তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন?

জিজ্ঞাসা–১৬৪৩: মানুষ জান্নাতে যাবে নাকি জাহান্নামে যাবে—তা তো আগে থেকেই তাকদিরে লেখা আছে। তাহলে আমল না করলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে কেন? অনুরূপভাবে গুনাহ করলে তাকে শাস্তি দেয়া হবে কেন? তার কী দোষ?–খলিলুর রহমান।

জবাব:

১. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, মূলত তাকদির বলতে সর্বজ্ঞানী হিসাবে আল্লাহ তাআলার পূর্ণ ও পূর্ব জ্ঞানকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দান করেছেন। সে ভালো কাজও করতে পারে, মন্দ কাজও করতে পারে। সে যা-ই করতে চাইবে, আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাশক্তি তাতে বাঁধা প্রদান করবে না। কিন্তু সে কী করবে, কোন পথে চলবে; এই সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পূর্ব থেকেই অবগত আছেন। আর তিনি সেটাই লিখে রেখেছেন। সুতরাং সবকিছু হওয়ার আগেই তা লিখে রাখাটা আল্লাহ তাআলার পূর্ণ ও পূর্ব জ্ঞানেরই প্রমাণ।

যেমন এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,

أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ ٱللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِى ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ ۗ إِنَّ ذَٰلِكَ فِى كِتَٰبٍ ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٌ

তুমি কি জান না যে, আল্লাহ জানেন যা আছে আকাশে আর পৃথিবীতে, এ সবই লিপিতে (রেকর্ডে) আছে। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। (সূরা হাজ্জ ৭০)

উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইমাম ইবনু কাসির রহ. বলেন,

وهذا من تمام علمه تعالى أنه علم الأشياء قبل كونها ، وقدرها وكتبها أيضا ، فما العباد عاملون قد علمه تعالى قبل ذلك ، على الوجه الذي يفعلونه ، فيعلم قبل الخلق أن هذا يطيع باختياره ، وهذا يعصي باختياره ، وكتب ذلك عنده ، وأحاط بكل شيء علما ، وهو سهل عليه ، يسير لديه; ولهذا قال تعالى : ( إن ذلك في كتاب إن ذلك على الله يسير )

এ সবই আল্লাহর পূর্ণ জ্ঞানের প্রমাণ যে, তিনি সবকিছু হওয়ার আগেই তা জানেন। আর তিনি সেটা নির্ধারণ করেছেন এবং লিখে রেখেছেন। সুতরাং বান্দারা যা করবে, কিভাবে করবে: সেটা তাঁর জ্ঞানে পূর্ব থেকেই বিদ্যমান। সৃষ্টির আগেই জানেন যে, এ সৃষ্টি তার ইচ্ছা অনুসারে আমার আনুগত্য করবে, আর এ সৃষ্টি তার ইচ্ছা অনুসারে আমার অবাধ্য হবে। আর তিনি সেটা লিখে রেখেছেন এবং জ্ঞানে সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছেন। এজন্যই তিনি বলেছেন, এ সবই লিপিতে (রেকর্ডে) আছে, এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।

আর এটাই রাসুলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন হাদিসে বলেছেন। যেমন এক হাদিসে এসেছে, তিনি বলেছেন,

كَتَبَ اللَّهُ مَقَادِيرَ الخَلَائِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ، قالَ: وَعَرْشُهُ علَى المَاءِ

আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করার পঞ্চাশ হাজার বছর আগেই সৃষ্টিকুলের তাকদীর লিখে রেখেছেন। আর তখন তাঁর আরশ ছিল পানির উপর। (মুসলিম ২৬৫৩)

২. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, সুতরাং বোঝা গেল যে, বিষয়টা এমন নয় যে, এই লিখে রাখার কারণে আল্লাহ বান্দাকে জান্নাত কিংবা জাহান্নামে যেতে বাধ্য করেন। বরং মানুষকে শাস্তি দেয়া হয় আল্লাহপ্রদত্ত উক্ত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সঠিক পথে চালানোর জন্য হিদায়াত বা দিকনির্দেশনা আসার পরেও তা ভুল পথে ব্যবহার করার কারণেই।

যেমন, একজন শিক্ষক তার কোনো ছাত্র সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হওয়ার কারণে পরীক্ষার আগে এই মন্তব্য করল যে, অমুক ছাত্র পাশ করবে কিংবা ফেল করবে। তারপর দেখা গেল, শিক্ষকের মন্তব্য সঠিক হয়েছে এবং উক্ত ছাত্র পরীক্ষায় বাস্তবেই পাশ করেছে কিংবা ফেল করেছে। তাহলে বলা বাহুল্য যে, যদি উক্ত ছাত্র ফেল করে তাহলে এর জন্য শিক্ষককে দোষী সাব্যস্ত করা হয় না। বরং তখন উক্ত ছাত্রের পড়া-লেখার প্রতি অবহেলা ও অমনোযোগিতাকেই দায়ী করা হয়।

এক্ষেত্রে পার্থক্য কেবল এতটুকু যে, মানুষের জ্ঞানের পরিধি সীমিত তাই কোনো বিষয়ে তার আগাম মন্তব্য বা বক্তব্য অনুমাননির্ভর, যা বাস্তবে সঠিক হতে পারে, ভুলও হতে পারে। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলার জ্ঞান অসীম এবং পরিপূর্ণ। তাই তার আগাম বক্তব্য ভুল হওয়ার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।

والله أعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন