞাসা–১৮৩৮: আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ২৯৪০. দিনের বেলায় স্বপ্ন দেখা। ইবনে আউন (রাহঃ) ইবনে সিরীন (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, দিনের স্বপ্ন রাতের সপ্নের মত। ৬৫৩০। আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) … আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রায়ই উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (রাযিঃ) এর ঘরে যেতেন। আর সে ছিল উবাদা ইবনে সামিত (রাযিঃ) এর স্ত্রী। একদা তিনি তার কাছে এলেন। সে তাকে খানা খাওয়াল। তারপর তার মাথার উকুন বাছতে শুরু করল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর হেসে হেসে জেগে উঠলেন। উম্মে হারাম (রাযিঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন হাসলেন? তিনি বললেনঃ আমার উম্মতের একদল লোককে আমার কাছে পেশ করা হয়েছে। যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধরত সাগরের মধ্যে জাহাজের ওপর আরোহণ করে বাদশাহর সিংহাসনে অথবা বাদশাহদের মত তারা সিংহাসনে উপবিষ্ট। ইসহাক রাবী সন্দেহ করেছেন। উম্মে হারাম (রাযিঃ) বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের দলভুক্ত করে দেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার জন্য দু’আ করলেন। এরপর আবার তিনি মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর আবার হেসে হেসে জেগে উঠলেন। আমি বললাম, আপনি হাসলেন কেন হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত আমার একদল উম্মতকে আমার কাছে পেশ করা হয়েছে। পূর্বের ন্যায় এ দল সম্পর্কেও বললেন। উম্মে হারাম (রাযিঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল। আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, তিনি যেন আমাকে এ দলভুক্ত করে দেন। তিনি বললেনঃ তুমি প্রথম দলভুক্ত। উম্মে হারাম (রাযিঃ) মুআবিয়া ইবনে সুফিয়ান (রাযিঃ) এর আমলে সামুদ্রিক জাহাজে আরোহন করেন এবং সমুদ্র থেকে পেরিয়ে আসার সময় আপন সাওয়ারী থেকে মাটিতে পড়ে গিয়ে মারা যান। —সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৩০ (আন্তর্জাতিক নং ৭০০১-৭০০২) তাহকীক: তাহকীক নিষ্প্রয়োজন বর্ণনাকারী: আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) (মৃত্যু ৯৩ হিজরী) প্রশ্ন: এই হাদিসটা বুঝিয়ে বলবেন দয়া করে। এখানে কেনো উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাথার উকুন বেছে দিলেন?–Rayhan

জবাব:وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রাযি. রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর মাথার উকুন বেছে দিয়েছিলেন, কেননা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর মাহরাম ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে অত্যন্ত সম্মান করতেন। (নিসা‘মিন ‘আসর আন-নুবুওয়াহ-৪৪)

তাঁর পরিচিতি সম্পর্কে এসেছে,

‘উম্মে হারাম রাযি. মদিনার বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের নাজ্জার শাখার কন্যা। তার পিতার নাম মিলহান ইবনে খালিদ । তিনি নারী সাহাবা উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান রাযি.-এর বোন এবং প্রখ্যাত সাহাবা আনাস ইবনে মালিক রাযি.-এর খালা। (আস-সীরাহ্ আল-হালাবিয়্যা-৩/৭৩)

এরা দুই বোন রাসূল ﷺ-এর মাহরাম ছিলেন। ইমাম নববী রহ. বলেন,

اتفق العلماء على أن أم حرام كانت محرما له ﷺ. واختلفوا في كيفية ذلك، فقال ابن عبد البر وغيره : كانت إحدى خالاته من الرضاعة. وقال آخرون : بل كانت خالة لأبيه أو لجده لأن عبد المطلب كانت أمه من بنى النجار

উম্মে হারাম রাসূল ﷺ-এর মাহরাম ছিলেন, সে ব্যাপারে সকল আলেম একমত। কিন্তু কি সম্পর্কের কারণে মাহরাম ছিলেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ইবনু আব্দুল বার রহ. প্রমুখ বলেছেন, তিনি রাসূল ﷺ-এর দুগ্ধসম্পর্কীয় খালা ছিলেন। কেউ বলেছেন, তাঁর পিতা অথবা দাদার খালা ছিলেন। কেননা রাসূল ﷺ-এর দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মা ছিলেন মদীনার বনু নাজ্জার গোত্রের। (নববী, শরহ মুসলিম ১৩/৫৭, ৫৮, ১৯১২ নং হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রঃ)

ইমাম নববী রহ. আরো বলেন,

أُمّ حَرَام أُخْت أُمّ سُلَيْمٍ ، وقد كَانَتَا خَالَتَيْنِ لِرَسُولِ اللَّه ﷺ مَحْرَمَيْنِ إِمَّا مِنْ الرَّضَاع , وَإِمَّا مِنْ النَّسَب, فَتَحِلُّ لَهُ الْخَلْوَة بِهِمَا , وَكَانَ يَدْخُلُ عَلَيْهِمَا خَاصَّةً , لا يَدْخُلُ عَلَى غَيْرهمَا مِنْ النِّسَاء إِلا أَزْوَاجه

উম্মে হারাম উম্মে সুলাইমের বোন। উভয়ই রাসূল ﷺ-এর দুগ্ধসম্পর্কীয় কিংবা রক্তসম্পর্কীয় খালা ছিলেন। এ কারণে তাঁদের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ তাঁর জন্য বৈধ ছিল। রাসূল ﷺ তাঁদের সঙ্গে বিশেষভাবে দেখা করতেন। এই দুই জন এবং তাঁর স্ত্রীরা ছাড়া অন্য কোনো নারীর সঙ্গে তিনি একান্ত সাক্ষাৎ করতেন না। (নববী, শরহ মুসলিম ১৬/১০)

ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান রাযি.-এর খিলাফতের সময় মুয়াবিয়া রাযি. ২৭ হিজরিতে একটি নতুন নৌ বাহিনী গঠন করে সাগর দ্বীপ কুবরুস আক্রমণ (সাইপ্রাস অভিযান) করেছিলেন। এই কুবরুস দ্বীপ ছিল বাইজান্টাইন রোমান শাসিত একটি অঞ্চল। এই অভিযানে উম্মে হারাম রাযি. তার স্বামী উবাদা ইবনে সামিত রাযি.-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিলেন। (তারিখু ‍দিমাশক ৪৮৬)

কুবরুস বিজয় শেষে মদিনাতে ফেরার পথে পশুর বাহন থেকে পড়ে গিয়ে তিনি ভীষণ আঘাত পান এবং এই আঘাতেই মৃত্যুবরণ করেন। সাগর দ্বীপ কুবরুসের মাটিতেই তাকে দাফন করা হয়। (নাসাবু কুরায়শ ১২৪-১২৫)

والله أعلم بالصواب