তাওবা করার পর পুনরায় গুনাহ হয়ে গেলে করণীয়

জিজ্ঞাসা–১৭১৭: তওবা করার পর পুনরায় বার বার পাপ করলে সেই পাপ থেকে কি মাফ পাওয়া যায়? এক্ষেত্রে করণীয় কী– munna

জবাব:

এক. আলেমগণ বলেছেন, প্রত্যেক গুনাহ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব। যদি গুনাহটি বান্দার মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে হয়ে থাকে; কোন মানুষের হক্বের সাথে সম্পৃক্ত না হয় তাহলে সে তাওবার জন্য শর্ত তিনটি: ১। গুনাহ ত্যাগ করা। ২। কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ৩। সে গুনাহতে পুনরায় লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া। যদি এ তিনটি শর্তের কোন একটি না পাওয়া যায় তাহলে সে তাওবা শুদ্ধ হবে না।

আর যদি গুনাহটি মানুষের সাথে সম্পৃক্ত হয় তাহলে সে তাওবার জন্য শর্ত চারটি: উল্লেখিত তিনটি এবং হক্বদারের হক্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করা।

প্রিয় প্রশ্নকারী দীনী ভাই, আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমত যে, তিনি তাওবার দরজা খোলা রেখেছেন। সুতরাং যদি আপনার ক্ষেত্রে এ শর্তগুলো পূর্ণ হয় তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় আপনার তাওবা কবুল হওয়ার উপযোগী।

দুই. সত্যিকার অর্থে তাওবা করার পরেও যদি পুনারায় গুনাহ হয়ে যায় তাহলে চিকিৎসা একটাই–পুনরায় সত্যিকার অর্থে তাওবা করা। এমনটি বার বার করতে থাকবেন। অন্যথায় -আল্লাহর কাছে পানাহ চাই- এই বদঅভ্যাসের উপর যদি মরণ চলে আসে তাহলে ভেবে দেখুন, কী হবে তখন?!

হাদিস শরিফে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, হাদিসে কুদসি; রাসুলুল্লাহ ﷺ স্বীয় প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন,

‏ أَذْنَبَ عَبْدٌ ذَنْبًا فَقَالَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي ‏.‏ فَقَالَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَذْنَبَ عَبْدِي ذَنْبًا فَعَلِمَ أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِالذَّنْبِ ‏.‏ ثُمَّ عَادَ فَأَذْنَبَ فَقَالَ أَىْ رَبِّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي ‏.‏ فَقَالَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَبْدِي أَذْنَبَ ذَنْبًا فَعَلِمَ أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِالذَّنْبِ ‏.‏ ثُمَّ عَادَ فَأَذْنَبَ فَقَالَ أَىْ رَبِّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي ‏.‏ فَقَالَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَذْنَبَ عَبْدِي ذَنْبًا فَعَلِمَ أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِالذَّنْبِ وَاعْمَلْ مَا شِئْتَ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ عَبْدُ الأَعْلَى لاَ أَدْرِي أَقَالَ فِي الثَّالِثَةِ أَوِ الرَّابِعَةِ ‏”‏ اعْمَلْ مَا شِئْتَ ‏

এক বান্দা গুনাহ করে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার গুনাহ ক্ষমা করে দাও। তারপর আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন প্রতিপালক আছে, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং গুনাহের কারণে পাকড়াও করেন। এ কথা বলার পর সে পুনরায় গুনাহ করল এবং বলল, হে আমার মনিব! আমার গুনাহ মাফ করে দাও। এরপর আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার এক বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন প্রতিপালক আছে যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং গুনাহের কারণে পাকড়াও করেন।

তারপর সে আবারও গুনাহ করে বলল, হে আমার রব! আমার গুনাহ ক্ষমা করে দাও। একথা শুনে আল্লাহ তাআলা আবারও বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে তার একজন মালিক আছে, যিনি বান্দার গুনাহ ক্ষমা করেন এবং গুনাহের কারণে পাকড়াও করেন। তারপর আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বান্দা! এখন যা ইচ্ছা তুমি আমল কর। আমি তোমার গুনাহ মাফে করে দিয়েছি। বর্ননাকারী আবদুল আ’লা বলেন, “এখন যা ইচ্ছা তুমি আমল কর” কথাটি (আল্লাহ তাআলা) তৃতীয়বারের পর বলেছেন, না চতুর্থবারের পর বলেছেন, তা আমি জানি না। (সহিহ মুসলিম ৬৭৩২)

ইমাম নববী রহ. উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,

هَذِهِ الْأَحَادِيثُ ظَاهِرَةٌ فِي الدَّلَالَةِ لَهَا ، وَأَنَّهُ لَوْ تَكَرَّرَ الذَّنْبُ مِائَةَ مَرَّةٍ أَوْ أَلْفَ مَرَّةٍ أَوْ أَكْثَرَ ، وَتَابَ فِي كُلِّ مَرَّةٍ ، قُبِلَتْ تَوْبَتُهُ ، وَسَقَطَتْ ذُنُوبُهُ

এ হাদিসগুলো স্পষ্টভাবে এই বার্তা দেয় যে, বান্দা যদি একটি গুনাহ শত বার, হাজার বার কিংবা এর চাইতেও বেশি করে আর প্রতিবারেই সে তাওবা করে, তাহলে তার তাওবা কবুল করা হয় এবং তার গুনাহগুলো অকেজো হয়ে যায়। (শরহু মুসলিম ১৭/২৩০)

তিন. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, যেন বার বার তাওবা করার সুযোগ হয় এবং আপনার তাওবা আক্ষরিক অর্থেই তাওবা হয়; এ উদ্দেশ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ আপনাকে দিচ্ছি–

  • আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহণ করুন। তাদের মজলিসে আসা যাওয়া করুন। এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা আপনার জন্য সহজ হবে।  আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

  • অধিকহারে ইস্তেগফার করুন। প্রয়োজনে এর জন্য প্রত্যেক নামাজের পর একটা নিয়ম করে নিন। যেমন, প্রত্যেক নামাজের পর ৫০/১০০/২০০ বার أسْتَغْفِرُ اللهَ   অথবা أسْتَغْفِرُ اللهَ وَأتُوبُ إلَيهِ অথবা  اللَّهُمَّ اغْفِرْ لي পড়ার নিয়ম করে নিতে পারেন। কেননা, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا أَصَرَّ مَنِ اسْتَغْفَرَ وَإِنْ عَادَ فِي الْيَوْمِ سَبْعِينَ مَرَّةً

যে ব্যক্তি দিনে সত্তরবার করে একই গুনাহ করার পরও আল্লাহর কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইবে, (ইস্তেগফার করবে) সে যেন প্রকৃতপক্ষে গুনাহ বার বার করে নি। (তিরমিযী ৩৫৫৯)

  • কখনো একাকী নিভৃতে থাকবেন না। কেননা একাকীত্ব গোনাহ চিন্তা করার কারণ হতে পারে। আর আপনার সময়কে উপকারী বিষয়ে ব্যয় করতে সচেষ্ট হোন। যেমন- সৎকাজ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, নামাজ ইত্যাদি।
  • প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ অথবা এই আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন- هُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’

এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করতে পারলে -ইনশা আল্লাহ- ধীরে ধীরে আল্লাহর সান্নিধ্যের সার্বক্ষণিক অনুভূতি অন্তরে বসে যাবে এবং গুনাহর অভ্যাস থেকে বের হওয়া সহজ হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাওফিকদাতা।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী