জিজ্ঞাসা–৩৮২: আস্সালামুআলাইকুম। হযরত, আমি আপনার সাইটের একজন নিয়মিত পাঠক। অনেক অজানা ইলম আয়ত্তে সাহায্য হয়। এর উত্তম প্রতিদান আল্লাহ আপনাকে দান করুন। আজ আমি এক চরম ঈমানী সিদ্ধান্তের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে প্রশ্নটা করছি। আমি একজন সরকারী চাকুরীজীবী। এখানকার নিয়মে ইউনিফরমের ট্রাউজারটি টাখনুর নিচে পরতেই হবে। না পরলে শাস্তি এবং চাকুরীও যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আমার পরিবার আমাকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে মানানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি জানি, মহান আল্লাহ টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারীকে পছন্দ করেন না, হাশরের ময়দানে কথা বলবেন না ইত্যাদি। আরও অনেক অনেক হাদীস রয়েছে। আমিএ বিষয়ে আপনার এক সুচিন্তিত মতামত জানতে চাই যে, আমি কি চাকুরী বাঁচাতে এদের কথা মেনে টাখনুর নিচে কাপড় পরব নাকি আমি চাকুরী ছেড়ে দেয়ার পথ বেছে নেয়াই উত্তম হবে? আমি খুব মানসিক চাপে আছি। মেহেরবানী করে দ্রুত জানালে খুব উপকৃত হবে। উল্লেখ্য, আমার চাকুরী দশ বছরের উপরে। এতদিন আল্লাহর গোলামী না করে নাফারমানী আর গুনাহ করেছি। বিগত এক দুই বছর আপ্রাণভাবে আল্লাহর গোলামীতে নিজেকে ডুবিয়ে রেখে খুব মজা এবং শান্তি পাচ্ছি। আমার করণীয় কি? মেহেরবানী করে জানাবেন। আল্লাহ হাফেজ।–মোঃ মেহেদী হাসান।
জবাব:وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক: আমরা আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আমাদের সাইট নিয়মিত পড়ার জন্য এবং এমন একটি মাসয়ালার শরয়ি হুকুম জিজ্ঞেস করার জন্য, বর্তমানে যে সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আমরা আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আপনাকে ইসলামের উপর অবিচল রাখেন, আপনাকে তাওফিক দেন । আরো প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের পরিবেশ-পরিস্থিতি শোধরে দেন। আমাদেরকে প্রকাশ্য ও গোপন সকল ফেতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও দোয়া কবুলকারী।
দুই: পুরুষের পরিধেয় যে কোন পোশাকের সর্বোচ্চ সীমা টাখনু পর্যন্ত; কোন পোশাককে টাখনুর নীচে প্রলম্বিত করা হারাম। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন-ما أسفل من الكعبين من الإزار ففي النار লুঙ্গির যতটুকু টাখনুর নীচে যাবে ততটুকু জাহান্নামে যাবে। (সহিহ বুখারী৫৪৫০)
আবু যর রাযি. নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আবু যর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এ কথাটি তিনবার বলেছেন। আবু যর রাযি. বলেন, তারা ব্যর্থ হোক ও ক্ষতিগ্রস্ত হোক। ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তারা কারা? তিনি বললেন, লুঙ্গি প্রলম্বিতকারী, খোঁটা দানকারী ও মিথ্যা শপথ করে পণ্যসামগ্রী বিক্রয়কারী। (সহিহ মুসলিম ১০৬)
তিন: যদি কোন মুসলিম দেশে পুরুষের পোশাক সংক্রান্ত উক্ত বিধান পালনে বাঁধা প্রদান করে; তাহলে এটি একটি দুঃখজনক বিশেষ বাস্তবতা। এ ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হল–
১. প্রথমে আপনার বুঝতে হবে যে, আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, সে সব কিছুই শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। আর আপনি এ সমস্যার সাথে যেভাবে মানিয়ে চলার চেষ্টা করে চলছেন এটা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ধৈর্য্য এবং আল্লাহর দীনের প্রতি অবিচল থাকতে যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তার প্রতি ধৈর্য্যধারণ করা। আর আল্লাহ এজাতীয় ক্ষেত্রে বলেছেন, وَاصْبِرُوا إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ তোমরা ধৈর্য্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা আল-আনফাল : ৪৬)
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন–
- ঘুষ দিয়ে চাকরি নিলে, সেই চাকরির বেতন কি হালাল হবে?
- ডেসটিনিসহ সকল মালটিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানিগুলোতে চাকুরি করা
- অমুসলিমের সাথে লেন-দেন করলে ইবাদতের কোনো ক্ষতি হয় কি?
- ব্যাংকের আইটিতে চাকরি করা কি হারাম?
- ব্যাংক বা সমিতিতে টাকা জমা রাখা বা চাকরি করা যাবে কি?
- ইন্টারনেট কোম্পানীতে চাকুরী করা যাবে কি?
- ছোট ছোট বিষয়ে মা বদদোয়া দেন; কী করব?
- গুরুজন যদি বিদ‘আতি হয় তাহলে কিভাবে বোঝাবেন?
- বাবা-মা ভণ্ড পীরের মুরিদ; সন্তানের করণীয় কি?