গোপন বিয়ে, উকিল ছিল হিন্দু, সাক্ষী ছিল দুই জন মুসলিম…

জিজ্ঞাসা–১২১৬: আসসালামু আলাইকুম। আমি আর আমার স্বামী গোপনে বিয়ে করি। কিন্তু বিয়ের সময় আমার পক্ষের উকিল বা অভিভাবক যাকে বানানো হয়েছিল সে হিন্দু ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু আমাদের বিয়ের সাক্ষী দুজনই মুসলমান ব্যক্তি ছিলেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের বিয়েটা কি শুদ্ধ হয়েছে? হিন্দু অভিভাবক বা উকিল থাকলে কি বিয়ে শুদ্ধ হয়?–শবনম।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. বিয়ে-শাদির ক্ষেত্রে অভিভাবক বানানোর বিষয় নয়। অভিভবাক তো আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর কোনো কাফির কোনো মুসলিম মেয়ের অভিবাবক হতে পারে না। ইবনু কুদামা রহ. বলেন,

أما الكافر فلا ولاية له على مسلمة بحال ، بإجماع أهل العلم

আলেমদের ঐকমত্য অনুযায়ী কোনো কাফির কোনো অবস্থাতেই কোনো মুসলিম মেয়ের অভিবাবক হতে পারে না। (আল-মুগনী ৯/৩৭৭)

মূলত উক্ত গোপন বিয়ের মাধ্যমে আপনারা বিশেষত আপনি এমন অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ কাণ্ড করেছেন, নিশ্চয় এর মাধ্যমে আপনারা নিজেদের পারিবারিক মর্যাদাকে ভূলন্ঠিত করেছেন। চরিত্রের পবিত্রতা, নারীত্বের আমানতদারিতা সর্বোপরি  আপনাদের দ্বীনদারিকে কলঙ্কিত করছেন। রাসুলুল্লাহ বলেছেন,

فَإِنَّ الزَّانِيَةَ هِيَ الَّتِي تُزَوِّجُ نَفْسَهَا

ব্যভিচারিনী নিজে নিজেকে বিয়ে দেয়। (ইবনু মাজাহ ১৭৮২)

প্রিয় প্রশ্নকারী বোন, তাই আপানাদের প্রথম কাজ হল, আল্লাহর কাছে খাঁটি দিলে তাওবা করা। পাশাপাশি অভিভাবককে এখনও অবহিত না করে থাকলে দ্রুত অবহিত করা এবং তাদের সঙ্গে এমন আচরণ দেখানো, যাতে তাঁদের মনোব্যথা দূর হয়ে যায়।

দুই. যদিও আপনাদের কাজটা অন্যায় অমানবিক ও অসামাজিক হয়েছে । তবে হানাফি ফেকাহ মতে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক সমঝদার স্বাক্ষীর সামনে প্রাপ্তবয়স্ক পাত্র ও পাত্রীর একজন প্রস্তাব দিলে এবং অপরপক্ষ তা গ্রহণ করে নিলে বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। (বিদায়াতুল মুজতাহিদ ২/৮)

সে হিসেবে আপনারা উক্ত বিয়ে যদি বাস্তবেই দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক সমঝদার স্বাক্ষীর সামনে এভাবে করে থাকেন যে, একজন প্রস্তাব দিয়েছেন এবং অপরজন তা গ্রহণ করেছেন তাহলে আপনাদের উক্ত বিয়ে শুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

আরব বিশ্বের অন্যতম আলেম শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনাজ্জিদ বলেন,

المسألة اجتهادية .. . .فإنه إذا كان أهل بلد يعتمدون المذهب الحنفي كبلادكم وبلاد الهند وباكستان وغيرها ، فيصححون النكاح بلا ولي ، ويتناكحون على هذا،فإنهم يقرّون على أنكحتهم ، ولا يطالبون بفسخها

অর্থাৎ এটি একটি ইজতিহাদি মাসআলা..সুতরাং যে সব দেশের মানুষেরা হানাফী মাজহাবের উপর নির্ভর করে , ওলী (অভিবাবক) ছাড়া বিবাহবে বৈধ মনে করে এবং এভাবে তাদের বিয়ে হয় যেমন, ভারত, (বাংলাদেশ) পাকিস্তান ইত্যাদি, তাহলে তাদের বিবাহের স্বীকৃতি দেয়া হবে । বাতিল করতে বলা হবে না।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − 11 =