প্রেম করে বিয়ে না পরিবারের দেখাশোনায়?

জিজ্ঞাসা–১৮৬৭: আসসালামু আলাইকুম। হুজুর, একটি মেয়েকে অনেক ভালোবাসি এবং সেও আমায় অনেক ভালোবাসে। এইদিকে ওর পরিবার আমাদের ব্যাপার জেনে যায়। তারপর আর যোগাযোগ হয় নি। একমাস পর ও আবার ফিরে আসে। আমি আবেগের বসে আবার শুরু করি। এখন ও বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি এটা করতে চাইছি না। এদিকে ওকে হারানোর ভয় হয়। ওর পরিবার আমায় মেনে নিবে না। আমি এখনো স্টুডেন্ট। কয়েক মাস পর আমার গ্রাজুয়েশন শেষ হবে। তারপর চাকরি নিয়ে ওর বাবার কাছে যাবো বলেছিলাম। কিন্তু এখন সে সেই সময়টুকুই দিতে চাইছে না। এদিকে আমার পরিবার অনেক কষ্ট করে আমায় পড়াশোনা করিয়েছে। বাবা মার অনেক স্বপ্ন আমি নিজের পায়ে দাঁড়াবো। আমি অনেক কসম ভেঙ্গেছি। অনেক পাপ করেছি। আমার এখন কি করণীয়? আমি অনেক সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। কি করবো বুঝতে পারছি না। এদিকে আমার নাওয়া খাওয়া এমনকি রাতে ঠিক মতো ঘুমাতেও পারছি না। আমায় একটু সাহায্য করুন।–নাম প্রকাশ করা হয় নি।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

বিয়ের পূর্বে প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা ইসলামি-শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। ছেলে এবং মেয়ে দু’জনের মধ্যে ইসলামিকভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলার একটাই পদ্ধতি; বিয়ে। কেননা, ইসলামের বিধি-বিধান অনুযায়ী কোনো পরনারী কোনো পরপুরুষের সান্নিধ্যে আসতে পারে না। দেখা-সাক্ষাৎ বা ফোন, নেট ইত্যাদির মাধ্যমে প্রেমালাপ করা যায় না। ইসলামি-শরিয়তের দৃষ্টিতে এগুলো একপ্রকার যিনা বা ব্যভিচার। এমনকি মনে মনে কল্পনা করে তৃপ্তি অনূভব করার দ্বারাও অন্তরের যিনা হয়। যা হারাম এবং কবিরা গুনাহ।

রাসূল ইরশাদ করেন,

اَلْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظْرُ وَالْاُذُنَانِ زِنَاهُمَا الْاِسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُمَا الْككَلَامُ وَالْيَدُ زِنَاهُمَا الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهُمَا الخُطَا وَالْقَلْبُ يَهْوِىْ وَيَتَمَنَّى وَيُصَدِّقُ ذَالِكَ الْفَرْجُ اَوْ يُكَذِّبُه

দুই চোখের ব্যভিচার হল হারাম দৃষ্টি দেয়া, দুই কানের ব্যভিচার হল পরনারীর কণ্ঠস্বর শোনা, জিহবার ব্যভিচার হল, [পরনারীর সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের ব্যভিচার হল পরনারী স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হল গুনাহর কাজের দিকে পা বাড়ান, অন্তরের ব্যভিচার হল কামনা-বাসনা আর গুপ্তাঙ্গঁ তা সত্য অথবা মিথ্যায় পরিণত করে। (সহীহ মুসলিম ২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ ৮৯৩২)

বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এক্ষেত্রে আপনি উক্ত হারাম এবং কবিরা গুনাহর ব্যাপারে তাওবা না করে অন্য কিছু ভাবছেন! এটা ভাবলেন না যে, আপনারা বিয়ে-বহির্ভূত প্রেমের মাধ্যমে একপ্রকার যিনা বা ব্যভিচারেও জড়িত!

যা হোক, এখন আপনি/আপনারা এখন যা করবেন তাহল-

১। গুনাহর পর গুনাহ আর নয়; বরং তাওবা করুন। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلا تَقرَبُوا الزِّنى إِنَّهُ كانَ فاحِشَةً وَساءَ سَبيلًا

আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (সূরা ইসরা ৩২)

যদি আপনি আসলেই আল্লাহর কাছে তাওবা করতে চান তাহলে প্রথমে এই পাপে পুনরায় পতিত হওয়ার সকল উপায় উপকরণ কর্তন করুন। এক কথায়, মেয়েটির সাথে সকল সম্পর্ক কর্তন করতে হবে। কেননা,  আল্লাহ তাআলা এ জাতীয় সীমালংঘনকারীর তাওবার আলামত হিসাবে বলেছেন,

وَمَن تَابَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَإِنَّهُ يَتُوبُ إِلَى اللَّهِ مَتَابًا

আর যে (ব্যভিচার থেকে) তাওবা করে এবং সৎকাজ করে তবে নিশ্চয় সে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা আল ফুরকান ৭১)

২। বিয়েটা শুধু নিছক বৈধভাবে যৌনচাহিদা পূরণের নাম নয়। বরং বিয়ে একটি দায়িত্ব-কর্তব্য, দুই পরিবারের মাঝে সম্পর্ক সৃষ্টির এক সোনালী বন্ধন, ভরণ-পোষণ বহনের মাধ্যমে নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব স্থাপন এবং অনাগত সন্তান প্রতিপালনের জন্য একজন সৎ ও দ্বীনদার পাত্রী নির্বাচন। আর আপনি যে মেয়েটির সঙ্গে প্রেম করছেন, নিশ্চয় সে আপনার মতই দীনের তোয়াক্কা করে না। সুতরাং আপনার নিজের শান্তি ও অনাগত সন্তানের দীনদারির কথা চিন্তা করে উক্ত মেয়ের চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দিন এবং সুযোগ থাকলে অভিবাবকের মাধ্যমে দ্বীনদার মেয়ে দেখে অন্যত্র বিয়ে করে নিন। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ  বলেছেন,

فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاك

তুমি দ্বীনদার পাত্রী লাভ করে সফলকাম হও। নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (বুখারী ৫০৯০)

আর যদি অভিবাবকের মাধ্যমে বিয়ের সুযোগ তোমার এখন না থাকে তাহলে অধিকহারে নফল রোজা রাখতে পারেন। কেননা, রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ  বলেছেন,

يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ منكُم الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ

হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখ তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাযতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই তার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী। (বুখারী ৫০৬৬)

৪। সর্বোপরি আপনাকে আল্লাহওয়ালাদের সোহবত-সংস্পর্শ গ্রহণ করার উপদেশ বিশেষভাবে দিচ্ছি। এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তওবার উপর অটল থাকা তোমার জন্য সহজ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ

‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।’ (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

والله أعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন