জিজ্ঞাসা–১৫৮: আসসালামুয়ালাইকুম। হুজুর,পীর এর মুরিদ হওয়া কি ইসলামে জায়েয? পীর যদি শুধু শিক্ষক হয়ে থাকে তাহলে তার কাছে বায়াত নিতে হয় কেন? পীরের মুরিদ হলে কি কোনো গুনাহ আছে? অনেক জনের কাছে শুনি যে, কোনো পীরের কাছে বায়াত নেওয়া ঠিক না। কোনো পীর ভাল কেমনে বুঝব? আমি আসলে এই বিষয় তা একদম বুঝতে পারি না। আমাকে একটু বুঝিয়ে দিলে অনেক উপকৃত হতাম।–Tahsin
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক–পৃথিবীর সূচনাকাল থেকেই আল্লাহ্পাক হেদায়েতের দুটি ধারা অব্যাহত রেখেছেন। একটি ধারার নাম হলো, কিতাবুল্লাহ। আর অপর ধারার নাম হলো, রিজালুল্লাহ। রিজালুল্লাহ অর্থ এমন ব্যক্তিত্ব, যারা তাফাক্কুহ ফিদ্দীন তথা দ্বীনি বিষয়ে পরাঙ্গম ও আমলি-নমুনা, রুসূখ ফিল ইলম তথা ইলমি-গভীরতায় লব্ধ এবং তাকওয়া ও আল্লাহভীতির গুণে গুণান্বিত হবেন। যারা নিজেদের কর্ম ও আচরণ এবং সূরত ও চরিত্রের মাধ্যমে ইসলামী আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করবেন আর অন্যের জন্য উসওয়ায়ে হাসানা তথা উত্তম আদর্শ হবেন। যাদের ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাত সকল সন্দেহ-সংশয়ের উর্দ্ধে থাকবে, যারা হবেন মুসলিম উম্মাহর ব্যথায় ব্যথিত এবং উম্মাহর কল্যাণে শরীয়তের বিধান মোতাবেক বিভিন্ন অঙ্গনে নিবেদিত।
দুই–উপরিউক্ত রিজালুল্লাহরই একটি শ্রেণির নাম পীর। শব্দটি ফার্সি। আরবীতে বলা হয় মুরশিদ।মুরশিদ শব্দের অর্থ হল পথপ্রদর্শক। যিনি আল্লাহর আদেশ নিষেধ আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান সেভাবে পালন করার প্রশিক্ষণ দেন তার নাম মুরশিদ বা পথপ্রদর্শক।
আর মুরীদ শব্দটি আরবী। যার অর্থ হল ইচ্ছাপোষণকারী। যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ-নিষেধ আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান সেভাবে পালন করার ইচ্ছা পোষণ করে কোন পীরের হাত ধরে শপথ করে সে ব্যক্তির নাম হল মুরীদ।
এ ব্যাখ্যা থেকে একথা স্পষ্ট হল যে, পীর হবেন শরীয়তের আদেশ নিষেধ পালন করার প্রশিক্ষণদাতা। আর যিনি সে প্রশিক্ষণ নিতে চায় সে শিক্ষার্থীর নাম হল মুরীদ।
তিন– পীর মুরীদির এ পদ্ধতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চলে আসছে। কোরআন ও হাদীসে মুরীদ হওয়ার বিষয়টি এসেছে بيعة ‘বায়আত’ নামে। বায়আত প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُاللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ فَمَنْ نَكَثَ فَإِنَّمَا يَنْكُثُ عَلَى نَفْسِهِ وَمَنْ أَوْفَى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
‘যারা আপনার কাছে ‘বায়আত’ তথা আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে ‘বায়আত’ তথা আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে; অতি অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।’ (সূরা আল ফাতহ ১০)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে ‘বায়আত’ করেছেন এবং আল্লাহমুখী হওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সুতরাং বলা যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সবচেয়ে প্রথম ও বড় পীর, ও সাহাবায়ে কিরাম হলেন প্রথম মুরীদ।
চার– রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যে ‘বায়আত’ ছিল তা হলো বায়আতে-রাসূল। খিলাফাতের যুগে ছিল বায়আতে-খিলাফাহ। খিলাফাতের পর যে বায়আতের প্রচলন শুরু হয় তা হলো বায়আতে-তাকওয়াহ বা বায়আতে-তাওবা। উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে এ ধরনের ‘বায়আত’ও করেছেন। এ মর্মে বহু হাদীস পাওয়া যায়। যেমন সহীহ বুখারীর এক হাদীসে এসেছে-
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، قَالَ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو إِدْرِيسَ، عَائِذُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ عُبَادَةَ بْنَ الصَّامِتِ ـ رضى الله عنه ـ وَكَانَ شَهِدَ بَدْرًا، وَهُوَ أَحَدُ النُّقَبَاءِ لَيْلَةَ الْعَقَبَةِ ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَحَوْلَهُ عِصَابَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ “ بَايِعُونِي عَلَى أَنْ لاَ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًا، وَلاَ تَسْرِقُوا، وَلاَ تَزْنُوا، وَلاَ تَقْتُلُوا أَوْلاَدَكُمْ، وَلاَ تَأْتُوا بِبُهْتَانٍ تَفْتَرُونَهُ بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَأَرْجُلِكُمْ، وَلاَ تَعْصُوا فِي مَعْرُوفٍ، فَمَنْ وَفَى مِنْكُمْ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَعُوقِبَ فِي الدُّنْيَا فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا ثُمَّ سَتَرَهُ اللَّهُ، فَهُوَ إِلَى اللَّهِ إِنْ شَاءَ عَفَا عَنْهُ، وَإِنْ شَاءَ عَاقَبَهُ ”. فَبَايَعْنَاهُ عَلَى ذَلِكَ.
‘উবাদা ইবনুস সামিত রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পার্শ্বে একদল সাহাবীর উপস্থিতিতে তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা আমার কাছে এই মর্মে বায়আত গ্রহণ কর যে, আল্লাহ্র সঙ্গে কিছু শরীক করবে না, চুরি করবে না, যিনা করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দেবে না এবং নেক কাজে নাফরমানী করবে না। তোমাদের মধ্যে যে তা পূরণ করবে, তার বিনিময় আল্লাহ্র কাছে। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং দুনিয়াতে তার শাস্তি পেয়ে গেলে, তবে তা হবে তার জন্য কাফ্ফারা। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং আল্লাহ্ তা অপ্রকাশিত রাখলে, তবে তা আল্লাহ্র ইচ্ছাধীন। তিনি যদি চান, তাকে মাফ করে দেবেন আর যদি চান, তাকে শাস্তি দেবেন। আমরা এর উপর বায়আত গ্রহণ করলাম।(সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৭)
সুতরাং পীর ধরার ক্ষেত্রে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী, রাজারবাগী, সুরেশ্বরী, ফরীদপুরী, এনায়েতপুরী, চন্দ্রপুরী, কামাল্লার ভন্ড পীর, মাইজভান্ডারী, কেল্লাবাবা, খাজাবাবা, রেজভী, এসব ভন্ড ও ঈমানবিধ্বংসী পীরের কাছে গেলে আখেরাত ধ্বংস হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
জাযাকুমুল্লাহ।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
প্রতেক মুসলিম দের জন্য কী পীর দরা আবশ্যক??
আবশ্যক নয়। তবে সুন্নাত।