কারো উপার্জনের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তার হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে কি?

জিজ্ঞাসা–৪৩৮: আসসালামু ‘আলাইকুম। নবী কারীম সাঃ কে যখন কেউ কিছু খেতে দিতেন- তিনি খাবারের উৎস এর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেন…যাচাই বাচাই করে খেতেন। আমরা যদি কোথাও বেড়াতে যাই বা কেউ আমাদের বাসায় খাবার নিয়ে আসে- ওদের আয়ের উৎসের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি না বা করতে uneasy লাগে, জিজ্ঞেস করলে ওরা সঠিক বলতেছে কিনা তাও হয়তো বুঝব না, বান্ধবী অনেক সময় টিফিন শেয়ার করলেও খেয়ে ফেলি— এমতাবস্থায় আমাদের করণীয় কি? আর যদি নিজে খাওয়া ঠিক না হয় তবে এই খাবার অপচয় না করে গরীবদের / শিশুদের খাওয়াতে পারব? খাবার তো অপচয় ও করা যাবে না…এই ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি? খাবার ছাড়া কেউ যদি অন্য কোন হাদিয়া দেয় যা হারাম না হালাল টাকার সিউর হয়ে জানা না থাকে তবে হাদিয়া গ্রহণ করব কি?–সাবিহা।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক- প্রিয় দীনি বোন, মুসলিমদের বাহ্যিক কাজকর্মের উপর কুধারণা বা মন্দ ধারণা পোষণ করা হরাম। এজন্য কোন মুসলিমের আয়ের উৎসের ব্যাপারে অযথা সন্দেহ করা উচিত নয়। জিজ্ঞাসা করারও প্রয়োজন নেই। বরং সেটিকে হালাল উপার্জন মনে করাই উচিত। মুসলমানদের প্রতি সুধারণা রাখাই ইসলামের শিক্ষা।

রাসূলুল্লাহ বলেছেন,  حُسْنُ الظَّنِّ مِنْ حُسْنِ الْعِبَادَةِ ‘সুন্দর ধারণা সুন্দর ইবাদতের অংশ’। (মুসনাদে আহমাদ ৮০৩৬; আবুদাঊদ ৪৯৯৩)

অপর হাদিসে তিনি বলেন,إِيَّاكُمْ وَ الظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ  ‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কারণ, ধারণা ভিত্তিক কথাই হ’ল সবচেয়ে বড় মিথ্যাকথা।’ (বুখারী ৪৮৪৯, ৫১৪৩)

তাছাড়া কারো আয়ের উৎসের ব্যাপারে অহেতুক সন্দেহ করা এবং জিজ্ঞাসা করা মানে তার দোষ খুঁজে বের করা। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ  এ থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি মানুষকে স্ব-স্ব দোষ-ত্রুটি সংশোধনে আত্মনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন,

يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الإِيمَانُ قَلْبَهُ لاَ تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ وَلاَ تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ يَتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِى بَيْتِهِ

‘ওহে যারা মৌখিক স্বীকৃতির মাধ্যমে ঈমান এনেছ, অথচ এখনো অন্তঃকরণে ঈমান পৌঁছেনি! তোমরা মুসলিমদের নিন্দা কর না, তাদের ছিদ্রান্বেষণ কর না। কেননা যে ব্যক্তি অপরের দোষ খোঁজে আল্লাহ তার দোষ  অনুসন্ধান করেন। আর আল্লাহ যার দোষ তালাশ করেন, তাকে তার নিজস্ব বাসগৃহেই অপদস্থ করেন’। (আবুদাঊদ ৪৮৮০)

দুই- তবে যদি সুনিশ্চিতভাবে জানা থাকে, লোকটি হারাম উপার্জন করছে। তাহলে এক্ষেত্রে তার হাদিয়া নেয়া বা দাওয়াত গ্রহণ করা যাবে কিনা-এর উত্তর আমরা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ইতিপূর্বে দিয়েছি। জানার পড়ুন- জিজ্ঞাসা নং-৩৪৪

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন–
 হারাম উপার্জনকারীর হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে কি?
 অমুসলিমের হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে কিনা?
 অমুসলিমের সাথে লেন-দেন করলে ইবাদতের কোনো ক্ষতি হয় কি?
 হোটেল-বয়কে বখশিস দেয়া যাবে কিনা?
 অমুসলিমদের সেমিনারে অংশগ্রহণ করা যাবে কি?
 হিন্দুদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে কিনা?
 বেনামাজীকে সালাম দেয়া ও তার বাড়িতে খাওয়া যাবে কি?
 হিন্দু বাড়িতে খানা খাওয়া এবং নামাজ আদায় করা যাবে কিনা?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − seven =